প্রতীকী ছবি।
বোকা জোলার কাটারির জ্বরের গল্প মনে আছে? রোদ্দুরে গরম হওয়া কাটারি জলে চুবিয়ে ঠাণ্ডা করার মতোই মায়েরা জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বিপদে পড়ে। তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, জ্বর কমানোর সেরা দাওয়াই রোগীকে ঈষদোষ্ণ জলে স্নান করানো। কিন্তু এ যুগের আধুনিক বাবা মায়েরা এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নন। জ্বর হলেই দ্রুত সেরে ওঠার জন্যে তড়িঘড়ি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। অনেকে আবার জ্বর হলে ডেঙ্গির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে দৌড়ন। যদিও এ বছরে ডেঙ্গি মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল, কিন্তু এখন ডেঙ্গি জ্বরের দাপট অনেকটা কমেছে। তাই অকারণে আতঙ্কিত হবেন না। আবার অবহেলাও করবেন না। বাচ্চার জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখবেন। কিন্তু নিজেরা ডাক্তারি করে বিপদ বাড়াবেন না। ধুম জ্বরের মহৌষধ মাথায় জলপট্টি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈষদোষ্ণ জলে রোগীর শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া।
জ্বর হয় কেন
জানেন কি জ্বর কোনও রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। জীবাণুর সংক্রমণ বা অন্যান্য কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। এটাই জ্বর। বেশিরভাগ জ্বরের পিছনেই শ্বাসনালী, গলা, পেট সহ কোনও না কোনও সংক্রমণ রয়েছে। সিজন চেঞ্জের সময় বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের কারণে জ্বর হয়। এদের মধ্যে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত জীবাণুর সংক্রমণ তো রয়েছেই। তবে ইদানিং যত বাচ্চা জ্বর নিয়ে আসছে তাদের বেশিরভাগই ভাইরাল ফিভার। বাতাসবাহিত এই অসুখ হাঁচি কাশির মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী, কথা বলার সময়েও এই জীবাণুরা বাতাসে মিশে রোগ ছড়াতে পারে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি সন্দেহে প্রয়োজনীয় রক্তপরীক্ষাগুলো জেনে নিন
অন্যান্য উপসর্গ
চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছলেই জ্বর হয়েছে বলা হয়। জ্বরের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকে। যেমন বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়ে, কান্নাকাটি করে, খেতে চায় না, বমি করতে পারে ও পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। এর সঙ্গে মাথা ও গা হাত, পা ব্যথা তো করেই। ডেঙ্গি জ্বর হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে মশার কামড়ের মত ছোট ছোট র্যাশ বেরোতে পারে। নাক বা মাড়ি দিয়ে রক্তপাতের প্রবণতা থাকে। এ রকম হলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি। জ্বর ১০০ ডিগ্রিতে পৌঁছলেই বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ নির্দিষ্ট মাত্রায় দিতে হবে। অনেকে দ্রুত জ্বর কমাতে আইব্রুফেন জাতীয় ওষুধ খাইয়ে দেন। ভুলেও এই ওষুধ দেবেন না। বরং মাথা ধুয়ে দিয়ে অল্প গরম জলে গা, হাত, পা স্পঞ্জ করিয়ে দিলে ভাল হয়।
আরও পড়ুন: এ বার হাজির ডেঙ্গি এনসেফালাইটিস
বমি করলেই সাবধান
জ্বর হলে শরীরে জলের চাহিদা বেড়ে যায়। ডায়েরিয়ার মতই ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে। তাই জ্বরের সময় বাচ্চা খাবার খেতে আপত্তি করলেও বারে বারে জল, স্যুপ, শরবত জাতীয় জলীয় খাবার দেওয়া জরুরি। জ্বর হলে বাচ্চারা খাবার খেতে চায় না। জোর করে অপছন্দের খাবার খাওয়ালে বমি করে দিতে পারে। খাবার নিয়ে জোর না করলেও ভুলিয়ে ভালিয়ে জল খাওয়াতেই হবে। তবে বমি করলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। মুখে খাবার ওষুধে কাজ না হলে ইনজেকশন বা স্যালাইন দিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেরি করলে বিপদে পড়তে পারেন। এ ছাড়া জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা ঝিমিয়ে পড়লে বা জ্ঞান হারালে বাড়িতে রেখে চিকিৎসার বদলে ডাক্তারের নির্দেশ মেনে হাসপাতালে ভর্তি রাখার দরকার হতে পারে।
দরকার হলেই রক্ত পরীক্ষা
ধুম জ্বর চলছে। ওষুধে বিশেষ কাজ হচ্ছে না এ রকম অবস্থা হলে এক দিকে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত তরল খাবার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা দরকার। ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার ভয়ে অনেক বাবা মা নিজেরাই জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড টেস্ট করান নিজেদের ইচ্ছে মতো। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জ্বরের তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।
ফোন করে অ্যান্টিবায়োটিক নয়
এখনকার বাবা মায়েরা পেশার কারণে ব্যস্ত থাকেন। তাই অনেক সময় বাচ্চার জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় পান না। অনেকেই প্যারাসিটামল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত জ্বর কমাতে আগের বারের জ্বরে ব্যবহার করা অয়ান্টিবায়োটিক নিজেরাই দোকান থেকে কিনে খাইয়ে দেন। অনেকে চিকিৎসককে ফোন করে আগের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। জেনে রাখুন ভাইরাল জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই। জ্বরের সঙ্গে অন্য কোনও সংক্রমণ হলে তার জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে খাইয়ে বিপদে পড়বেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy