একপদ সলভাসন
প্রশ্ন: যোগের উপকারীতা কী?
উত্তর: অষ্ঠাঙ্গ ধাপের এক ধাপ হল যোগাসন। স্থির ভাবে সুখে অবস্থান করাকেই যোগাসন বলা হয়। শরীর ও মন— দুয়ের উপরেই যোগের প্রভাব অপরিসীম। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, সর্বোপরি নিরোগ শরীর বজায় রাখতে নিয়মিত যোগাসন করা প্রয়োজন। যোগাসনের মাধ্যমে মনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যোগাসন মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব কাটাতে সাহায্য করে। যোগাসনের মাধ্যমে রাগ, চঞ্চলতার মতো মনের বেশ কিছু অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রশ্ন: শীত এসেছে। এই সময় শিশু ও বয়স্কদের জন্য কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: শিশুদের এ সময়ে সর্দিকাশির প্রবণতা বাড়ে। প্রধানত দূষণ ও খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্য এমন হয়। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেশি হলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। ফ্রিজে রাখা খাবার বা প্রসেসড ফুড খেলে এই সময়ে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। ঠান্ডা লাগার ভয়ে বাচ্চাদের বেশি গরম পোশাক পরালে পেট গরম হতে পারে। নিয়মিত স্নান না করলে বা অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম জলে স্নান করলেও সমস্যা বাড়ে। অন্য দিকে, বয়স্কদের শীত শুরু সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে। লো-ব্যাক পেন, হাঁটুতে ব্যথা, বাতের মতো ব্যথা এই সময়ে বাড়ে। এ ছাড়াও সর্দিকাশি জনিত সমস্যা
তো আছেই।
প্রশ্ন:শীতকালে শিশুরা কী কী যোগাসন করলে সুস্থ থাকতে পারবে?
উত্তর: শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার মোকাবিলার জন্য পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের সিদ্ধাসন করা জরুরি। মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। কিছুক্ষণ এ ভাবে থাকার পরে এক্সটেনশন, অ্যাবডাকশন, অ্যাডাকশন, ফ্লেক্সন ও রোটেশন পদ্ধতিতে ঘাড় ও হাত ঘোরাতে হবে। এতে সার্ভাইক্যাল রিবস সম্প্রসারিত হয়। ফলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।
হজমের সমস্যা কমাতে পবনমুক্তাসন করা যেতে পারে। এই আসনে চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা ভাঁজ করে পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে। বাঁ পা তখন সোজা থাকবে। এর পরে একই ভাবে বাঁ পা ভাজ করে পেটে লাগতে হবে। ডান পা তখন সোজা থাকবে। শেষে জোড়া পা পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে। এ ভাবে তিন বার করতে হবে।
উত্থাপদাসনও করা যেতে পারে। এ আসনে প্রথমে ডান পা ও পরে বাঁ পা উপরের দিকে তুলে পাঁচ সেকেন্ড শুয়ে থাকতে হবে। উর্ধাঙ্গের সঙ্গে পা যেন ৪৫ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে তা লক্ষ রাখতে হবে।
করতে পারেন ভুজঙ্গাসনও। এ ক্ষেত্রে উপুড় হয়ে শুয়ে হাতের উপরে ভর দিয়ে শরীরের উর্ধ্বাঙ্গ উপরে তুলতে হবে। তা ছাড়া বজ্রাসনও করা যেতে পারে। এ আসনে পা মুড়ে মেরুদণ্ড সোজা করে পাঁচ সেকেন্ড বসে থাকতে হবে। এই আসনে শিশুদের মনঃসংযোগ এবং পড়াশোনায় একাগ্রতা বাড়ে। নিয়মিত বজ্রাসন অভ্যাস করলে শিশুদের চঞ্চলতা কমে যায়।
পবনমুক্তাসন
প্রশ্ন: শীতের সময় বয়স্কদের জন্য কী কী যোগাসন করা জরুরি?
উত্তর: চল্লিশের পর থেকেই পুরুষ, মহিলা— উভয়েরই হাঁটুতে, ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা শুরু হয়। পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ পা ঝুলিয়ে রাখলে বা ঘাড় নিচু করে কম্পিউটারে কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। যাঁরা কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের বাতের রোগে ভুগছেন শীত এলেই তাঁদের যন্ত্রণা আরও বাড়ে। হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য উত্থানপদাসন, নি-কনটাকশন, চেয়ারে বসে পা তোলা ও নামানো অর্থাৎ সিটেড লেগরাইজ বা পেলভিস ব্রিজ করা যেতে পারে। এতে থাইয়ের পেশি সঙ্কুচিত বা প্রসারিত হয়। চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে উপরের দিকে তোলাকে পেলভিস ব্রিজ বলা হয়।
কোমরের যন্ত্রণা উপশম করতে ভুজঙ্গাসনও করা যেতে পারে। উপুড় হয়ে শুয়ে একটা পা উপরে তুলে একপদ সলভাসন বা পবনমুক্তাসন করলেও ভাল ফল পাওয়া যাবে।
ঘাড়ের যন্ত্রণার জন্য আইসোমেট্রিক প্রেসার অভ্যাস করলে ফল মিলবে। দু’হাত মাথার পিছনে নিয়ে মাথাকে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করে চাপ দিতে হবে। এ ভাবে মাথাকে চার দিকে ঘুরিয়ে চাপ দিতে হবে। চিৎ হয়ে শুয়ে অর্থাৎ ভুজঙ্গাসন থেকে চিবুকে হাত দিয়ে চাপ দিলেও ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে।
প্রশ্ন: শীত মানেই ত্বক শুকিয়ে যায়। লাবণ্যও কমে যায়। এ সময় যোগাসন কী মহিলাদের কোন ভাবে উপকারে লাগতে পারে?
উত্তর: এ সময়ে সাধারণত জল কম পানের জন্য ত্বক শুকিয়ে যেতে থাকে। অনুষ্ঠান বাড়ি বা মেলায় জাঙ্কফুড বেশি খাওয়ার জন্য এ সময়ে ওজনও বাড়তে পারে। লাবণ্য বজায় রাখতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিৎ হয়ে শুয়ে দু’হাত মাথার উপর দিয়ে এনে পায়ের আঙুলে ঠেকিয়ে রানিং পশ্চিমত্তানাসন পর পর কয়েক বার করতে হবে। উপুড় হয়ে শুয়ে দু’হাত ও দু’পা উপরে উঠিয়ে রানিং নৌকাসন, চিৎ হয়ে শুয়ে দু’হাত মাথার পিছনে রেখে উর্ধ্বাঙ্গ উপরে তোলা অর্থাৎ রানিং কোণাসন এ সব ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। এতে দেহের ‘ভি’ আকৃতি বজায় থাকবে। দাঁড়িয়ে দু’হাত উপরে জড়ো করে দু’দিকে বাঁকানো অর্থাং সাইড বেন্ডিংও করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: মহিলাদের ঋতুকালীন সমস্যা দূর করার জন্য কোন যোগাসন আছে কি?
উত্তর: মাসের ওই বিশেষ দিনগুলিতে অবশ্যই যোগাসন কার্যকরী। পাঁচ সেকেন্ড ধরে উত্থানপদাসন, অর্ধসলভাসন, পবনমুক্তাসন, ভুজঙ্গাসন করা যেতে পারে। ঋতুস্রাব শুরুর আগে যাঁদের তলপেটে যন্ত্রণা হয়, দীর্ঘদিন ধরে এ সব আসন রপ্ত করলে ওষুধ না খেলেও ব্যথা সহ্যের মধ্যে থাকে। এমনকি অনিয়মিত ঋতুস্রাবও এতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়। ঋতুস্রাবের প্রথম চারদিন সকালে ও বিকালে খালি পেটে যোগাসন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: শীতে অ্যালকোহল গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। সে ক্ষেত্রে যোগাসনের মাধ্যমে নেশা নিয়ন্ত্রণে করা যায় কি?
উত্তর: পদ্মাসন, বজ্রাসন, গোমুখাসনে বসে দীর্ঘক্ষণ প্রাণায়াম ও ধ্যান করা যেতে পারে। মেরুদণ্ড সোজা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। লম্বা সময় ধরে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশ করে আবার তা বেরিয়েও যায়। এতে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। মনের ভারসাম্যও বজায় থাকে। এ ছাড়া চোখের সামনে আঙুল ধরে দু’চোখ দিয়ে আঙুলের দিকে তাকিয়ে হাত ধীরে ধীরে এগিয়ে, পিছিয়ে নিয়ে গেলে মনঃসংযোগ বৃদ্ধি পায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy