নুনও কি তা হলে বিপন্মুক্ত নয়? ছবি: শাটারস্টক।
নামী ব্র্যান্ডের নুন কেনেন বাড়িতে। আর ভাবেন, ভেজালের হাত থেকে মুক্তি ঘটছে এতেই। আপনার এই ধারণার সমূলে ঘা মারছে বম্বে আইআইটি-র দুই অধ্যাপকের গবেষণা।
এখানকার ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের গবেষকরা সম্প্রতি নুন নিয়ে একটি গবেষণা চালান। ‘এনভায়রমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড পলিউশান রিসার্চ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয় তা।
দুই অধ্যাপক অমৃতাংশু শ্রীবাস্তব ও চন্দনকৃষ্ণ শেঠ জানিয়েছেন, পরীক্ষায় ব্যবহৃত নুনে ৬২৬ মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা মিলেছে। প্রতি কেজি নুনে মিলেছে ৬৩.৬৭ মাইক্রোগ্রাম (০.০৬৩ মিলিগ্রাম) মাইক্রোপ্লাস্টিক। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যদি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি দিন ৫ গ্রাম করেও নুন খান, তাতে বছরে ০.১১৭ মিলিগ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক তাঁর শরীরে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: হিমোগ্লোবিন বেশি? সতর্ক না হলে এ সব মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবেন
মাইক্রোপ্লাস্টিক আসলে প্লাস্টিকেরই ক্ষুদ্র কণা, যার ব্যাস সাধারণত ৫ মিলিমিটারের কম হয়। আমাদের ব্যবহার করা প্লাস্টিকের বেশির ভাগই গিয়ে জমা হয় সমুদ্র উপকূলে। প্লাস্টিক যেহেতু মাটিতে মেশে না, পুড়লেও তা বিষাক্ত উপাদানে পরিণত হয়, তাই পরিবেশ ও সমুদ্র দূষণের ক্ষেত্রে এই উপাদান অত্যন্ত ক্ষতিকারক। প্লাস্টিককে বিভিন্ন মারণরোগের কারণ বলেও বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। এ বার নামী ব্র্যান্ডের নুনে এই উপাদানের উপস্থিতি চমকে দিয়েছে গবেষকদেরই।
গবেষণায় পাওয়া ৬৩ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিকই মিলেছে টুকরো ছড়ানো আকারে আর ৩৭ শতাংশ পাওয়া গিয়েছে তন্তুর আকারে। শুধু তাই-ই নয়, অমৃতাংশু শ্রীবাস্তবের মতে, ‘‘ভারত নুন উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে প্রথম তিনে রয়েছে। আমাদের শিল্পক্ষেত্র ও গৃহস্থালিতে প্রতি দিনই বিপুল পরিমাণে নুনের জোগান লাগে। এই গবেষণা প্রমাণ করল আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে কী ভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো বিষ ছড়িয়ে রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শহরে শিশুদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্রোগের আশঙ্কা
বম্বে আইআইটি সূত্রে দাবি, বিজ্ঞানীদের এই ধরনের গবেষণায় খাদ্যে প্লাস্টিকের উপস্থিতির বিষয়টি উঠে আসতে শুরু করেছে। আমাদের সমুদ্রে কী ভাবে যে কী কী জিনিস ফেলা হয়, কত রকম ভাবে যে সমুদ্রকে নিয়ত দূষিত করে চলেছি আমরা, সে সবের কোনও যাচাই-ই হয় না। তাই সহজেই বিষ মিশে যায় সমুদ্রের জলে।
তবে এই প্লাস্টিকের কণাগুলি সার্বিক ভাবে শরীরের পক্ষে কতখানি ক্ষতিকারক তা নিয়ে কোনও তথ্য এই গবেষণাপত্রে নেই। অধ্যাপক অমৃতাংশু শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, সাধারণ উপায়ে নুন পরিশুদ্ধকরণের মাধ্যেমেই ৮৫ শতাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিককে বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু আমাদের শরীরে বাকি ১৫ শতাংশের কী প্রভাব তা নিয়ে এই গবেষণা কিছু স্পষ্ট করে না ব্যাখ্যা করলেও এ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার আশা রাখছেন বিজ্ঞানীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy