ছানির অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণের জেরে বাদ দিতে হয়েছে একটি করে চোখ। তাতেও জটিলতা কাটেনি। চোখ দিয়ে রক্ত, জল ঝরছে। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। তাই চোখ বাদ যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ফের দুই রোগীকে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হতে হল।
রবিবার মহকুমাশাসক (মালবাজার) জ্যোতির্ময় তাঁতি লাটাগুড়ি পঞ্চায়েতের উত্তর মাটিয়ালি গ্রামের ওই দুই রোগী আমিরুল ইসলাম এবং জাবেদা বেওয়ার বাড়িতে যান। মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে তাঁদের একটি করে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটেছিল। তা নিয়ে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। পরে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে তাঁদের চোখ বাদ দিতে হয়েছে। সেই চোখে যন্ত্রণা হচ্ছে দেখে মালবাজারের মহকুমা হাসপাতালের একটি গাড়ি দুই প্রৌঢ়কেই ফের শিলিগুড়ির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের চোখের নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের ভর্তি করানো হয়েছে। নার্সিংহোমের সিইও কমলেশ গুহ বলেন, “চোখ বাদ দিতে হওয়ায় ওই অংশ ঠিক হতে একটু সময় লাগবে। তবে গুরুতর কোনও সমস্যা হয়নি বলেই চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন। সোমবার বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকও দেখবেন।”
গত ১৬ অগস্ট মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ছানির অস্ত্রোপচারের পরেই সংক্রমণে আক্রান্ত হন পাঁচ রোগী। গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে তাঁদের শিলিগুড়ির নার্সিংহোমটিতে ভর্তি করানো হয়। চোখের পরিস্থিতির খারাপ হওয়ায় ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৪ জনের একটি করে চোখ বাদ দিতে হয়। আর এক জনের চোখের অবস্থাও ভাল নয়। ছুটি দেওয়া হলেও চিকিত্সকরা তাঁর উপরে নজর রাখছেন। মঙ্গলবার ফের তাঁকে নার্সিংহোমে আসতে বলা হয়েছে। চোখ বাদ যাওয়ার পরে এ মাসের শুরুতে চার রোগী বাড়ি ফেরেন। কিন্তু, বাদ যাওয়া চোখে ফের যন্ত্রণা হচ্ছে বলে জানান দু’জনের পরিজনেরা। তাই তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন।
আমিরুল ইসলামের ছেলে খাদেমুল ইসলাম বলেন, “ভেবেছিলাম বাবাকে এ দিন প্রাথমিক শুশ্রূষা করে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু নার্সিংহোমের তরফে সোমবার বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক না আসা পর্যন্ত ভর্তি রাখার পরামর্শ দেওয়ায় চিন্তায় রয়েছি।” তবে মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময়বাবু জানান, বাদ যাওয়া চোখে সমস্যা হওয়ায় ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত শিলিগুড়িতে পাঠানো হয়েছে দু’জনকে।
রোগীদের বাড়িতে প্রশাসনের কেউ না যাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কর্মকর্তারা। শেষে প্রশাসনিক কর্তারা বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়ায় তাঁরা খুশি। মালবাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার প্রভাত দে, লাটাগুড়ির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার অনির্বাণ মজুমদারের বলেন, “মালবাজারের মহকুমাশাসক অন্তত রোগীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়ায় ও ফের চিকিত্সার ব্যবস্থা করায় আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছি। ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও প্রশাসনকে দ্রুত দেখতে হবে।”
আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে দার্জিলিঙ জেলা লিগাল এইড ফোরাম। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি ও রোগীদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানাব। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” সেই সঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা এবং রাজ্য আইনি পরিষেবা সমিতিকেও বিষয়টি জানানো হবে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy