Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মাঠঘাটেই মেলে পুষ্টিকর খাদ্য, শিবিরে শিখলেন মায়েরা

বোলপুর জামবুনির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করলেন তাঁরা নিজেরাই। তার পরে সেই খাবার নিজেরাও খেলেন, বাচ্চাদেরও খাওয়ালেন।

শিবিরে স্বাস্থ্যের পাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

শিবিরে স্বাস্থ্যের পাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪২
Share: Save:

বাড়ির আশপাশেই অনেক শাক, আনাজ, ফলে মেলে সঠিক পুষ্টি— অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ডেকে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সে কথা জানালেন শিক্ষিকারা। তাঁরা জানান, মায়েদের অনেকেই তা জানেন না। পুষ্টি সপ্তাহে এমন কথা জনাতে আলোচনা শিবির হয়েছিল বোলপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে মায়েদের অনেকেই অঙ্গনওয়াড়িতে নিয়ে এসেছিলেন শাক, আনাজ। বোলপুর জামবুনির অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করলেন তাঁরা নিজেরাই। তার পরে সেই খাবার নিজেরাও খেলেন, বাচ্চাদেরও খাওয়ালেন।

২০১৬-১৭ সালে বীরভূম জেলা পুষ্টি মিশনের আওতাভুক্ত হওয়া উচিত বলে ঘোষণা করেছিল জাতীয় পুষ্টি মিশন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বীরভূম সহ পশ্চিমবঙ্গের আরও চারটি জেলা জাতীয় পুষ্টি মিশনের আওতাধীন হয়। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে অপুষ্টি দূর হবে, গর্ভবতীদের মধ্যে রক্তাল্পতার প্রবণতা কমবে, জেলায় অপুষ্ট বাচ্চার জন্মহার নিয়ন্ত্রিত হবে। ইতিমধ্যেই মাথা পিছু বরাদ্দ বেড়েছে বীরভূম জেলায়। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি জানান, বীরভূম জেলায় চরম অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা এক হাজার ৯২২ জন।

এ বারের পুষ্টি সপ্তাহে মূল অনুষ্ঠানটি হয় ৭ সেপ্টেম্বর, নলহাটি ১ এর হরিদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে বলা হয়, একটি বাচ্চা গর্ভে আসা থেকে শুরু করে মোট এক হাজার দিন পর্যন্ত পুষ্টির অভাব হলে চলবে না। কারণ ওই সময়েই শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও শারীরিক গঠন হয়ে থাকে। একই ভাবে বোলপুর পুরসভার ২২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সুপারভাইজার তপতী মহন্ত মণ্ডলের নেতৃত্বে পুষ্টি সপ্তাহে মায়েদের জানানো হয়, কী ভাবে পুকুর, নদী, ডোবা, খাল-বিলে অযত্নে অবহেলায় জন্মানো বিভিন্ন শাক থেকে পুষ্টি পাওয়া যায়। উঠে এসেছিল পালং, কলমী, কুলেখাড়া শাকের কথা। আনাজের মধ্যে ছিল টমেটো, গাজর, বরবটি, কুমড়ো। বাড়ির খড়ের চালে হওয়া পুঁইশাক থেকেও যে পুষ্টি পাওয়া যায়, তা শুনে অবাক হয়েছিলেন অধিকাংশই। জানানো হয়, বাড়ির পাশেই মিলতে পারে পুষ্টিযুক্ত উপাদান।

প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এখনও গ্রামে সহজলভ্য শাকগুলির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তেমন ভাবে জানেন না মানুষ। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১০০ গ্রাম কুলেখাড়ায় রয়েছে ৭.০৩ মিলিগ্রাম লোহা, যা প্রায় শুকনো খেজুরের সমান। কুলেখাড়ায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, রাইবোফ্লাভিন, ক্যালশিয়াম ও তামার মতো ‘মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট’। খাদ্যগুণে পালং, কলমি বা মেথিশাক কুলেখাড়ার সঙ্গে তুলনাতেই আসে না। গ্রাম শহর নির্বিশেষে অনেকেই জানেন না যে সবুজ পাতাযুক্ত অনেক আনাজ, মটরশাক, সরষে শাক, ফুলকপির পাতা, বা পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লোহা।

শিবির থেকে এ সবের পাঠ পেয়েছেন শিশুদের মায়েরা। তাঁরা ঠিক করেছেন, বাচ্চাদের অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে প্রয়োজনে বাড়ির আশেপাশে থাকা মাঠ, পুকুর থেকে শাক তুলে তা রান্না করে খাওয়াবেন। সুপারভাইজার তপতীদেবী বলেন, ‘‘পুষ্টিযুক্ত খাবার পদ্ধতি, কুলেখাড়া সিদ্ধ জল খাওয়ানোর মতো কিছু বিষয়ে মায়েদের বুঝিয়েছিলাম। তার পরে বলেছিলাম, তোমাদের রান্নাও করতে হবে। সেই কথা শুনেই মায়েরা বাড়ি থেকে শাক, সবজি নিয়ে আসে।’’ নতুন জিনিস শেখার পর বাস্তবে সেটির প্রয়োগ করতে পেরে খুশি শারমিন বেগম, জয়ন্তী কোঁড়া, পূজা তুরীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anganwadi Vegetables
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE