Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lipestyle Tips

রাগ খুব বেশি? তা হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বেশি

বিজ্ঞানীদের মতে, চণ্ডাল রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে৷ প্রচণ্ড রাগের মুহূর্তে যাঁরা ব্যায়াম করে রাগ কমাতে যান, তাঁদের আশঙ্কা আরও বাড়ে৷

বিজ্ঞানীদের মতে, চণ্ডাল রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে৷

বিজ্ঞানীদের মতে, চণ্ডাল রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে৷

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ১৭:০৯
Share: Save:

কথায় কথায় রেগে ফাটাফাটি করেন বা গুম হয়ে বসে থাকেন এমন দেড় হাজার জনের উপর ৩৬ বছর ধরে গবেষণা হয়েছে৷ দেখা গিয়েছে, এদের অনেকেরই অল্প বয়সে প্রেশার বাড়ে, ইস্কিমিয়া হয়, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ আবার ধরুন হাইপ্রেশার নেই বলে ভাবলেন আপনি ঝামেলামুক্ত, এমনও নয়৷ রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এমন ১২ হাজার ৯৮৬ জন নারী–পুরুষকে স্টাডি করে ২০০০ সালে সার্কুলেশন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যাঁদের রাগ খুব বেশি তাঁদের মধ্যে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের আশঙ্কা স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা তিন গুণ৷ স্বাভাবিক মানুষ বলতে একেবারে মাটির মানুষ হতে হবে এমন নয়৷ মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প রাগ করলেন, মানুষকে দু’–চার কথা শেনালেন, কি চুপ করে বসে থাকলেন, তাতে তেমন ক্ষতি নেই৷ বিপদ, রাগ মাত্রা ছাড়ালে৷ বিপদ, ক্রনিকালি রেগে থাকলে৷

বিজ্ঞানীদের মতে, চণ্ডাল রাগ সরাসরি জখম করে হার্ট ও ধমণীকে৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আদুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রবল রাগ ওঠামাত্র শরীরে শুরু হয় ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স৷ তার হাত ধরে প্রচুর স্ট্রেস হরমোন তথা নিউরোকেমিক্যাল বেরোতে শুরু করে৷ তাদের প্রভাবে হার্টরেট ও প্রেশার বাড়ে৷ করোনারি আর্টারি সঙ্কুচিত হয়৷ আবার করোনারি আর্টারিতে যদি কোনও চর্বির প্লাক জমে থাকে তা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ এই সব এফেক্ট থাকে প্রায় দু’ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ফলে এই সময় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷’’ আদুলের অভিমত, প্রচণ্ড রাগের মুহূর্তে যাঁরা ব্যায়াম করে রাগ কমাতে যান, তাঁদের আশঙ্কা আরও বাড়ে৷ আবার প্রচণ্ড স্ট্রেসের ফলে হার্টের ইলেকট্রিকাল ইমপাল্স ডিসরাপ্টেড হয়ে সূত্রপাত হয় বিপজ্জনক হার্ট রিদম ডিস্টারব্যান্সের৷ সেখান থেকেও প্রাণ যেতে পারে৷

আর একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের বাড়াবাড়ি হলে রক্তে সি–রিয়্যাকটিভ প্রোটিন বা সিআরপি বাড়তে শুরু করে৷ ২০০৪ সালে সাইকোসোমাটিক মেডিসিন–এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ডিউক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ১২৭ জন সুস্থ নারী–পুরুষের উপর সমীক্ষা করে জানিয়েছেন, যাঁদের রাগ ও হোস্টিলিটি খুব বেশি বা যাঁরা কথায় কথায় টেন্সড বা ডিপ্রেস্ড হয়ে পড়েন, সাধারণ মানুষের তুলনায় তাঁদের রক্তে সিআরপি বেশি থাকার চান্স প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ, যা কিনা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম মার্কার৷

আরও পড়ুন:

সিগারেটে সবচেয়ে বুঁদ কলকাতা, জানাচ্ছে সমীক্ষা

তামাকে ক্ষতি চোখেরও, নেই সচেতনতা

এ তো গেল রাগের বায়োলজিকাল এফেক্টের কথা, আদিল ইসলাম বলেন, ‘‘রাগ তথা যাবতীয় নেগেটিভ ইমোশন, যেমন, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি যাঁদের বেশি তাঁরা সচরাচর খুব একটা স্বাস্থ্যসচেতন হন না বলেও বিপদ হয়৷ রুটিন মেনে চলা, অসুখ-বিসুখে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা তাঁদের ধাতে থাকে না৷ বরং ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য নেশা করে, উল্টোপাল্টা খেয়ে ও শুয়ে–বসে জীবন কাটান৷ তার হাত ধরে প্রেশার–সুগার–কোলেস্টেরল ইত্যাদি বেড়ে প্রস্তুত হয় হৃদরোগের ক্ষেত্র৷ তার পরেও সচেতন না হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে৷ প্রবল রাগ ও চেঁচামেচির মুহূর্তে আচমকা হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে এমন রোগীর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়৷’’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘চন্ডাল রাগ এমন একটি জিনিস, যা মানুষকে একা করে দেয়৷ তার হাত ধরে বাড়ে স্ট্রেস–টেনশন৷ কখনও প্রবল ডিপ্রেশন৷ যার সব ক’টিই হার্টের জন্য হানিকর৷ অতএব যে কোনও মূল্যে অ্যাঙ্গার ম্যানেজ করা দরকার৷’’

অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট

(১) আপনার যে রাগ বেশি সেটা বুঝুন প্রথমে৷ এবং তার জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়৷ কারণ যে ঘটনায় আপনি রেগে যান, তাতে অন্য অনেকেই দিব্যি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন৷

(২) এ বার ঠিক করুন রাগ কমাবেন এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন৷

(৩) কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন৷ সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয় সে চেষ্টা করুন৷ তার জন্য যদি নত হতে হয় সে-ও ভাল৷

(৪) নত হতে হয়েছে বলে যদি খারাপ লাগে, ভেবে দেখুন এর বিনিময়ে আপনার শরীর, মানসিক শান্তি, সম্পর্ক সবই কিন্তু রক্ষা পেল৷

(৫) চেষ্টা করেও পরিস্থিতি এড়াতে না পারলে প্রতিজ্ঞা করুন, যা-ই ঘটুক আপনি শুধু শুনে বা দেখে যাবেন, রাগবেন না৷ এমন কথা বলবেন না যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়৷

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ডিপ বেলি ব্রিদিং, যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর–মন ঠান্ডা থাকে৷

(৬) চেষ্টা বিফলে গেলে অস্থির হবেন না৷ অন্য ইমোশনের মতো রাগও খানিক ক্ষণের মধ্যে কমতে শুরু করবে৷ ধৈর্য ধরুন৷ মুখ বন্ধ রাখুন৷ সম্ভব হলে সে জায়গা থেকে সরে যান। হনহন করে হেঁটে আসুন, মাথায় জল ঢালুন কি ঘরের কাজ করুন বা কারও সঙ্গে কথা বলে মাথা ঠান্ডা করে নিন৷

(৭) এ সব কোনওটাই সম্ভব না হলে কাজে আসবে সুইচ অফ–সুইচ অন মেকানিজ্ম এবং ভিস্যুয়াল ইমেজারি৷ এ হল পরিস্থিতির মাঝখানে বসে গভীর ভাবে অন্য পছন্দের কিছু ভাবা যাতে মন চলে যায় অন্য কোনও রাজ্যে৷ বিশেষজ্ঞের কাছে শিখে ঘরে প্র্যাকটিস করলে বিপদের সময় কাজে লাগবে৷

(৮) ডিপ বেলি ব্রিদিং, যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর–মন ঠান্ডা থাকে৷ চট করে রাগ ওঠে না৷ বা উঠলেও সহজে নেমে যায়৷ বিশেষজ্ঞের কাছে শিখে এদের জীবনের অঙ্গ করে নিন৷

(৯) মাত্রাছাড়া রাগের উত্তর হল কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি৷ ভাল বিশেষজ্ঞের কাছে করালে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো৷ নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন৷ যার প্রথম ধাপ নিজের মনকে বুঝে নেওয়া৷ যেমন,

(ক) আপনার চাহিদা কি খুব বেশি?

(খ) আপনার কি ইগো খুব বেশি? হতাশা বা দুঃখ এলে তা মানতে পারেন না? তাকে রাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন?

(গ) জীবনে যা ঘটছে তাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন না?

(ঘ) সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রাগ হয়ে যায়?

(১০) এই চারটি প্রশ্নের মধ্যে লুকনো আছে রাগের কারণ৷ চাহিদা বেশি হলে তা না মিটলে রাগ হবে৷ ইগো বেশি হলে চাহিদা না মেটায় যে হতাশা বা দুঃখ হয় তা প্রকাশ করতে বা স্বীকার করতে লজ্জা হয়৷ ফলে তা চাপা পড়ে রাগের আড়ালে৷ প্রতিটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিলে হতাশা এবং দুঃখ আসার সম্ভাবনা প্রতি পদে৷ হতাশা এবং দুঃখ জমতে জমতে হয় তা রাগ হিসেবে দেখা দেয়, নয়তো ডিপ্রেশন আসে৷ সমস্যা সামনে, কী করব জানা নেই, এই অবস্থাতেও সঙ্গী হয় রাগ বা ডিপ্রেশন৷ এই সমস্যাগুলির মধ্যে কোনটা আপনার আছে ভেবে দেখুন৷ খুঁজে পেলে একটু ভাবনাচিন্তা করে তাদের সামলাতে হবে৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE