প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
কোভিডের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্লান্ত পৃথিবী। যে লড়াই নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরেও জারি থাকে বহুদিন। তবে আপনি একা নন। সেই লড়াইয়ে আপনার সঙ্গে আছে আনন্দবাজার ডিজিটাল। শুরু হল শরীরচর্চা, মনের যত্ন এবং খাওয়া-দাওয়ার নতুন গাইড ‘ভাল থাকুন’।
কোভিড সেরে যাওয়ার পরও নানা রকম শারীরিক সমস্যা থেকেই যায়। তার মধ্যে অন্যতম চুল পড়ার সমস্যা। যে কোনও বড় অসুখের পর কয়েক দিন চুল পড়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু হঠাৎ তা অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেলে মানুষ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এবং তাতে সমস্যটা আরও বেড়ে যায়। কী বলছেন ত্বকের চিকিৎসকেরা?
কেন হচ্ছে
ত্বকের ডাক্তার সন্দীপন ধর জানালেন তিনি মাসে প্রায় ৬-৭টা রোগী পান, যাঁরা এই সমস্যা নিয়ে আসছেন। তিনি বুঝিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের চুলের কোষ বা ফলিক্লগুলোর ৩টে পর্যা রয়েছে। যখন চুল সুস্থ ভাবে বাড়ে, তাকে বলা হয় অ্যানাজেন পর্যা। যখন বৃদ্ধি থেমে যায়, তাকে বলে টেলোজেন পর্যা। এবং যখন চুল পড়ার সময় হয়ে যায়, তাকে বলে ক্যাটাজেন পর্যা। সাধারণত আমাদের মাথার চুলের ৮০ শতাংশ থাকে অ্যানাজেন পর্যায়। ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ থাকে টেলোজেন পর্যায় এবং ২ থেকে ৩ শতাংশ থাকে ক্যাটাজেন পর্যায়। কিন্তু কোনও বড় অসুখ হলে এই হিসাবে গণ্ডগোল হয়ে যায়। তখন ক্যাটাজেন পর্যার সংখ্যাটা বেড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হয়ে যেতে পারে।’’
তবে এটা কোনও নতুম বিষয় নয়। কোভিডের মতো যে কোনও বড় অসুখের ক্ষেত্রেও এটা দেখা যায়। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা চিকেন পক্সের পরও চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। তবে যাঁদের কোভিড ছাড়াও আগে থেকেই অন্য কোনও সমস্যা ছিল, তাঁদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ত্বকের চিকিৎসক শুভ্র ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘পিসিওডি বা হাইপার থাইরয়েডের মতো অসুখ যাঁদের আগে থেকে রয়েছে, কোভিড হওয়ার পর আমি তাঁদের বলব, একবার কোনও ডার্মাটোলজিস্ট দেখিয়ে নিতে। তাঁদের মাথার তালুর অবস্থা কোভিড হওয়ার পর ঠিক কোন পর্যায় রয়েছে তা বোঝার জন্য ট্রাইকোস্কোপিক পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল। ’’ একই বিষয়ে জোর দিচ্ছেন সন্দীপনও। তাঁর মতে কোভিড সেরে যাওয়ার পরও তার রেশ শরীরে নানা ভাবে থেকে যায় অন্তত ৩ থেকে ৪ মাস। তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে এই সময়টা। ‘‘১ থেকে ২ মাস চুল পড়তেই পারে। আমরা এটাকে বলি টেলোজেন এফ্লুভিয়াম। যেখানে চুলের স্বাভাবিক যে বৃত্ত থাকে, তা অনেকটা অন্য রকম করে দেয়,’’ বললেন সন্দীপন।
কী উপায়
সন্দীপনের মতে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন কাউন্সিলিংয়ের। ‘‘ক্যানসার হলে মানুষ যতটা না ভেঙে পড়েন, কেমো থেরাপির পর যখন চুল পড়া শুরু হয়, তখন আরও বেশি ভেঙে পড়েন। কোনও অসুখের প্রভাব চেহারায় পড়লে, মানুষ বিব্রত হয়ে যায়। সেই স্ট্রেস থেকে আরও চুল পড়ে। তাই শুরুতেই আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্ট করি, যে এই সমস্যা ধীরে ধীরে মিটে যাবে,’’ বললেন তিনি। একই মত শুভ্ররও, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাওয়া দাওয়া ঠিক করলেই এই সমস্যা মিটে যায়। কোভিডের পর শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালশিয়াম কমে যায়। তাই আমরা কিছু মাল্টি ভিটামিন ওষুধ দিই। আর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলি।’’
সন্দীপন জানালেন, চুলের জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রোটিন, আয়রন এবং ক্যালশিয়াম। কোভিডের পর শরীরে ভিটামিন ডি যেহেতু খুব কমে যায়, তাই তিনি রোদে ঘোরাঘুরি করার (বারান্দা বা ছাদে) পরামর্শ দেন সকলকে। তা ছাড়াও মাল্টি ভিটমিন এবং প্রোবায়োটিকের কিছু ওষুধ দেন। তবে জোর দেন ব্যালেন্স্ড ডায়েটের দিকে। কম তেল-মশলা দেওয়া খাবার কোভিড সেরে যাওয়ার পরও খেতে হবে বেশ কিছুদিন। নিরামিষাশীদের রাজমা, পনির, ছানা এবং ফল বেশি করে খেতে হবে। সন্দীপন বললেন, ‘‘এর পাশাপাশি আমরা চুলের টেলোজেনিক পর্যাটা বাড়ানোর জন্য মিনোক্সিডিল লোশন দিয়ে থাকি।’’
সব শেষে মনে রাখতে হবে, সমস্যাটা সাময়িক। একটু চুলের বাড়তি যত্ন এবং ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়াতেই অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে আপনার সমস্যার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy