কোনও কোনও দিন বাঙালি মিষ্টির কিলো কিলো ক্যালরি নিয়ে গণ-অভিযোগ অবান্তর! বছরভর মিষ্টি নিয়ে নাক কোঁচকানো ‘জেনারেশনেক্সট’ পর্যন্ত ভাইফোঁটায় গলে ছানার পায়েস! কিংবা রাবড়ি, রসমালাই বা বেক্ড রসগোল্লাও বলা যেতে পারে।
ভাইফোঁটায় ভাই-বোনেরা তাই পাঁচেও আছেন, সাতেও আছেন! এই ক্যালরি-সচেতনতার যুগেও কারা একসঙ্গে থালায় সাত
কী পাঁচ রকম মিষ্টি খাচ্ছেন, তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সিবিআই তদন্তেরও ডাক দিতে পারে! কিন্তু ঘটনা হল, বিরস এই বঙ্গ জীবনেও ভাইফোঁটা উপলক্ষে কোনও কোনও মিষ্টি-বিপণি একযোগে পাঁচ থেকে সাত রকম মিষ্টির থালি বিক্রি করছে। ভবানীপুরের বলরাম
ময়রার উত্তরপুরুষ সুদীপ মল্লিক বলছিলেন, ‘‘ভাইফোঁটায় এখন মিষ্টির থালির জোর চাহিদা। খাজা, গজা, ভাইফোঁটা ছাপ সন্দেশ, চিত্রকূটের সঙ্গে হয়তো নোনতা পদ্ম নিমকি থাকবে। সাত রকমের আইটেম থাকলে দু-একটা নতুন মিষ্টি
ঢুকবে।’’ মিষ্টির এই থালি বা ভাইফোঁটার ডালা-সংস্কৃতিতে নেমে পড়েছে রিষড়ার ফেলু ময়রাও। পাঁচ, সাত কী এগারো রকমের মিষ্টি
সাজিয়ে দিচ্ছে তারা। বলরামে মেলামাইনের ‘আনব্রেকেব্ল’ থালায় মিষ্টির প্যাকিং হলে ফেলু ময়রায় দস্তুর মাটির বা প্লাস্টিকের থালা। সেখানকার অন্যতম কর্ণধার অমিতাভ
মোদক বলছেন, ‘‘ভাইফোঁটার ঐতিহ্যমাফিক খাজা, চিত্রকূট, লবঙ্গলতিকার সঙ্গে নলেন গুড় বা আমের মোহিনী সন্দেশ, সীতাভোগ, রাজভোগ, মালাই চমচম, ক্ষীরের প্যাটি থেকে উত্তর ভারতীয় ঘরানার পেস্তা কাজু বরফি, রাবড়ি পর্যন্ত থাকছে মিষ্টির সম্ভারে।’’
এই থালি-র আবেদনের হাত ধরেই রয়েছে দূরে থাকা ভাইবোনেদের মিষ্টি পাঠানোর দায়। ফলে ভাইফোঁটা এখন আর মোটেই দু’-এক দিনের ঝোড়ো কাউন্টার সেল নয়, দূরের ভাইবোনেদের মিষ্টি পাঠানোর কারবার চালু হয়ে যায় কালীপুজোর ক’দিন আগেই। প্রবাসীরা অনেকেই পুজোর পরে মন খারাপ নিয়ে স্বধামে ফেরেন। কয়েকটি মিষ্টির দোকান এখন, একেলে প্যাকিংয়ে আঁটোসাঁটো করে তাঁদের উড়ানে বয়ে বেড়ানোর জন্য পছন্দসই মিষ্টি বেঁধেছেঁদে দেয়। ভাইফোঁটা উপলক্ষে মিষ্টি সরবরাহের প্রস্তুতি চলতে থাকে টানা চার-পাঁচ দিন ধরে।
তবে এই বাজারেও ব্যতিক্রম রয়েছে কিছু। সিমলেপাড়ার নকুড় নন্দীর উত্তরপুরুষ পার্থ নন্দী ওরফে রাজার দাবি, ‘‘এই তো মুম্বইয়ে কয়েকশো জলভরার অর্ডার সামলে উঠলুম, কিন্তু ভাইফোঁটার সময়টা অনলাইন বিক্রিবাটায় আমরা তত আমল দিই না। এখন কাউন্টার সেল-ই আসল।’’ রাতভর মিষ্টি তদারকির পরিশ্রম চলছে। বৃহস্পতিবার বিকেলেও রাজার ক্লান্ত স্বর ঘুমে জড়ানো।
তবে কেউ থালির সম্ভার সাজিয়ে দিক বা না-ই দিক, এখনও বাঙালি ময়রার নতুন মিষ্টি নিয়ে নিরীক্ষা ভাইফোঁটার দিনটিকেই জড়িয়ে থাকে। কাঠবাদাম, কেশর-পেস্তা
যোগে ‘বাদামি’ বলে একটি সন্দেশ চালু করেছে নকুড়। সঙ্গে আমের শাঁস ভরপুর, ঠান্ডা-ঠান্ডা ম্যাঙ্গো বাটি। কে সি দাশ পেশ করছে স্ট্রবেরি ছানার পায়েস, শাহি টুকরা অনুপ্রাণিত নবশ্রী। বলরাম টেক্কা দিয়েছে মিহি পাক কফি সন্দেশ, ডাব সন্দেশ, আঞ্জির
সন্দেশ, এক ধরনের নলেন গুড়ের পুডিংয়ে। ফেলু ময়রাও হেজ়েলনাট সমৃদ্ধ নতুন সন্দেশ এনেছে। বরাবরের মতো ফর্দ মিলিয়ে ভাইফোঁটায় ১২০ রকমের সাবেক মিষ্টিও তারা নিয়ে আসছে।
একযোগে ৫০টা রসগোল্লা সাবাড় করা খাইয়েরা এ কালে উধাও। কিন্তু মিষ্টির বাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে, ভাইফোঁটার পার্বণ তারই সাক্ষী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy