Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নাছোড় সোরিয়াসিস

সোরিয়াসিস কোনও সংক্রামক রোগ নয়। ত্বকের প্রদাহজনিত অন্য চর্মরোগের মতোই এটি। এটি হলে কখনও খুঁটবেন না বা উপরের ছাল তুলতে যাবেন না। লিখেছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ফাল্গুনী নাগ।এই রোগে ত্বকের উপরের স্তর থেকে খোসা ওঠার মতো উঠে যায়। এটি কনুই, হাঁটু বা দেহের অন্য জায়গাতেও হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় যে হাঁটুতে, কনুইতে, মাথায়, হাতের মধ্যে, হাতের তালুতে, পায়ের তালুতে কিছু রিং-য়ের মতো লালচে বা কালচে দাগ তৈরি হয়।

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

সোরিয়াসিস ত্বকের একটি জটিল রোগ। এ রোগের মূল কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে বংশের কারও থাকলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শারীরিক আঘাত, বার-বার গলায় সংক্রমণ, মানসিক দুশ্চিন্তা ইত্যাদি কারণে সোরিয়াসিস বাড়তে পারে।

এই রোগে ত্বকের উপরের স্তর থেকে খোসা ওঠার মতো উঠে যায়। এটি কনুই, হাঁটু বা দেহের অন্য জায়গাতেও হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় যে হাঁটুতে, কনুইতে, মাথায়, হাতের মধ্যে, হাতের তালুতে, পায়ের তালুতে কিছু রিং-য়ের মতো লালচে বা কালচে দাগ তৈরি হয়। সেখান থেকে মাছের আঁশের মতো চামড়া উঠতে থাকে। হাত-পায়ের আঙুলগুলি শক্ত হয়ে যেতে থাকে। মাথার চামড়াতেও হতে পারে। সোরিয়াসিস-আক্রান্ত ত্বকে একটা আস্তরণের মতো তৈরি হয়ে যায়। চুলকানি হয়, লাল হয়ে যায়, ঘায়ের মতো হয় এবং রোগী অত্যন্ত অস্বস্তিতে থাকেন। সোরিয়াসিস যদি দেহের আরও অংশে ছড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগীর কাজকর্ম করতে অসুবিধা হয়। শীতকালে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।

মানসিক অবসাদ, টেনশন, মানসিক চাপে সোরিয়াসিস বাড়তে পারে। ফলে রোগের জন্য বেশি দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। তাতে রোগ আরও জটিল আকার নিতে পারে। সুগার, রক্তচাপের মতো এই রোগও নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি। মদ্যপান, ধূমপানের অভ্যাস এই রোগ বাড়িয়ে দেয়। এ গুলো থেকে দূরে থাকাটা দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার, নারকেল তেল ইত্যাদি চামড়ার ঘায়ের উপরে লাগালে উপকার পাওয়া যেতে পারে। স্নানের পরে লাগানোই শ্রেয়। কারণ সেই সময়ে ত্বক কিছুটা নরম থাকে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব রোগ বাড়িয়ে দেয়। রোগ কিছুটা কমে যাওয়ার পরেও নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এটা বিপজ্জনক। এতে রোগী বিপদ ডেকে আনেন।

এই রোগে চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় মলিন রুপোলি আঁশযুক্ত ছোপ দেখা যায় যা উঠে যাওয়ার পর লালচে আভা বা সামান্য রক্তক্ষরণ হতে পারে। তার পর চামড়া মাছের আঁশের মতো সাদা-সাদা হয়ে উঠে যায়। আমাদের দেহে কোষ চামড়ার নিচের স্তর থেকে উঠে আসতে ২৮ দিন সময় নেয়। কিন্তু সোরিয়াসিসের রোগীদের এ কোষ ৪-৫ দিনে উপরে উঠে আসে। ফলে কোষ পরিপূর্ণতা লাভ করে না এবং সিলভারি স্কেল তৈরি করে। সোরিয়াসিসের ক্ষতস্থানগুলো শুকনো, গোলাকৃতি বা এবড়োখেবড়ো হয়, ক্ষতস্থানে চুলকানি বা জ্বালাপোড়াও থাকতে পারে। তবে রোগীর ত্বক থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় না। নখ দিয়ে চুলকালে ওই স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয় এবং সোরিয়াসিস বেড়ে যায়। এ রোগীদের কোথাও কেটে গেলে ওই স্থানে নতুন করে সোরিয়াসিস হতে পারে। সোরিয়াসিস ছোঁয়াচে নয়।

জটিল সোরিয়াসিসে গাঁটে ব্যথা, পুঁজ ও ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। এ রোগ সেরে যাওয়ার পর বারবার হতে পারে। সোরিয়াসিসে ফটোথেরাপি-সহ অনেক আধুনিক চিকিত্‍সা প্রচলিত আছে। এতে ত্বক ফটোসেনসেটাইজড করে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দেয়া হয়। এই রোগের চিকিত্‍সার নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা চলছে।

এই রোগে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার, কম তেল-ঘি-ভাজাভুজি খেতে হয়। ঘন ডালের পরিবর্তে পাতলা ডাল খান। ফ্রাইড রাইসের পরিবর্তে সিদ্ধ ভাত খান। পরোটা, লুচি, পুরির বদলে রুটি, পাঁউরুটি খান। তাজা ফল খান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disease Skin Disease Psoriasis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE