চিকিত্সকদের কোলে আফরিন ও আসমা। নিজস্ব চিত্র। (নীচে)
টানা ছ’ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে বুকের কাছ থেকে জুড়ে থাকা দুই শিশুকন্যাকে আলাদা করল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিত্সক দল। বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালের শিশু শল্য চিকিত্সক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১০ চিকিত্সক-সহ মোট ২০ জনের একটি দল ওই অস্ত্রোপচার করেন। নরেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, এর আগে এত দীর্ঘসময় ও এতজন চিকিত্সক মিলে কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি।
হুগলির গুড়াপ থানার বাতানগড়িয়া গ্রামের শেখ ইস্তাক ও কাফুরা বেগমের প্রথম সন্তান ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক। দ্বিতীয়বার, গত বছরের ৮ ডিসেম্বরে এই সংযুক্ত শিশুদুটি জন্মায়। গুড়াপের যে নার্সিংহোমে এদের জন্ম হয় সেখানকার চিকিত্সকেরা জানিয়েছিলেন, শিশুদুটির সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক থাকলেও পাকস্থলী রয়েছে একটিই। এ দিন পাকস্থলীটি দু’ভাগ করেন চিকিত্সকেরা। নরেনবাবু বলেন, “লিভার সংক্রান্ত যে কোনও অস্ত্রোপচারই জটিল ও ঝুঁকির। ফলে প্রচুর সময় লেগেছে।”
এর আগেও ২০০০ সাল নাগাদ কলকাতা মেডিক্যালে কর্তব্যরত থাকাকালীন এ ধরনের অস্ত্রোপচার করেছিলেন নরেনবাবু। সেই যমজদের নাম ছিল মোনা ও লিসা। নরেনবাবু বলেন, “তাদের বয়স এখন ১৪। বহাল তবিয়তেই রয়েছে দু’জনে। আরও আগে কলকাতার রামকৃষ্ণ সেবাসদনে গঙ্গা ও যমুনা নামে কনজয়েন্ড টুইনকে আলাদা করেন চিকিত্সক সুবীর চট্টোপাধ্যায়। সেটি আটের দশকের ঘটনা।”
অস্ত্রোপচার পরে আফরিন ও আসমার বাবা, পেশায় খেতমজুর শেখ ইস্তাক জানান, জন্মের পরে মেয়েদের দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখনই জানতে পারেন বর্ধমানের চিকিত্সক নরেন্দ্রনাথবাবুর কথা। সঙ্গেসঙ্গেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। কিন্তু নরেনবাবু জানান, কিছুটা বড় না হলে তিনি ওই অপারেশন করা যাবে না। পরে শিশুদুটি এক বছরের হতেই ১৮ নভেম্বর বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয় তাদের। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের নতুন ভবনে অপারেশন হয়। মা কাফুরা বেগম অবশ্য কোনওভাবেই ওটির ধারেকাছে যাননি। উত্কণ্ঠায় সারাদিনই ছলছল চোখে নতুন ভবনের এক কেবিনে বসেছিলেন তিনি। কেউ গেলেই একটাই প্রশ্ন করছিলেন, ‘ওরা বাঁচবে তো? আমার কোলে আবার ফিরে আসবে তো?’
অস্ত্রোপচারের পরে আফরিন-আসমার অবস্থা স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। চিকিত্সকেরা জানান, নাড়ির স্পন্দন, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ ঘনঘন ওঠা নামা করছিল। প্রায় এক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরে প্রথমে আফরিন ওরফে হাসি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ পরে সামান্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিপদসীমার বাইরে আসে আসমা ওরফে খুশিও। চিকিত্সকেরা ততক্ষণে পরস্পরকে অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত। পরে নিজেরাই কিছুটা দূরে শিশু বিভাগের আইসিইউতে কোলে করে নিয়ে যান শিশুদুটিকে। নরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এ ধরনের শিশুদের চিকিত্সা শাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয় থোরাকো ওমফ্যালোপেগাস কনজয়েন্ড টুইন। ওদের নিয়ে আজ বড় উত্কণ্ঠায় ছিলাম। তবে আপাতত ভাল আছে ওরা।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উত্পল দাঁ বলেন, “আজ আমাদের হাসপাতালের একটি বিশেষ দিন। আমাদের চিকিত্সকেরা যে ভাবে ঝঁুকি নিয়ে শিশুদুটিকে সুস্থ করে তুলেছেন তাতে আমি গর্বিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy