মহম্মদের চোখে এক ফোঁটা জল। হাতে ধরে একটি কাগজ, লেখা“জ্য স্যুই শার্লি (আমিও শার্লি)।” শিরোনামের ঠিক নীচেই লেখা, “তু এ পার্দোন (সব ক্ষমা করলাম)।”
বুলেটের জবাব এ ভাবেই দিতে চলেছে শার্লি এবদো। মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে এই ব্যঙ্গচিত্রটি। শার্লি এবদোর পরবর্তী সংখ্যা প্রকাশ হওয়ার কথা বুধবার। তারই প্রচ্ছদে দেখা যাবে এই ছবি। পত্রিকাটির গ্রাহক সংখ্যা ৬০ হাজার। কিন্তু এই সংখ্যাটি নেওয়ার জন্য সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ আবেদন ইতিমধ্যেই জমা পড়ে গিয়েছে। এই ব্যঙ্গচিত্রটি এঁকেছেন লুজ ওরফে রেনল লুজিয়ের। বছর তিনেক আগে তিনিই এঁকেছিলেন মহম্মদের সেই বিখ্যাত ব্যঙ্গচিত্রটি। তার পরেই প্রথম বার হামলা হয়েছিল শার্লি এবদোর দফতরে। যদিও সে বার কেউ হতাহত হননি। আর এ বারের জঙ্গি হানায় একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন তিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠতে আধ ঘণ্টা দেরি হয়েছিল বলে সময়মতো অফিস পৌঁছতে পারেননি সে দিন।
গত রবিবার ‘জ্য স্যুই শার্লি’ ব্যানার হাতে প্যারিসের রাস্তায় প্রায় ৫০ জন রাষ্ট্রনেতা হাঁটলেও সেখানে দেখা যায়নি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি কাউকেই। ছিলেন কেবল প্যারিসে কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তা নিয়ে সোমবার সমালোচনার ঝড় উঠেছিল খোদ মার্কিন সংবাদ মাধ্যমেই। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়েছে, “এটা সত্যি ভুল হয়ে গিয়েছে। আরও উঁচু পদ মর্যাদার কাউকে ওই মিছিলে পাঠানো উচিত ছিল।” পাশাপাশি জানানো হয়েছে, যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা অত কম সময়ের মধ্যে করা যায়নি বলেই যেতে পারেননি ওবামা। কিন্তু তাঁর যাওয়ার ইচ্ছা ছিল ষোলো আনা। আর কেরি গিয়েছিলেন ভারত-পাকিস্তান সফরে। কিন্তু তাই বলে ফ্রান্সের প্রতি আমেরিকার সমবেদনা মোটেও কম নয়।
মঙ্গলবারই ফরাসি গোয়েন্দা সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে, শার্লি এবদো-সহ প্যারিস সংলগ্ন এলাকাগুলিতে যে ক’টি হামলা চালানো হয়েছে সেগুলির জন্য অস্ত্র আনা হয়েছিল অন্য দেশ থেকে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এর পিছনেও হাত রয়েছে হায়াত বৌমেদি নামের ওই মহিলা জঙ্গির। গোয়েন্দা দফতর আরও জানিয়েছে, সুপারমার্কেটে হামলার দিন ফ্রান্সে ছিলেনই না হায়াত। কারণ, ২ জানুয়ারি তাঁকে দেখা গিয়েছিল ইস্তানবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। মাদ্রিদ থেকে এসেছিলেন তিনি। সঙ্গে দেখা গিয়েছে এক জন পুরুষকেও। মনে করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মেহদি সাবরি বেলুচিন। তিনিও রয়েছেন গোয়েন্দা দফতরের সন্দেভাজনদের তালিকায়। মঙ্গলবার ইস্তানবুল প্রশাসন একটি সিসিটিভি ফুটেজ তুলে দিয়েছে ফরাসি গোয়েন্দাদের হাতে। সে দেশের গোয়েন্দারা আরও জানান, সেখানে হায়াত এবং বেলুচিন পর্যটকের পরিচয়ে একটি নামজাদা হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে প্রায় ৮০০ মাইল পাড়ি দিয়ে পৌঁছন সিরিয়া সীমান্তের নিকটবর্তী সানলিউর্ফা নামের একটি শহরে। ৮ জানুয়ারি সিরিয়ায় চলে যান তাঁরা। ঠিক সে দিনই দক্ষিণ প্যারিসে এক মহিলা পুলিশকর্মীকে গুলি করেছিল হায়াতের স্বামী। তাঁকে ধরতে গিয়ে গুরুতর আহত হন এক সাফাইকর্মীও।
ফরাসি গোয়েন্দাদের দাবি, কোন রাস্তা দিয়ে কোথায় যাওয়া হবে এই গোটা পরিকল্পনাটা করতে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছিল হায়াত এবং বালুচিন। ফলে সেই তথ্য পেলেই তাঁদের অবস্থান জানা যাবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের দু’জনকে ধরা যাবে বলে আশাবাদী ফরাসি গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy