Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফলে ক্ষতিকর পালিশ, কমতে পারে প্রজননও

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সুজয় ঘোষ এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘ চার বছরের গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

সব চকচকে জিনিস সোনা নয়। তেমনই সব চকচকে ফল ভাল নয়। বরং বহু ক্ষেত্রে তাতে এমনই রাসায়নিক থাকে যার জেরে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। এমনকি স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনই তথ্য সামনে আনলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সুজয় ঘোষ এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘ চার বছরের গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। ফলের পচন রোধে এবং ফলকে আকর্ষণীয় করার জন্য ড্যামিনোজাইড অথবা অ্যালার নামক যে রাসায়নিক মেশানো হয়, তা মানব শরীরে ঢুকলে প্রজনন ক্ষমতা কমে এবং স্নায়ুর মৃত্যু ঘটতে পারে। ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে যখন আতঙ্কিত মানুষ মাংস থেকে মুখ সরিয়ে ফলের দিকে ঝুঁকছেন, ঠিক তখনই এমন তথ্যে মাথায় হাত ওঠার মতো অবস্থা তাঁদের।

চার বছর আগে সুজয়বাবু ও তাঁর সহযোগী গবেষক ছাত্রী সোহিনী সিংহরায়-সহ আরও কয়েক জন ওই রাসায়নিকের কুপ্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গত অক্টোবরে গবেষণা শেষ হয়। সম্প্রতি ইউরোপের ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি টক্সিকোলজি’ জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। সুজয়বাবু জানান, গবেষণায় বেছে নেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত ফলের মাছি ড্রোসোফিলাকে। কারণ এই মাছির সঙ্গে মানুষের ৭৫ শতাংশ জিনগত সাদৃশ্য রয়েছে। ড্রোসোফিলার উপরে এই রাসায়নিক প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, তাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। শূককীটগুলিও বেশি দিন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারছে না। একই ভাবে দ্রুত তাদের স্নায়ুর মৃত্যু ঘটছে। মানুষের সঙ্গে এই মাছির জিনগত মিল থেকে পরিষ্কার যে এ ভাবেই কুপ্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরেও।

সুজয়বাবুর মতে, অবিলম্বে এই রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ফলের উপরের খোসা অবশ্যই ফেলে খাওয়া উচিত। যদিও অনেক সময়েই ত্বক ভেদ করে
ফলের ভিতরেও ঢুকে যায় এই রাসায়নিক। তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ করে আপেল, তরমুজের মতো ফল এই রাসায়নিকের ব্যবহারে
চকচকে হয়। এর ফলে সহজে ক্রেতাদের নজর টানা যায়। তা ছাড়া আম, আঙুর, লেবুর দ্রুত পেকে যাওয়া আটকাতেও এই রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয়।’’ কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, শরীরে এই রাসায়নিকের প্রভাবে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাঁর মতে, বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে সরকারি তরফেও এর ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

যদিও ক্যালকাটা ফ্রুট মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক শাহিদ আহমেদ খানের দাবি, ‘‘আমাদের কাছে আসা টাটকা ফলই খুচরো বিক্রেতাদের কাছে দেওয়া হয়। আমরা কোনও রাসায়নিক মেশাই না। পরে বাজারে কী হয়, তা বলতে পারব না’’। কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক, এমন কোনও জিনিস মেনে নেওয়া হবে না। যাঁরা এ সবে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fruits glossiness reproduction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE