Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আইডি হাসপাতাল

শনিবার আসেন না রেডিওলজিস্ট, হয়রানির অভিযোগ তুললেন রোগীরা

তিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক (রেডিওলজিস্ট)। অথচ প্রতি শনিবার তিনি হাসপাতালে আসেন না বলে অভিযোগ। গত প্রায় আট মাস ধরে তাঁর এই অনুপস্থিতির জন্য শনিবারে কোনও রোগী আইডি-তে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এক্স-রে করাতে এলে রিপোর্ট হাতে পান না। ইমার্জেন্সি কেসেও এর ব্যতিক্রম হয় না।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৪ ০০:৩২
Share: Save:

তিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক (রেডিওলজিস্ট)। অথচ প্রতি শনিবার তিনি হাসপাতালে আসেন না বলে অভিযোগ। গত প্রায় আট মাস ধরে তাঁর এই অনুপস্থিতির জন্য শনিবারে কোনও রোগী আইডি-তে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এক্স-রে করাতে এলে রিপোর্ট হাতে পান না। ইমার্জেন্সি কেসেও এর ব্যতিক্রম হয় না। কারণ, টেকনিশিয়ানেরা এক্স-রে বা ইসিজি করলেও রিপোর্ট লেখার কথা শুধু রেডিওলজিস্টের।

রোগীদের অভিযোগ, পরের দিন রবিবার ছুটির দিন, ফলে রিপোর্ট পাওয়া যায় না সে দিনও। রিপোর্ট হাতে পেতে প্রায় চার-পাঁচ দিন পার হয়ে যায়। অথচ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল হল যে কোনও সংক্রমণজনিত রোগ ও আন্ত্রিক রোগের ক্ষেত্রে রাজ্যের একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল। এখানে যে ধরনের রোগী আসেন তাঁদের বিশেষ করে আল্ট্রাসনোগ্রাফির প্রয়োজন হয়। সেখানে শনি-রবিবার রেডিওলজি বিভাগ থেকে কেন রিপোর্ট মিলবে না? রিপোর্ট না দেখলে তো সঠিক চিকিত্‌সাও হবে না। ফলে অনেক ইমার্জেন্সি কেসে গরিব রোগীকে প্রচুর টাকা দিয়ে বেসরকারি জায়গা থেকে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হতে হয়।

শনিবার না আসার কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রেডিওলজিস্ট জীবনকৃষ্ণ দে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আইডি-র মতো স্পেশালিটি হাসপাতালে কেন এক জন মাত্র রেডিওলজিস্ট থাকবেন? কেন বছরের পর বছর রোগীর চাপ একা আমাকে সামলাতে হবে?” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমার মতো সিনিয়র একজন প্রফেসরকে আইডি-তে পানিশমেন্ট পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। আমার শরীরও ভাল নেই। আমার কোনও সহযোগী নই, কোনও মেডিক্যাল অফিসার নেই। অনেকদিন চাকরি হয়েছে, অনেক ছুটি বাকি রয়েছে। রবিবার আমার এমনিতেই ছুটির দিন। সেই সঙ্গে আমি সপ্তাহান্তে শনিবার ছুটি নেব। তা না হলে বাকি সপ্তাহ একা টানা মুশকিল।”

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কেন আইডি-তে আরও অন্তত একজন রেডিওলজিস্ট রাখা হচ্ছে না। একজন রেডিওলজিস্ট থাকলে তিনি কোনও ভাবে সাত-দশ দিন অসুস্থ থাকলে তো রোগীরা ততদিন টানা রিপোর্ট পাবেন না! হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, অতীতে এমন ঘটেছে। তা-ও স্বাস্থ্যকর্তাদের হেলদোল নেই।

স্বাস্থ্যঅধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর বক্তব্য, “স্পেশাল মেডিক্যাল অফিসারের অভাব আমাদের রয়েছে। নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু আইডি-তে এই সমস্যা সম্পর্কে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানাননি কেন?” তিনি আরও বলেন, “সাধারণত কোথাও একজন থাকলে অন্য কোনও জায়গা থেকে প্রয়োজনে ডিটেলমেন্টে আরও একজনকে নিয়োগ করা হয়। আইডিতে সেটা হয়নি কেন খতিয়ে দেখা হবে।” আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্র এ ব্যাপারে প্রথমে বলেন, তিনি কিছুই জানতেন না। খোঁজ নেওয়ার পরে তাঁর বক্তব্য, “শনিবার করে জীবনকৃষ্ণবাবু আসেন না ঠিক, কিন্তু অন্য মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের মতো না এসে সই করেন না। তাঁর পাওনা ছুটি তিনি নিচ্ছেন।”

যদিও স্বাস্থ্যভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে এখনও পর্যন্ত শনিবার না আসার জন্য জীবনকৃষ্ণবাবুর কোনও রকম ছুটি কাটা যায়নি। এ ব্যাপারে তাঁর নিজের বক্তব্য, “২০১৪ সালেই আমার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। তাই সার্ভিস বুক এজি বেঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল। আচমকা অবসরের বয়স ৬৫ হয়ে গিয়েছে। এখন সার্ভিস বুক ফেরত আসবে। তখনই আমি যা যা ছুটি নিয়েছি সবই তাতে ঢুকে যাবে।” কিন্তু ছুটি বাকি থাকলেও কোনও হাসপাতালে কোনও ডাক্তার প্রতি সপ্তাহে কি একটা নির্দিষ্ট দিনে ছুটি নিয়ে যেতে পারেন? অধ্যক্ষ উচ্ছ্বলবাবুর উত্তর, “শনিবার আইডি-তে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা এক্স-রে করতে আসা রোগীরা রিপোর্ট পাননি বলে তাঁদের চিকিত্‌সা থমকে গিয়েছে, এমন কথা কোনও দিন কানে আসেনি। তা ছাড়া, কোনও সরকারি হাসপাতালেই দিনের-দিন রিপোর্ট মেলে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

beleghata id hospital parijat bandopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE