Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ব্রাজিলের শাপমোচন ঘটল বেলো হরাইজন্তেতে
Argentina's world cup dream is in trouble

মেসি আর আদৌ রাশিয়া পৌঁছবেন?

ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচটা শুরুর আগে টিভিতে দেখলাম মেসি-নেইমাররা নীরবতা পালন করছে। দিনকয়েক আগেই মারা যাওয়া সেই সত্তরের ব্রাজিল টিমের অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তোর জন্য।

সান্ত্বনা। ছবি: রয়টার্স।

সান্ত্বনা। ছবি: রয়টার্স।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১০
Share: Save:

ব্রাজিল-৩ (কুটিনহো, নেইমার, পওলিনহো)

আর্জেন্তিনা-০

ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচটা শুরুর আগে টিভিতে দেখলাম মেসি-নেইমাররা নীরবতা পালন করছে। দিনকয়েক আগেই মারা যাওয়া সেই সত্তরের ব্রাজিল টিমের অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তোর জন্য।

শুক্রবার ভোর হওয়ামাত্র তাই একটু নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। সঙ্গে একটা প্রশ্নও এল মনে। আলবার্তোর টিমের সেই ‘জোগো বোনিতো’ (সুন্দর ফুটবল) এই ম্যাচেও ব্রাজিলের থেকে পাব কি?

নব্বই মিনিট পরে বুঝলাম আমার মনের ভাবনা অমূলক ছিল না। দু’বছর পরের বিশ্বকাপের এই কোয়ালিফাইং ম্যাচটা আগাগোড়া দাপিয়ে খেলে যে ভাবে মেসির আর্জেন্তিনাকে নেইমাররা চূর্ণ করল তা দেখে সেই পুরনো ব্রাজিলকে মনে পড়ে গেল। তা-ও আবার সেই স্টেডিয়ামে, যেখানে দু’বছর আগে ব্রাজিলের জার্সিতে শেষ ম্যাচে পওলিনহো, দানি আলভেজরা জার্মানির কাছে ১-৭ ধ্বংস হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের কথা বলছি। সেই বেলো হরাইজন্তে-তে ব্রাজিলের শাপমোচন ঘটল!

ময়দানে কোচিং করাতে গিয়ে আমি কিছু ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারকে টিমে পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় একটা জিনিস বুঝেছি, ব্রাজিলিয়ান প্লেয়ারমাত্র মনের ভিতরে ফুটবল-ইগো নিয়ে ঘোরে। যেন এই ব্রহ্মাণ্ডে আমরা ফুটবলটা যখন খেলি তখন বাকিরা তা দেখে! কিন্তু সেই অহংয়ে ওদের কালি পড়ে গিয়েছিল। ব্রাজিলের মতো ফুটবল অন্তপ্রাণ দেশ সেই গ্লানি মুছতে যে মরিয়া হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।

কী করলে মেসিরা বিশ্বকাপে?

• ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্তিনা গ্রুপে ছয় নম্বরে।

• ম্যাচ বাকি সাতটা।

• গ্রুপ থেকে প্রথম চার দেশ সরাসরি কোয়ালিফাই করবে।

• পাঁচ নম্বরকে কোয়ালিফাই করতে হবে প্লে-অফ খেলে।

আর্জেন্তিনাকে অন্তত আরও পাঁচটা ম্যাচ জিততে হবে।

• সাতটা জিতলে প্রথম চারে থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা।

দুঙ্গাকে সেই দুঃস্বপ্নের সেমিফাইনালের পরে ব্রাজিল কোচ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঙ্গা তো আর জোগো বোনিতো ঘরানার ফুটবলার নয়। দুঙ্গা হল লাজারোনির ছাত্র। যাঁর ব্রাজিল সৃষ্টির চেয়ে ধ্বংসাত্মক ফুটবলকে বেশি প্রাধান্য দিত। তাই দুঙ্গার কোচিং জমানাতেও ব্রাজিলের সেন্ট্রাল মিডফিল্ড ভরে গিয়েছিল গাদাগুচ্ছের ডিফেন্সিভ মিডিওতে। আলভেজ, মার্সেলোর মতো উইংব্যাকরা ওভারল্যাপে যেত কম। কোপা আমেরিকায় ব্রাজিল তাই খুঁড়িয়েছে। চলতি বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইংয়ের গোড়ার দিকেও।

তার পরেই তো কোরিন্থিয়ান্স থেকে তিতেকে ব্রাজিলের কোচ করে আনা। যিনি কোচিংটা করান তেলে সান্তানার মতো আক্রমণাত্মক ঢংয়ে। তিতে এসেই বদলে দিয়েছেন দলটাকে। অভিজ্ঞ কোচ। জানেন তাঁর দেশের মানুষের ফুটবলআত্মা কী চায়? ৪-২-৩-১ আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ছক ভুলে ব্রাজিল ফের সেই তাদের আক্রমণাত্মক ৪-৩-৩। তার সুফলও পাচ্ছে হাতেনাতে। আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে লাতিন আমেরিকান গ্রুপে নেইমাররা এখন এক নম্বরে। অথচ তিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই ব্রাজিলই ছয় ম্যাচে নয় পয়েন্ট নিয়ে ছিল অনেক নীচে। নেইমার নিজেও তো শেষ চার ম্যাচে চারটে গোল আর পাঁচটা গোলের পাস বাড়িয়ে ফর্মের তুঙ্গে। মেসিদের এ দিন ব্রাজিল ছয় গোলে হারালেও অবাক হতাম না।

তাকিয়ে ছিলাম দুই বার্সেলোনা-বন্ধু মেসি আর নেইমারের দেশের জার্সিতে লড়াইয়ে প্রথম জন কী করে দেখতে। তাতেও মোক্ষম চালটা তিতেরই। ব্রাজিল কোচ দেখে নিয়েছিলেন মেসি অনেক নীচ থেকে অপারেট করছে। তাই ওর গায়ে সেঁটে দিয়েছিলেন ফার্নান্দিনহোকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কল্যাণে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এই মিডিওর সঙ্গে মেসির সম্পর্কটা আবার এখন অহি-নকুলের চলছে! মেসি ওকে টপকালেও সামনে এসে পড়ছিল পওলিনহো, রেনাতো। তা ছাড়া মেসি বাঁ দিক ধরে খেলছে দেখে ব্রাজিল শুরুতে সব মুভ করছিল নিজেদের বাঁ দিক দিয়ে। মেসি তা দেখে যেই বলের কাছে যেতে গেল তখন আবার পড়ে গেল পায়ের জঙ্গলে।

উল্টো দিকে নেইমারের এই ম্যাচে মোটিভেশনটা ছিল দেখবার মতো! কুটিনহোকে দুরন্ত পাস দিয়ে গোল করাল। নিজে গোল করল। অত ভোরে ঘুম ভেঙে উঠেও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম নেইমারের বল কন্ট্রোল আর গতি।

এ বার অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের দিন আনন্দবাজারে লিখেছিলাম, তারুণ্যে ভরা এই ব্রাজিল ভবিষ্যতে চমক দেখাবে। তো সেই টিমের জেসুস, রেনাতো, মারকুইনহোস, নেইমাররাই ঝকঝক করল এ দিন আর্জেন্তিনাকে চুরমার করার ম্যাচে। ব্রাজিলের দাপটের সামনে মেসির টিমকেও যেন মনে হচ্ছিল কোনও তৃতীয় সারির টিম!

এই ব্রাজিলের দায়িত্ব নিয়ে তিতে দুটো কাজ করেছেন। এক, নামের বদলে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন তারুণ্য এবং গতিকে। দুই, নেইমারকে তিনি বক্স টু বক্স অপারেট করাচ্ছেন। ফলে বিপক্ষ নেইমারকে ধরতে গেলে উল্টে তাদের নিজেদের ছক ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে হাইপ্রেসিং। একটা সময় তো দেখলাম, নেইমার তিরিশ গজের দৌড়ে এমন একটা বল তাড়া করল যে, থতমত আর্জেন্তিনা ডিফেন্স মিস পাস-ই করে বসল! ব্রাজিলের দৌড়ই শুক্রবার শেষ করে দিল দি’মারিয়া-মাসচেরানো-ওটামেন্ডিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leonel Messi Neymar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE