Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গ্র্যান্ড স্ল্যামটা জিততেই হবে

ছোটবেলায় হাঁপানি ছিল। সব সময় সঙ্গী ছিল ইনহেলার। আজ তিনিই বিশ্বের বহু শিখর জয় করেছেন। গিয়েছেন মেরু অভিযানেও। পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত-র সঙ্গে মাউন্টেনিয়ারিং নিয়ে কথা বললেন সৌরজিৎ দাসছোটবেলায় হাঁপানি ছিল। সব সময় সঙ্গী ছিল ইনহেলার। আজ তিনিই বিশ্বের বহু শিখর জয় করেছেন। গিয়েছেন মেরু অভিযানেও।

ছবি: সত্যরূপ সিদ্ধান্ত

ছবি: সত্যরূপ সিদ্ধান্ত

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

আপনার মাউন্টেনিয়ারিং-এর নেশা কী ভাবে চাপল এবং কেন?

বড় হয়েছি বহরমপুরে। ছোট থেকে হাঁপানির সমস্যা ছিল। ফলে প্রাণ খুলে কোনও দিনই ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতে পারিনি। সব সময় সঙ্গে ইনহেলার রাখতে হত। ২০০১ সালে যখন সিকিমে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাই, তখন ক্যাম্পাসে এক দিন হঠাৎই প্রচণ্ড হাঁপানির টান শুরু হয়। সে দিন আবার ইনহেলারও সঙ্গে রাখিনি। প্রায় মরোমরো অবস্থা হয়েছিল। বেশ অনেক ক্ষণ পরে সুস্থ হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু সে দিনই ঠিক করে ফেলি যে ইনহেলারের উপরে এই নির্ভরতা কমাতেই হবে। ধীরে ধীরে নিজের শরীরকে কন্ডিশনিং করা শুরু করি। যে যে খাবারে অ্যালার্জি ছিল, বেশি করে খেতে লাগলাম। চেষ্টা করছিলাম বিষে বিষক্ষয় করতে। প্রথম প্রথম অসুবিধে হত। অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধও খেতে হত। কিন্তু হাল ছাড়িনি।

২০০৫-এ চাকরিসূত্রে বেঙ্গালুরু চলে আসতে হয়। ২০০৫ থেকে ২০০৮ ইনহেলার ব্যবহার করতে না হলেও সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম, এই বুঝি আবার হাঁপানি শুরু হবে। ২০০৮-এ এক দিন আমার তৎকালীন বস কয়েকটা সুন্দর ছবি দেখান। তার কয়েক দিন আগেই তামিলনাড়ুর পর্বতমালাই পাহাড়ে ট্রেকিং করে এসেছিলেন তাঁরা। ছবিগুলো দারুণ লেগেছিল। তখনও পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল ট্রেকিং বা হাইকিং সব বিদেশেই হয়। ফলে বস-কে আবার ওই পর্বতমালাইয়ের ট্রেকিং-এ যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখনও ওঁকে আমার হাঁপানির কথা বলিনি। অভিযানের আগে ভয় করছিল, যদি ওখানে গিয়ে আবার টান ওঠে। কিন্তু নিজেই নিজের প্রবোধ দিলাম, এক বার গিয়েই দেখি না, কী হয়। যদি না পারি তা হলে আর কোনও দিন যাব না। তা ছাড়া সঙ্গে ইনহেলার তো থাকবে। কিছু দিন পরে বস-কেই টিম লিডার করে দশ জনের একটা দল বানিয়ে চলে গেলাম পর্বতমালাইয়ের ট্রেকিং-এ। জায়গাটা বেশ দুর্গম। বেশ কষ্ট করেই উঠতে হয়েছিল। আমার বেশ কষ্ট হচ্ছিল, কারণ এটা ছিল আমার প্রথম ট্রেকিং। কিন্তু সন্ধেবেলায় যখন পাহাড়ের মাথায় পৌঁছলাম তখন মনটা এক অনাবিল আনন্দে ভরে গেল। তা ছাড়া দেখলাম কোনও হাঁপানির টান-ও ওঠেনি। বুঝতে পারলাম এত দিন ধরে শরীরের উপর যে কন্ডিশনিং করার চেষ্টা করেছিলাম, তা অবশেষে কাজে দিয়েছে। সেই যে হাঁপানি থেকে মুক্তি পেলাম, তার পর থেকেই আমার পাহাড়ে অভিযানের নেশা চেপে গেল। এরই মাঝে প্যারাগ্লাইডিং, হর্স রাইডিং, আরও অনেক কিছুর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেললাম। ‘ব্যাঙ্গালোর মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব’ নামে একটি ক্লাব ছিল শহরে। সেখানে ওরা কবে কী অভিযান করছে, খোঁজ রাখতে শুরু করলাম। সবই হত দু’দিন বা এক দিনের ট্রেক। ফলে সময় পেলেই চলে যেতাম ওই সব ট্রেক-এ। এক সময় ওই ক্লাবের সঙ্গে আমার এমন পরিচিতি হয়ে গেল যে ওদের অভিযানে ওরা আমাকে গাইড হিসেবে পাঠাতে লাগল। তার জন্য আমাকে পারিশ্রমিকও দিত।

২০১০ সালে প্রথম এভারেস্ট বেস ক্যাম্পের ট্রেক-এ যাই। যখন পর্বতটাকে প্রথম দেখি তখন যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দেখতেই দেখতেই ঠিক করি এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গকে জয় করব। নেপাল থেকে ফেরার পথে কয়েকটি বই কিনে এনেছিলাম। তাদের একটি ছিল বিখ্যাত পর্বতারোহী জর্জ ম্যালোরি-র এভারেস্ট অভিযানের উপন্যাস ‘পাথ্স অব গ্লোরি’ আর জন ক্রাকার-এর ‘ইনটু থিন এয়ার’। ক্রাকার-এর বইটি থেকে আমি প্রথম জানতে পারি মাউন্ট এভারেস্ট-এর মতো পর্বতে উঠতে গেলে কী ধরনের সরঞ্জাম লাগে, অভিযানের সময় কী করা উচিত, কী উচিত নয়, আরও অনেক কিছু। তা ছাড়া সব কিছু হিসেব করে দেখেছিলাম যে ওই অভিযানের জন্য চাই প্রচুর টাকা। কিন্তু অত টাকা তখন আমার ছিল না। খুবই হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম, মাউন্ট এভারেস্ট-এ চড়ার জন্য আমার যা যা প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার তা তো নিয়ে রাখি। সুযোগ পেলে যাতে তখন হাত কামড়াতে না হয়। ২০১১ সালে আমি যোগ দিই দার্জিলিং-এর হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে এক মাসের বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্সে। এক মাসের থাকা-খাওয়া, প্রশিক্ষণ— সব মিলিয়ে খরচ পড়েছিল ৪৫০০ টাকা। কোর্সটা বেশ শক্ত ছিল। কিন্তু অনেক কিছু শিখেওছিলাম। আমার মতে, পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট-এর ক্ষেত্রে এই কোর্সটা আদর্শ। প্রশিক্ষণের পরই ২০১২ সালে আমি চলে যাই আফ্রিকায়, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো আরোহণ করতে। আর এই ভাবে আমার বিশ্বের সর্বোচ্চ সাতটা শৃঙ্গ— যেগুলি ‘সেভেন সামিটস’ নামে পরিচিত— আরোহণের অভিযান শুরু হয়।

এটা কি আপনার পেশা, না কি আপনি কোনও চাকরিও করেন?

আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং। বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতাম। কিন্তু পর্বতারোহণের এই নেশা ধরার পরে চাকরি ছাড়তে হয়। কারণ চাকরি করা অবস্থায় এই সব অভিযানে যাওয়া অসম্ভব। এক একটা অভিযানে এক-দেড় মাস লেগে যায়। সংস্থার কর্মী হিসেবে অত দিন ছুটি মেলে না। তাই বর্তমানে একটি সংস্থায় কনসালট্যান্ট হিসেবে রয়েছি। কর্মীরা যেমন সরাসরি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকে, কনসালট্যান্টদের ক্ষেত্রে তা নয়। ফলে লম্বা সময়ের ছুটি নিলেও অসুবিধে হয় না।

আমাদের দেশে মাউন্টেনিয়ারিং-এর প্রশিক্ষণ কোথায় কোথায় হয়? কী রকম খরচ পড়ে?

বেশ কয়েকটা আছে। দুটো খুব পুরনো। একটা, দার্জিলিং-এর হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (https://hmidarjeeling.com)। অন্যটা, উত্তরকাশীর নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং (www.nimindia.net)। এ ছাড়াও রয়েছে অটলবিহারী বাজপেয়ী ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যালায়েড স্পোর্টস, মানালি (www.adventurehimalaya.org), জওহর ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড উইন্টার স্পোর্টস, পহেলগাঁও (www.jawaharinstitutepahalgam.com) আর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যালায়েড স্পোর্টস, দিরাং (http://nimasdirang.com)। এখানে বিভিন্ন ধরনের কোর্স হয়। একটা থাকে বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স। এর পরে থাকে অ্যাডভান্সড মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স। এ ছাড়াও সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ আর মেথড অব ইনস্ট্রাকশন-এর মতো কোর্স করানো হয়। সাধারণত যারা পরে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করতে চায়, তারা মেথড অব ইনস্ট্রাকশন কোর্সটি করতে পারে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সেখানে কী কোর্স রয়েছে, সে বিষয়ে জানা যায় বিশদে। সাধারণত এই ধরনের কোর্স করতে প্রচুর খরচ লাগে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়ায়, কোর্সের খরচ অনেক কম পড়ে। ইনস্টিটিউট থেকেই যাবতীয় সরঞ্জাম দিয়ে দেওয়া হয়। সে জামাকাপড় হোক বা বুট। সাধারণত কোর্সগুলির মেয়াদ থাকে এক মাস।

এই পেশায় পরিচিতি পেতে কত দিন লাগে? কোনও অভিযানের স্পনসরশিপ কী ভাবে মেলে?

সেটা নির্ভর করছে তুমি কী ধরনের অভিযান করছ তার উপর। কিলিমাঞ্জারো বা এভারেস্ট-এর মতো পর্বতারোহণ তোমায় যে পরিচিত এনে দেবে, সান্দাকফুর ট্রেকিং-এ গেলে তা পাবে না। রঞ্জি দলের অনেক খেলোয়াড়কেই আমরা চিনি না। কিন্তু জাতীয় দলের প্রায় সকলেরই নাম আমাদের জানা। এটা অনেকটা সে রকমই। তুমি যত দুর্গম অভিযানে যাবে, তত ধীরে ধীরে তোমার নাম হবে।

এই ধরনের অভিযানে কিন্তু প্রচুর অর্থ লাগে। কারণ, এক একটা সরঞ্জামের দাম পড়ে অনেক। আমার ২০১৫ সালে এভারেস্ট অভিযানের সময়েই যেমন কোনও টাকা ছিল না। মণিপাল, যেখান থেকে আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি, আমাকে ৬ লক্ষ টাকা অনুদান দিল। তা ছাড়াও আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রাউডফান্ডিং করি। ওখান থেকেও প্রায় ৬ লক্ষ টাকা উঠে এল। বাকিটা আমার দাদা ও বাবা মা তাঁদের সেভিংস থেকে তুলে দেন। কিন্তু নেপালের সে ভাবে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়। ফলে অভিযান বাতিল হয়ে যায়। জলে যায় সব টাকা। আবার ভিনসন ম্যাসিফ, দক্ষিণ মেরুর স্কি ও চিলির ওহোস ডেল সালাডো অভিযান করতে লেগেছিল প্রায় ৭১ লক্ষ টাকা! সেখানে আমি বেশ কিছু স্পনসর পেয়েছিলাম। বাড়ির লোক ও বন্ধুবান্ধবও বেশ কিছুটা সাহায্য করেছিলেন। এই ভাবে শেষ পর্যন্ত সব টাকা জোগাড় হয়ে গিয়েছিল।

আপনার মাউন্টেনিয়ারিং-এর কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

আমি যে সেভেস সামিটস-এর কথা বলেছি তার দুটো ভার্সন আছে। একটাকে বলে মেসনার ভার্সন। আর অন্যটা বাস ভার্সন। মেসনার ভার্সন-এ রয়েছে এভারেস্ট (এশিয়া), অ্যাকনকাগুয়া (দক্ষিণ আমেরিকা), ডেনালি (উত্তর আমেরিকা), কিলিমাঞ্জারো (আফ্রিকা), ভিনসন ম্যাসিফ (দক্ষিণ মেরু), এলব্রুস (ইউরোপ) এবং কার্সটেনজ় পিরামিড (ওশেনিয়া)। বাস ভার্সন-এ এভারেস্ট থেকে এলব্রুস পর্যন্ত এক। শুধু কার্সটেনজ় পিরামিড-এর বদলে রয়েছে মাউন্ট কজ়িঅস্কো। আমি দুটো ভার্সন-ই সম্পূর্ণ করেছি। তা ছাড়া অনেকে আবার এলব্রুসকে নয়, মঁ ব্লাঁ-কে ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মনে করেন। আমি সেটাও চড়েছি। ২০১৭ সালে গিয়েছিলাম কার্সটেনজ় পিরামিড-এ। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশে অবস্থিত শৃঙ্গটি। ওটায় পৌঁছনোর জন্য আমাদের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। এবং সেটা ছিল দারুণ রোমাঞ্চকর। কারণ বলা হয়, ওই জঙ্গলে নাকি এক দল আদিবাসী থাকে, যারা নরখাদক। ফলে গোটা রাস্তা আর এক দল আদিবাসী তিরধনুক নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা দিতে দিতে বেস ক্যাম্প পর্যন্ত নিয়ে যায়।

গত বছর শেষের দিকে সেভেন সামিটস-এর শেষ শৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফ-এর অভিযান গিয়েছিলাম। আমার অভিযানটা এমন ভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম যে দক্ষিণ মেরুর সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি আরোহণ করার পরে আমি স্কি করে ৮৯ ডিগ্রি দক্ষিণ থেকে ৯০ ডিগ্রি দক্ষিণ (প্রায় ১১১ কিলোমিটার) পর্যন্ত যাই। অভিযান শেষ করার কথা ছিল চিলির সর্বোচ্চ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ওহোস ডেল সালাডো-র জয় দিয়ে। কিন্তু ওই আগ্নেয়গিরিতে ওঠার আগে প্র্যাকটিস করার জন্য সেখানকারই আরও তিনটি ছোট আগ্নেয়গিরি আরোহণ করি। এদের একটি ছিল নেভাদো ট্রেস কোসেস। ভারতের অন্যতম সেভেন সামিটস জয়ী পর্বতারোহী মাল্লি মাস্তান বাবু এখানেই মারা গিয়েছিলেন। তাই সেভেন সামিটস জয় করার পর আমি এই পর্বতে উঠেছিলাম তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে। কিন্তু পুরোটা উঠতে পারিনি। আমার হৃৎস্পন্দন অসম্ভব বেড়ে গিয়েছিল। আর হাইপোথার্মিয়ায় ভুগতে শুরু করি। মাল্লি মাস্তান বাবু হাইপোথার্মিয়াতেই মারা গিয়েছিলেন ওখানে। পাহাড়ে একটা নিয়ম হল— তোমাকে বুঝতে হবে, কখন তোমার ফেরা উচিত। এটা অনেকে করেন না বলেই মারা যান। আমি ফিরে আসি এবং আমার মূল লক্ষ্য ওহোস ডেল সালাডো আরোহণ করি। এর মধ্যে আমার পৃথিবীর সর্বোচ্চ সাতটি আগ্নেয়গিরি জয় করার অভিযানও শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওহোস ডেল সালাডো ছিল তার মধ্যে তৃতীয়।

কিছু দিন আগেই আমি মেক্সিকো গিয়েছিলাম, সেখানকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি পিকো ডি ওরিজ়াবা চড়তে। সেখানে নামার সময়ে একটা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় পড়ি। একটি পাথরের চাঁই আমাদের উপরে গড়িয়ে পড়ে। সেটা প্রথমে ধাক্কা মারে আমার সতীর্থকে। তার পর আঘাত করে আমাকে। দুজনেই পড়ে যাই। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে জানা যায় ওর কোমরের হাড় ভেঙেছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে, আমার কিছুই হয়নি।

পর্বতারোহণে গেলে এমন অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়।

যারা মাউন্টেনিয়ারিং করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

প্রথমত, এর জন্য একটা বিশেষ মানসিকতা লাগে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও অনেক শৃঙ্গ জয় করেছেন, এমন নির্দশনও আছে। ফলে তোমাকে মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, পর্বতারোহণে অনেক ঝুঁকি থাকে। এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যেখানে হয়তো তোমার মরণ-বাঁচন অবস্থা। মাথা ঠান্ডা রেখে সেই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বার করে আনাটাও কিন্তু এক ধরনের দক্ষতা। ইংরেজিতে যেটাকে বলতে পারো প্রবলেম সলভিং স্কিল। সেই দক্ষতাটা বাড়ানো দরকার। তৃতীয়ত, নিজের সামর্থ্যের সীমাটা বুঝতে হয়। সেটা না বুঝলে যে কেউ ভয়ঙ্কর বিপদে পড়তে পারে। শুধু তুমি নও, তোমার কোন ভুল সিদ্ধান্ত তোমার দলের মানুষদেরও বিপদে ফেলতে পারে। ফলে টিমওয়ার্ক-এর উপরেও জোর দিতে হবে। আর শেষটা হল অভিজ্ঞতা। বড় বড় পাহাড়ে চড়ার আগে ছোট ছোট পাহাড়ে গিয়ে প্র্যাকটিস করতে হবে। আমি যে অতগুলো অভিযান করেছি তার প্রত্যেকটা থেকেই কিন্তু কিছু না কিছু শিখেছি।

আপনার আগামী অভিযান কবে?

আগামী বছরের শুরুতেই বেরোচ্ছি শেষ আগ্নেয়গিরিটি আরোহণ করার জন্য— অ্যান্টার্কটিকার মাউন্ট সিডলি। সেটা সম্পূর্ণ করলে একটা বিশ্বরেকর্ড গড়ব— আমি হব সেভেন সামিটস এবং সেভেন ভলক্যানিক সামিটস সম্পূর্ণ করা বিশ্বের কনিষ্ঠতম পর্বতারোহী। আর আগামী মার্চ এপ্রিলে যদি আমি উত্তর মেরু অভিযান সম্পূর্ণ করতে পারি তা হলে আমার ‘এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ হয়ে যাবে। যে অভিযাত্রী সেভেন সামিটস ও দুটি মেরুর অভিযান সম্পূর্ণ করেন, তিনি গড়েন এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম-এর রেকর্ড। এখানেও প্রচুর খরচ। টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছি। ইচ্ছে আছে এই গ্র্যান্ড স্ল্যামটা জেতার। তার জন্যেই এত কষ্ট করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE