Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেই পরিকাঠামো, বাতিল মেডিক্যালের ৭৫০ আসন

উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত তিন বছর ধরে মেডিক্যালের আসন সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার সেই পরিকাঠামোকেই কাঠগড়ায় তুলে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)। ফলে এ বছরই এমবিবিএস পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন সাড়ে সাতশো ছাত্রছাত্রী। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বাম আমলে এ রাজ্যে মেডিক্যালে আসন সংখ্যা ছিল ১১০০। সরকার পরিবর্তনের পর গত ২৬ মাসে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২২০০।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত তিন বছর ধরে মেডিক্যালের আসন সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার সেই পরিকাঠামোকেই কাঠগড়ায় তুলে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)। ফলে এ বছরই এমবিবিএস পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন সাড়ে সাতশো ছাত্রছাত্রী।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বাম আমলে এ রাজ্যে মেডিক্যালে আসন সংখ্যা ছিল ১১০০। সরকার পরিবর্তনের পর গত ২৬ মাসে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২২০০। পরিকাঠামোর অভাবের কথা তুলে এ বার ৭৫০টি আসন বাতিল করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে এমসিআই। যার নিট ফল হল, রাজ্যে মেডিক্যালের আসন সংখ্যা ২২০০ থেকে কমে হচ্ছে ১৪৫০।

এ বছর জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। মেধা তালিকা প্রকাশের পর জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভর্তি শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। তার মাস খানেক আগে এমসিআইয়ের এই নতুন নির্দেশে পড়ুয়ারা সঙ্কটে পড়লেন বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, দু’মাসের মধ্যেই নতুন করে আবেদন করে ওই আসনগুলি তাঁরা ফিরিয়ে আনতে পারবেন।

রাজ্যে সরকার বদলের পর গত তিন বছরে সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এমবিবিএস-এর আসন সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি ছিল প্রশাসনের। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে সরকারের সাফল্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই দাবি করছেন। তৃণমূলের ভোটের ইস্তাহারেও এমবিবিএস-এ আসন বাড়ানোর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন এমসিআই পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলে আসন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোয় সরকারের সাফল্যের দাবির সারবত্তা থাকল না বলে ধারণা প্রশাসনের একটি অংশের।

এমসিআই সূত্রে খবর, মূলত শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাব আর পড়ানোর মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার যুক্তি দেখিয়েই তারা আসন কমিয়ে দিয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দাবি, আসল কারণগুলোই স্পষ্ট ভাবে চিঠিতে বলা নেই। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কোন হাসপাতালে কী ধরনের পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। “এ সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”বলছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা।

এমসিআইয়ের এই নির্দেশের ব্যাপারে ফোন করে, এসএমএস পাঠিয়েও স্বাস্থ্য-প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র অভিযোগ, “অতি সামান্য কারণে আসনগুলি বাতিল করা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিচ্ছি।” স্বাস্থ্য দফতরের একটি অংশ অবশ্য জানাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, সাগর দত্তের মতো মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ অদক্ষ সংস্থার হাতে দিয়েই বিপাকে পড়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তারা প্রায় কোনও কাজ শেষ করতে পারেনি। এই অংশের মতে, পুরনো মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আসন বাতিলের কারণ মূলত শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাব।

এমসিআই অবশ্য রাজ্যের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের এক কর্তার কথায়, “অনেক দিন ধরে কুমিরছানার মতো এখান-ওখান থেকে শিক্ষক-চিকিৎসক, টেবিল-চেয়ার তুলে এনে মেডিক্যাল কলেজগুলোর পরিকাঠামো ‘ঠিক আছে’ বলে বলা হয়েছে। আমাদের সমালোচনা করে বলা হত, এমসিআই কড়া নয়। পরিকাঠামো নিয়ে এখন যে আর মৌখিক আশ্বাসে পার পাওয়া যাবে না, রাজ্যগুলিকে সেই বার্তাই আমরা দিতে চাইছি।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আগামী জুন মাস থেকে এ বছরে জয়েন্ট-এন্ট্রান্সের মাধ্যমে মেডিক্যাল-এ সুযোগ পাওয়া ছেলেমেয়েদের ভর্তি শুরু হওয়ার কথা। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এমসিআইয়ের নির্দেশের পরে ওই ৭৫০ আসনে এ বছর ছাত্র ভর্তি করা যাবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছাত্র, অভিভাবক এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতর। অনেকের মতে, মেধা তালিকায় নাম থাকা পড়ুয়ারা সরকারি কলেজে মেডিক্যাল পড়ার সুযোগ না পেলে। বাধ্য হয়ে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে ছুটবেন। আর যাঁরা আর্থিক ভাবে ততটা সচ্ছ্বল নন, মেধাই যাঁদের সম্বল-- তাঁদের একটা বড় অংশ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।

এমসিআই সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, সাগর দত্তের মতো নতুন মেডিক্যাল কলেজে ১০০টি করে আসন বাতিল করা হয়েছে। আবার, পুরনো কলেজগুলির মধ্যে এনআরএস-এ ১০০, বাঁকুড়া ও বর্ধমানে ৫০টি করে আসন বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে, দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ১৫০ আসন এবং জোকার ইএসআই হাসপাতালে ১০০টি আসন। সব মিলিয়েই সংখ্যাটা ৭৫০।

প্রশ্ন উঠেছে, মেডিক্যালে আসনবৃদ্ধি যদি সরকারের ‘সাফল্য’ হয়, তা হলে আসন যাতে হাতছাড়া না হয়তা দেখার দায়িত্বও সরকারের। সে ক্ষেত্রে পরিকাঠামো ঠিক রাখার দিকে কেন নজর দেওয়া হল না? স্বাস্থ্য-অফিসারদের একাংশ এর দায় চাপিয়েছেন দফতরের কর্তাদের উপর। তাঁদের কথায়, “অনেক ক্ষেত্রে পরিকাঠামো যথেষ্ট নয় বলে জানানোর পরেও এমসিআইয়ের কাছে আসন বাড়ানোর আবেদন জানাতে উপর থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে।” তাঁরা বলতেন, “আসন বাড়ানোর আবেদন কর। তার পর ম্যানেজ হয়ে যাবে।”

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তবাবু অবশ্য মনে করেন, এমসিআইয়ের এই নতুন পরিচালন কমিটি বেশি কাজ দেখাচ্ছে। তাঁর কথায়, “তবে শেষ হাসি আমরাই হাসব। জুনের মধ্যেই আবার আবেদন করে ৭৫০ আসন ফেরানো হবে। ছাত্ররাও ভর্তি হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medical seat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE