Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পড়ে গিয়েও নাটকীয় জয় ফারহার

শেলির মুকুট কাড়লেন তাঁরই দেশের এলেইন

সতীর্থ এবং প্রতিদিন যাঁর সঙ্গে ওঠা-বসা তিনি-ই যদি কেড়ে নেন স্বপ্ন, তা হলে কেমন লাগে? ‘‘আজ ওর দিন ছিল, তবে এটা আনন্দের যে জামাইকাতেই গেল ফাস্টেস্ট উওম্যানের পদক।’’ বক্তা শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস। বেজিং এবং লন্ডন— পর পর দু’ই অলিম্পক্সে একশো মিটার জেতায় বিশ্বের দ্রততমার সম্মান এত দিন ছিল যাঁর দখলে।

দুই জামাইকান। এলেইন টমসন (বাঁ দিকে) এবং শেলি অ্যান। ছবি: এএফপি

দুই জামাইকান। এলেইন টমসন (বাঁ দিকে) এবং শেলি অ্যান। ছবি: এএফপি

রতন চক্রবর্তী
রিও দে জেনেইরো শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩২
Share: Save:

সতীর্থ এবং প্রতিদিন যাঁর সঙ্গে ওঠা-বসা তিনি-ই যদি কেড়ে নেন স্বপ্ন, তা হলে কেমন লাগে?

‘‘আজ ওর দিন ছিল, তবে এটা আনন্দের যে জামাইকাতেই গেল ফাস্টেস্ট উওম্যানের পদক।’’

বক্তা শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস। বেজিং এবং লন্ডন— পর পর দু’ই অলিম্পক্সে একশো মিটার জেতায় বিশ্বের দ্রততমার সম্মান এত দিন ছিল যাঁর দখলে। মেয়েদের বোল্ট বলা শুরু হয়েছিল যাঁকে। রিওতে তাঁর স্বদেশী স্প্রিন্ট সম্রাটের মতোই ফ্রেজার-প্রাইসের কাছেও সোনার হ্যাটট্রিকের আশায় ছিল বিশ্ব।

খেতাব রক্ষার সেই লড়াইয়ে ফ্রেজার-প্রাইস যখন নামলেন, তখন ভারতীয় সময়ে শনিবার গভীর রাত। হ্যাভালাঞ্জ অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামেও তখন ভিড়টা অনেক পাতলা। জনা দু’ই জামাইকান সাংবাদিক দেখলাম আলোচনা করছেন, শেলির সাক্ষাৎকার কী ভাবে নেওয়া উচিত। তিন নম্বর সোনাটা জিতলে বোল্টের সঙ্গে তুলনায় যাওয়া হবে কি না। তখনও বোঝা যায়নি নিভৃতে তৈরি হয়ে গিয়েছেন নতুন চ্যালেঞ্জার।

এলেইন টমসন।

জীবনের প্রথম অলিম্পিক্সে জামাইকারই এলেইন যখন শেলির থেকে একশো মিটারের মুকুট কেড়ে নেওয়ার দৌড়টা শুরু করলেন তখনও শুরুতে বোঝা যায়নি। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রেসবক্সে উসখুস। শেলিকে টপকে গেলেন টমসন।

‘‘ওকে টপকে যাওয়ার সময়েই ভাবছিলাম আমার এত দিনের পরিশ্রম সার্থক। তবে শেলি গ্রেট অ্যাথলিট।’’ বলছিলেন আর উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছিলেন বছর চব্বিশের জামাইকান মেয়ে। দ্রুততমা মানবীর সম্মান ছিনিয়ে নিতে পেরে তিনি যে কতটা আপ্লুত, বোঝা যাচ্ছিল দেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়াম চক্কর দেওয়ার সময়। কোমর দোলাচ্ছেন। হাসছেন। আঙুল তুলে আকাশের দিকে দেখাচ্ছেন। কী যে করবেন ভেবে পাচ্ছেন না! একটা সময় তৃতীয় স্থানে রেস শেষ করা শেলিকে ডেকে নিলেন দেশের পতাকা নিয়ে ফটোশ্যুটের জন্য। মেয়েদের সবচেয়ে সম্মানের ইভেন্ট একশো মিটারে তিন পদকের দু’টোই যে জামাইকার। রুপো জিতলেন যুক্তরাষ্ট্রের টোরি বোয়ি। তিনিও নিজের প্রথম অলিম্পিক্সে হারালেন ফ্রেজার-প্রাইসকে।

তবে সত্যিই চমকপ্রদ এলেইন টমসনের উত্থান। পাড়ার স্কুল ছেড়ে স্টাইপেন্ড অ্যাথলিট হিসাবে যখন যোগ দেন ম্যাঞ্চেস্টার স্কুলে তখন একশোয় সময় করেন ১২.০৮ সেকেন্ড। তার পর কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁকে বের করে দেওয়া হয় ওই স্কুল থেকে। পরে যোগ দেন জামাইকার নামী কোচ পল ফ্যান্সিসের ভাইয়ের অ্যাকাডেমিতে। যেখানে যাওয়ার পরই উন্নতি করা শুরু করেন। টমসন এখন রয়েছেন কিংসটন অ্যাকাডেমিতে। যাঁকে হারালেন, সেই ফ্রেজার-প্রাইসের সঙ্গেই সেখানে দিন-রাত কাটে তাঁর।

একসঙ্গে থাকা-খাওয়া-অনুশীলন করেন বলে কি একটু বাড়তি সুবিধা হয়েছে? ‘‘সেটা কী করে বলব। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। এখনও তো পুরোটাই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে!’’ ইস্পাতের মতো সুঠাম শরীরটা থেকে যেন বেরিয়ে আসছিল এত দিন জমিয়ে রাখা জেদের বিস্ফোরণ। টমসন নিজেকে এমন ভাবে প্রকাশ করছিলেন, যেন বলছেন, ‘‘আমাকে দেখুন আমি এখন বিশ্বের সেরা মানবী।’’ মিডিয়ার তাঁকে ঘিরে ধরাটাও বেশ উপভোগ করছিলেন মনে হল। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। আচ্ছা, এই যে এত দিনের এক জন সতীর্থের মুকুট কেড়ে নিলেন এর মধ্যে তো আলাদা একটা তৃপ্তি থাকে? ১০.৭১সেকেন্ড সময় করে সোনা জেতা দ্রুততম মানবী বললেন, ‘‘শেলি গ্রেট অ্যাথলিট। তবে দু’জনে একসঙ্গে অনুশীলন করলেও আলাদা-আলাদা ভাবে তৈরি হয়েছি। আমাদের কোচ আলাদা। আর সবাই তো বোল্ট নয়, যে বলে বলে সোনা জিতে যাবে।’’ বোল্টকে নিয়ে যে টমসন আপ্লুত, কথা বললেই বোঝা যায়। জানালেন, ‘‘বোল্টের দৌড় দেখতে আসব। ও সোনা পাবেই। তার পর একসঙ্গে জামাইকান ডাবলের ছবি পাবেন আপনারা। বলেই হেসে ফেললেন নতুন অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন।

এ দিকে, আরও বড় একটা অঘটন ঘটতে ঘটতেও ঘটল না। ছেলেদের দশ হাজার মিটার দৌড়ে শুরুতে মাটিতে পড়ে গিয়েও জিতলেন ব্রিটেনের মো ফারাহ। করে ফেললেন সোনা জয়ের হ্যটট্রিক।

কেনিয়ার পল টুনেইকে টপকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে স্বদেশি প্র্যাকটিস পার্টনার গ্যালেন রুপের সঙ্গে পা জড়িয়ে পড়ে যান ফারাহ। কিন্তু তিনি ঠিক কেন বিশ্বের অন্যতম সেরা চ্যাম্পিয়ন, বোল্টের সঙ্গে কখনও কখনও তুলনীয়, সেটা বোঝালেন এর পরেই। উঠে দাঁড়ালেন এবং ফের দৌড় শুরু করলেন। সোনা জেতার পর স্টে়ডিয়ামে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘যখন পড়ে গিয়েছিলাম তখন মনে পড়ছিল আমার বোনের কথা। ওকে তো আমি খুব ভালবাসি। ওকে লন্ডনের পর কথা দিয়েছিলাম রিও-তে পদক জিতে হ্যাটট্রিক করব। ওর মুখটা ভেসে উঠতেই ফের দৌড়তে শুরু করলাম। তবে ঘটনাটা রেসের শুরুর দিকে ঘটেছিল বলে সুবিধা হয়েছে।’’ বোনের প্রতি এই আবেগ, মো ফারাকে সালাম জানাতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE