ইতালীয় বন্ধু বাড়ি এসে বলেছিল, রান্না করে খাওয়াবে। এ শহরে যে অনেকেই ভালবাসে ইতালির খাবার খেতে, তা তাঁর জানাই ছিল। কিন্তু বাজার করতে গিয়ে অবাক। এ প্রান্ত-সে প্রান্ত ঘুরে ক্লান্ত হয়ে ফিরে বলল, এখানকার লোকেরা ইতালির রান্না করেন কী করে? প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ সস্, চিজ তো পাওয়াই যায় না এখানকার কোনও দোকানে।
শেষে নিজের ব্যাগ থেকেই বার করেছিল টুকটাক জিনিসপত্র। সে সব ছোট ছোট বোতল থেকে কিছু সস্ আর হার্ব ঢেলে রান্না হয়েছিল পাস্তা। তেমন স্বাদের ইতালীয় রান্না এ শহরের বসে তার আগে খাওয়ার সুযোগ হয়নি। ফারাকটা ঠিক ভাল-মন্দের বলা চলে না। পুরোটাই যেন ছিল আলাদা। বাঙালি বাড়িতে সাধারণত যে ভাবে পাস্তা রান্না হয়, তার থেকে রান্নার পদ্ধতিও খানিক অন্য। সবটা দেখে মনে হয়েছিল, এ যেন ঠিক নানা দেশের চিনা পাড়ায় ঘুরে একই চিলি চিকেনের রকমারি স্বাদ পাওয়ার মতো। চিনা রান্না যেখানে গিয়েছে, সেখানকার জল-হাওয়াও যে মিশেছে সেই রেসিপির সঙ্গে। চিন দেশের কোনও প্রদেশে গিয়েই নাকি আসল চিনা খাবার মুখে রোচেনি অধিকাংশ বাঙালির। ইতালীয় খাবারের সঙ্গেও যেন তেমনটা না হয়, সে ব্যবস্থাই হচ্ছে। ইতিমধ্যেই যে বিশ্ব জুড়ে অতি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে ইতালির নানা প্রান্তের স্প্যাগেতি, পিৎজা। নানা জায়গার মানুষের উৎসাহে যেন হারিয়ে না যায় আসল স্বাদটা। তাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে আসল ইতালীয় ভালমন্দ খাইয়ে দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছেন সে দেশের সরকার।
যাঁদের বাড়িতে ইতালি থেকে বন্ধু এসে রান্না করে সসেজ পাস্তা বা মোৎজারেলা চিজ দিয়ে এগপ্লান্টের পারমিজিয়ানা খাওয়ায় না, তাঁদের জন্য সে দেশ থেকে উড়ে এসেছেন পাঁচ জন সেলিব্রিটি শেফ। আসল ইতালীয় রসনা নিজে হাতে তৈরি করে খাওয়াচ্ছেন তাঁরা। কথায় বলে, ইতালির খাবার না খেলে একেবারেই বোঝা যায় না সে দেশের সংস্কৃতি। কারণ, সেখানকার মানুষদের বাকি দুনিয়া চেনেই তাঁদের রান্না,
খাওয়ার চল দিয়ে। কথা প্রসঙ্গে মনে পড়ে, বহু দিন মেলামেশার পরেও এক ইতালীয় সুন্দরীর খাওয়ার পরিমাণ দেখে অবাক হয়ে এক ভারতীয় বন্ধু বলেছিল, ‘ইট লাইক অ্যান ইতালিয়ান!’ ওঁদের মতো না খেলে নাকি ওঁদেরকে বোঝাই যায় না। এ শহরে বসে অবশ্য ওঁদের খাওয়ার মেজাজটা পুরোটা বুঝে ওঠার সুযোগ সাধারণত হয় না। কিন্তু এ দেশের সঙ্গে যোগাযোগটা আরও একটু পোক্ত করে তুলতে চায় ইতালি। সে দেশের কনস্যুলেটের উদ্যোগেই তাই শুরু হয়েছে এই খাদ্য উৎসব। আগামী রবিবার পর্যন্ত সেই সব রান্না চেখে দেখা যাবে ওবেরয় গ্র্যান্ড, তাজ বেঙ্গল, আইটিসি সোনার, হায়াত রিজেন্সি এবং দ্য পার্ক-এ। সেখানেই নিজেদের রান্নায় সে দেশের সংস্কৃতিই ফুটিয়ে তুলছেন শেফরা। তাঁদের হাতে তৈরি প্যান ফ্রায়েড স্ক্যালপস্ অন গ্রিন পিজ প্যুরি, পাস্তা আল আমাত্রিচিয়ানা, তিরামিসু ক্লাসিকের সঙ্গেই শহরে হাজির যেন এক
টুকরো ইতালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy