এক মনে এখন তালিকায় একটা একটা করে টিক দিচ্ছে বছর ছয়েকের মেয়েটা। হিসেব করে দেখছে, কী কী দেখা বাকি আর কী কী দেখা হল। কারণ হাতে যে বেশি সময় নেই।
ম্যাঞ্চেস্টার শহরের ব্ল্যাকলির ছোট্ট মলির চোখ দু’টো আর কিছু দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বংশগত রোগ রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসায় আক্রান্ত সে। যে রোগ সারানোর মতো এখনও তেমন কোনও চিকিৎসা নেই। তাই মলির বাবা ক্রিস আর মা ইভ সময়ের সঙ্গে দৌড়ে নেমেছেন। তাঁরা চান, যত দ্রুত সম্ভব মেয়ে যা চায়, দেখে নিক। ইভের কথায়, “সময় নেই। তাই ওর মনে একটু একটু করে সব জমা করে দিচ্ছি। সেই স্মৃতি নিয়েই তো বাকি জীবন এগোতে হবে ওকে।”
মলির চোখের ব্যাপারে জানার পর খুবই ভেঙে পড়েন বাবা-মা। যদিও ইভের ভাই ও কাকা এই রোগেই আক্রান্ত। ইভ বলছেন, “আমাদের বলা হয়েছিল, এই রোগ শুধু ছেলেদের হয়।” তাই তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি নিজের মেয়ের চোখেও কোনও দিন অন্ধকার নেমে আসবে। জন্মের সময় সব ঠিক ছিল। স্কুলে যাওয়া শুরু হতেই সমস্যা বোঝা গেল। বাড়িতে টিভি দেখতেও অসুবিধা হচ্ছিল মলির। সাধারণ চোখের ডাক্তার মলিকে চশমা দিলেন। কিন্তু তাতেও কিছু লাভ হল না। ক্রিস-ইভ দেখছিলেন, মেয়ের দেখার সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে।
এর পরে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে চলে নানা পরীক্ষা। তার পরে ধরা পড়ে মলির চোখ রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসায় আক্রান্ত। রাতে দেখতে খুবই অসুবিধে হয় তার। ক্রিস বা ইভ জানেন না, কবে মেয়ের চোখের আলো নিভে যাবে। ডাক্তাররাও সময় বেঁধে দেননি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, দৃষ্টিশক্তি তত ক্ষীণ হচ্ছে, এটা বেশ বুঝছেন মলির বাবা-মা। আর সেটাই মেনে নেওয়া ওদের পক্ষে দুঃসাধ্য হচ্ছে। মলি প্রতি মুহূর্তে নানা প্রশ্ন করছে। ছোট্ট মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না, কেন ওর চোখের সামনে থেকে সব হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাবে? ঝুপ করে সব কালো হয়ে যাবে। এখনই একটু দূরে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে ঝাপসা দেখছে মলি। তাই মলির বাবা-মা চান যে করে হোক, মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে।
মলির আরও দুই ভাইবোন রয়েছে। শার্লট (৫) আর স্যামুয়েল (২)। ওদের নিয়ে ডিজনিল্যান্ড দেখাতে চান ক্রিস-ইভ।
তাই চাঁদা তুলে চেষ্টা চলছে অর্থ জোগাড়ের। বাকিংহাম প্যালেস, মিউজিয়াম, বাটারফ্লাই হাউস, অস্ট্রেলিয়া, ফুটবল ম্যাচ এমন আরও অনেক কিছুই আছে মলির তালিকায়। ক্রিস-ইভের সতর্ক নজর শার্লট আর স্যামুয়েলের দিকেও। ওরা ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছে তো? ঘন ঘন দৌড়ে যান ডাক্তারের কাছে।
ইভ জানালেন, এর পরে মলিকে ব্রেইল শেখানো হবে। হাতে দেওয়া হবে লাঠি। তার আগে মেয়ের স্মৃতির ভাঁড়ার ভর্তি করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন ক্রিস আর ইভ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy