Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়ুয়ার মনের খবর রাখবেন শিক্ষকই

ক্লাসরুমের বাইরে বা ক্যান্টিনে একসঙ্গে আড্ডা দিয়ে পড়ুয়াদের বন্ধু হয়ে ওঠার জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ দিলেন এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি, প্রতিটি কলেজে ‘মেন্টরিং স্কিম’ চালু করে শিক্ষক-বন্ধুর সহযোগিতায় পড়ুয়াদের জীবনকে অবসাদমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৫
Share: Save:

ক্লাসরুমের ভিতরে শুধু পড়ানোই নয়, পড়ুয়াদের মনের ভিতরে ঢুকতে হবে তাঁদের। সেখানে জমে থাকা হতাশা সরিয়ে মুক্ত বাতাস ভরে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে তাঁদেরই। ক্লাসরুমের বাইরে বা ক্যান্টিনে একসঙ্গে আড্ডা দিয়ে পড়ুয়াদের বন্ধু হয়ে ওঠার জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ দিলেন এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি, প্রতিটি কলেজে ‘মেন্টরিং স্কিম’ চালু করে শিক্ষক-বন্ধুর সহযোগিতায় পড়ুয়াদের জীবনকে অবসাদমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

কখনও অভিভাবকদের চাপে পড়ে অপছন্দের বিষয় নিয়েও পড়তে বাধ্য হন পড়ুয়ারা। কখনও পঠনপাঠন ঠিক পথে চললেও ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা নিয়ে জেরবার হয়ে যান অনেকে। পড়ুয়াদের জীবনে এই ব্যাধিটি ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে দাবি বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষের। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল ও ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়াদের মধ্যে অবসাদ বাড়ছে বলে মনে করেন তাঁরা। তাই মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁদের অধীনে থাকা সমস্ত কলেজে নিয়ম মেনে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করাতে হবে। তার জন্য ২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হচ্ছে ‘মেন্টরিং স্কিম’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্র জানান, ইতিমধ্যে সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজগুলিতে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। পড়ুয়ার সংখ্যার উপরে ভিত্তি করে প্রতিটি শিক্ষকের অধীনে একটি করে দল গঠন করা হবে। অর্থাৎ, এক জন শিক্ষকের অধীনে থাকবেন দশ জন করে পড়ুয়া। প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দেবেন ওই শিক্ষক। পড়ুয়াদের মনের অবস্থা বুঝে প্রতি মাসে তৈরি করবেন একটি রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট দেখিয়ে মনোবিদদের সঙ্গে আলোচনা করবেন সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ। সকল পড়ুয়ার মনের অবস্থা যেন ওই শিক্ষকের নখদর্পণে থাকে, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজন মতো ব্যবস্থাও নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, পঠনপাঠনের চাপ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কে আঘাতের কারণে অনেক ক্ষেত্রে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দেয়। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পরিবারকে কাছে পেলেও কলেজের জীবনে অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় পরিবারের সঙ্গে। এর জেরে অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যেই একাকিত্বের সমস্যা দেখা দেয়। জন্মায় অবসাদও। সম্প্রতি, নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো তদন্তে জানতে পেরেছে শহরের নামীদামি বেশ কয়েকটি কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে নেশা করার প্রবণতা বাড়ছে। নেশার দ্রব্য বিক্রিও করছেন তাঁদের অনেকে। এই ধরনের সমস্যা রুখতেই চালু হচ্ছে মেন্টরিং স্কিম।

সম্প্রতি, ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও পড়ুয়াদের অবসাদ থেকে বাঁচাতে ‘মাইন্ড ডেভলপমেন্ট ওয়ার্কশপ’-এর আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি দল পড়ুয়াদের মানসিক শক্তি বাড়ানোর উপায় বলে দেন সেখানে। কলেজের কর্তা নন্দন গুপ্ত বলেন, ‘‘শুধু এই কলেজ নয়, সর্বত্রই পড়ুয়ারা যেন এই হতাশা নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পান, সেই জন্য এই কর্মশালা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হল।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাঁদের সুস্থ রাখতে পারলে আগামী দিন সুরক্ষিত থাকবে। তাই এই মেন্টরিং স্কিম।’’

মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। ওই বয়সে পড়ুয়াদের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যেগুলি পরিবারকে বলা যায় না, বন্ধুদের বললেও ঠিক পরামর্শ পাওয়া যায় না। এ ভাবে শিক্ষককে বন্ধুর মতো পাশে পেলে খুবই ভাল। মানসিক রোগকেও দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Friendship Teacher Students Mentoring Scheme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE