Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসককে মার, প্রতিবাদে হাসপাতাল বন্ধ

প্রাচীর নেই। নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী। মাস তিনেক আগে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের আহিরণে অরক্ষিত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাণ্ডব চালিয়েছিল একদল লোক। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসায় দেরি হয়েছে অভিযোগ তুলে খোদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককেই মাটিতে ফেলে পেটালেন এক অসুস্থ শিশুর বাবা।

প্রহৃত চিকিৎসক।  —নিজস্ব চিত্র।

প্রহৃত চিকিৎসক। —নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা
আহিরণ (মুর্শিদাবাদ) শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

প্রাচীর নেই। নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী। মাস তিনেক আগে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদের আহিরণে অরক্ষিত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাণ্ডব চালিয়েছিল একদল লোক। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসায় দেরি হয়েছে অভিযোগ তুলে খোদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককেই মাটিতে ফেলে পেটালেন এক অসুস্থ শিশুর বাবা।

প্রতিবাদে ঘটনার পরেই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎসকেরা। কাজ বন্ধ রাখেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকা ৩৭ জন রোগীকেই হয় অন্য হাসপাতালে, নয় বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। দুপুরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক বসে। স্থানীয় বিডিও (সুতি ১ ব্লক) দীপঙ্কর রায় জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুলিশ পাহারা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। অসামাজিক কাজকর্ম আটকাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারিদিক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হবে। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যা ঘটেছে, তা কাম্য নয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তা বলে নিরাপত্তা নেই দেখিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা বন্ধ করা যাবে না!”

প্রহৃত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার অবশ্য বলে দিয়েছেন, “জরুরি পরিষেবা ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্ত কাজ বন্ধ থাকবে আগামী তিন দিন।” তাঁর ক্ষোভ, “যে কেউ এসে মেরে দিয়ে যাবে, ভাঙচুর করবেএমন চলতে পারে না! তিন দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা বা আমাদের নিরাপত্তা দিতে কী কাজ হচ্ছে, তা দেখব। তার পর সিদ্ধান্ত নেব ভবিষ্যতে কাজ করব কি না।” ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার দুপুরে আহিরণে মিছিল করার কর্মসূচিও নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গেলেও গ্রেফতার করা যায়নি এখনও। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বছর পয়ঁত্রিশের এক যুবক তাঁর ছ’বছরের অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। চিকিৎসক নেই দেখে চেঁচামেচি শুরু করেন তিনি। এক জন নার্স দ্রুত ‘কলবুক’ পাঠান হাসপাতাল চত্বরেই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের আবাসনে। অভিযোগ, ওই নার্সকেও গালিগালাজ করেন যুবক। মিনিট দশ-পনেরোর মধ্যে চিকিৎসক এলে যুবকের সঙ্গে বচসা বাধে। অমিতবাবু বলেন, “ছেলেটা ঠান্ডা লেগে কষ্ট পাচ্ছিল। কথা না বাড়িয়ে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিই। কিন্তু ওই যুবক অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিতে থাকে। প্রতিবাদ করায় আমাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে কিল, চড়, ঘুষি মারে।”

এর পরেই ছেলেকে নিয়ে ওই যুবক চলে যান। খবর পেয়ে চলে আসেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আরও তিন চিকিৎসক। ভর্তি থাকা রোগীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বহির্বিভাগ। এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায় রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। এক রোগিণীর আত্মীয় কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “রোগীদের হাসপাতালে রেখে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করি। কিন্তু, উত্তেজিত চিকিৎসকরা কোনও কথাই কানে তোলেননি। শেষ পর্যন্ত রোগীকে নিয়ে জঙ্গিপুর হাসপাতালে যেতে বাধ্য হই।”

সাধন ভক্ত নামে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক বলেন, “জানি অনেকের অসুবিধা হল। কিন্তু আমরাও কড়া একটা অবস্থান না নিলে এর প্রতিকার হবে না। অকারণ মার খাওয়ার জন্য তো চিকিৎসক হইনি।” প্রহৃত স্বাস্থ্যকর্তার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায়। আহিরণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি আবাসনে সস্ত্রীক থাকেন তিনি। স্ত্রী লিশি ঘোষ মালাকার বলেন, “পদে-পদে দুশ্চিন্তা নিয়ে থাকা যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE