বাজারে যে ওষুধের দাম ৪২০ টাকা, সরকারি হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকানে সেটাই বিক্রি হচ্ছিল এক হাজার টাকায়, অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি দামে। শেষে হাতেনাতে এই অনিয়ম ধরে ফেলেন হাসপাতালের নার্সদেরই একাংশ।
ঘটনাস্থল: বারাসত হাসপাতাল। যেখানে রাজ্য সরকার ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান তৈরি করে ৬০ শতাংশেরও বেশি ছাড়ে ওষুধ বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেখানে বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ওষুধ বিক্রির ঘটনা কী ভাবে দিনের পর দিন ঘটতে পারল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। খবর পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনেও। ন্যায্য মূল্যের দোকানে এমন অনিয়ম রুখতে কী ভাবে নজরদারি বাড়ানো যায়, আপাতত তা নিয়েই চিন্তাভাবনা করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্নের প্রকল্প’। কী ভাবে এই প্রকল্পটি সফল করা যায়, তা নিয়ে নিয়মিত নানা চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে নজরদারি জারি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন। মঙ্গলবারও আচমকাই এসএসকেএম-এর ন্যায্য মূল্যের দোকানটি পরিদর্শনে যান তিনি। রোগীদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে সেগুলি খতিয়ে দেখেন। বারাসত হাসপাতালের এই অনিয়মের খবর তাঁর কাছে পৌঁছেছে কি না, সে সম্পর্কে অবশ্য স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, বারাসত হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে সরবরাহ হচ্ছিল ওই ওষুধ। ওষুধের বিলে চোখ বোলাতে গিয়ে দিন কয়েক আগে বিষয়টি চোখে পড়ে বিভাগের নার্সদের। তাঁরা চিকিৎসকদের নজরে আনেন বিষয়টি। চিকিৎসকেরা সুপারকে বিষয়টি জানান।
হাসপাতালের সুপার সুপ্রিয় মিত্র মঙ্গলবার বলেন, “ন্যায্য মূল্যের দোকানে আমি নিজে নিয়মিত নজর রাখি। কোনও সমস্যা তৈরি হলে তা খতিয়ে দেখি। এ ক্ষেত্রে কেন এমন অনিয়ম হল, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, “ওষুধের দোকানগুলি দেখভালের জন্য বিশেষ মনিটরিং কমিটি রয়েছে। অবিলম্বে সেই কমিটির বৈঠক ডাকতে নির্দেশ দিয়েছি।” অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট দোকানের মালিক অসীম সাহাও। তাঁর বক্তব্য, “যে ওষুধ-বিক্রেতা আমাদের দোকানে ওই ওষুধ সরবরাহ করেছিলেন ভুলটা তাঁর। তিনি বিলে যে দাম লিখেছিলেন, আমরা সেই দামই নিয়েছি ক্রেতাদের কাছ থেকে। তবে এখন সেই ভুল শুধরে নিয়েছি। আমাদের ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাও চেয়েছি।”
কিন্তু ওষুধের গায়েও তো ‘ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইস’ লেখা থাকে। তা হলে তাঁরা এই ভুলটা করলেন কী ভাবে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে স্বাস্থ্য ভবনে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এত দিন মূলত দু’ধরনের অভিযোগে ধাক্কা খাচ্ছিল ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান প্রকল্প। প্রথম অভিযোগ, বেশির ভাগ ওষুধই ওই দোকানগুলিতে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে চিকিৎসকদের একটা অংশ জেনেরিক নামে ওষুধ লেখার অভ্যাস শুরু করলেও ন্যায্য মূল্যের দোকানে ব্র্যান্ড নামের ওষুধই বেশি থাকে। এ বার দামের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করল। এটা বরদাস্ত করা হবে না।”
এ দিকে এসএসকেএম সূত্রে খবর, সেখানে এ দিন ১৫ মিনিট ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যখন ন্যায্যমূল্যের দোকানে রোগীদের হয়রানি বন্ধ নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র, সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বেশ কয়েকটি প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে সেখানে জেনেরিক নামে ওষুধ লেখা হচ্ছে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখেন তিনি। কয়েকটি প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ দেখে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেন। উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে খোঁজখবর করার পাশাপাশি দালালচক্র রুখতে পুলিশের সঙ্গে হাসপাতালের সমন্বয় বাড়াতে কী কী পদক্ষেপ করা দরকার, তা নিয়েও অধিকর্তার সঙ্গে কথা হয় তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy