Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
superstition

আজ ১৩, আজ শুক্রবার, এই কুসংস্কার কত দিন মানবেন?

ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ নিয়ে বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে বহু কুসংস্কার। কী সে সব? বিজ্ঞানই বা কী বলছে?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

জুলাই মাসের ক্যালেন্ডার ভাল করে লক্ষ করেছেন? মাসের দ্বিতীয় শুক্রবারে এসেই কারও কারওআটকে যাচ্ছে চোখ। বুঝতে পারছেন তো কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছি? ঠিকই ধরেছেন। ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’। ক্রিশ্চানিটিতে এই দিনকে ঘোর ‘অমঙ্গলের দিন’ হিসাবে ধরা হয়। আর অতীতে পশ্চিমী উপনিবেশের শক্ত ঘাঁটি ভারতেও এ সব বিশ্বাস আছড়ে পড়েছে যুগের সঙ্গেই। কিন্তু কেন?

এই ‘কেন’-র উত্তর খুঁড়লে উঠে আসে অনেকগুলো অন্ধবিশ্বাস। এই ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ নিয়ে বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে বহু কুসংস্কার। কোথা থেকে এসেছে এ সব তা কেউ জানে না। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও পাওয়া যায় না। তবু চিরাচরিত বিশ্বাসের জোরেই চলে আসছে এই ভাবনাগুলি।

কুসংস্কারের শুরুটা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত ‘দ্য লাস্ট সাপার’ ছবিটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই। সেখানে খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসে রয়েছেন ১৩ জন অতিথি। ১৩ নম্বর অতিথি এখানে জুডা। পরে ইনিই জিশুখ্রিস্টের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। জিশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধও করা হয় শুক্রবারে। এর পর থেকেই বিশ্বাস ‘১৩’ সংখ্যা এবং শুক্রবার যখন একসঙ্গে আসে, তখনই ঘটে অমঙ্গল। এ ছাড়াও ‘১৩’ নিয়ে তৈরি নানা কুসংস্কারের বীজ ছড়িয়ে আছে পশ্চিমী দুনিয়ার আরও কিছু পুরাণগল্পে।

‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর হাত ধরেই হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে অশুভ ১৩-র ধারণা। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

আরও পড়ুন: ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট, মৃত্যু সর্পদষ্ট ছাত্রীর

যেমন, জার্মানির নর্স পুরাণ অনুযায়ী, এক ডিনার পার্টি বানচাল করে দেন প্রতারণার দেবতা লকি। তাঁর আগমনেই আয়োজনটি ভেস্তে যায় এবং পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। পার্টিতে তিনি ছিলেন ‘১৩তম’ অতিথি। আর অনুষ্ঠানটিও ছিল সেই শুক্রবারই। এ সব পুরাণ ছাড়াও ‘১৩’ নম্বর ও শুক্রবার নিয়ে কিছু স্থানীয় বিশ্বাসও এই কু-সংস্কারের ভাবনাকে উসকে দিয়েছে। পশ্চিমী এই নম্বরটি সব সময়ই যেন খাপছাড়া। অলিম্পাসের দেবতার সংখ্যা ছিল ১২ জন। ঘড়িতে ১২ ঘণ্টার হিসেব দেওয়া আছে। এক বছরেও ১২ মাস আছে। জোডিয়াকে রয়েছে ১২টি প্রতীক। তাই ১৩ সংখ্যাটিকে ‘অশুভ’ মনে করে পশ্চিমী দুনিয়া।পশ্চিমে পুরনো সময়ের রীতি অনুযায়ী, ফাঁসির মঞ্চে উঠতেও ১৩ পা এগোতে হয়।

প্রাচীন ব্যাবিলনের ‘কোড অব হামুরাবি’ হল বিশেষ কিছু আইন। সেই আইনের ধারার ১৩তমটি পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ফ্রান্সের হোলি গ্রেল রক্ষাকারী নাইটস টেম্পলারদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। আর তা শুরু হয় ১৩০৭ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে। সাধারণত প্রতি শুক্রবার এই গণমৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।এ সব নানা কারণের উপর ভর করেই মানুষের মনে এই ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’ নিয়ে কু-সংস্কার বাসা বাঁধে।

আরও পড়ুন: গোঁড়ামির বিপদ আরও একবার দেখা দিল

শুধু ‘অশুভ’ মেনে চলাই নয়, এই দিনটিতে অনেক বিধি-নিষেধও মেনে চলেন অনেকেই। বিশেষত, পশ্চিম দুনিয়ার মানুষ।

এই দিন ঘরের ভিতর ছাতা খোলা মানা। কথিত আছে এই দিন যে ছাতা খোলে তার ওপর বা যেই বাড়িতে ছাতা খোলা সেই বাড়ির সদস্যদের দুর্ভাগ্য নেমে আসে। এই সংস্কারের সূচনা কীভাবে তা যদিও জানা যায়নি। চাঁদ-তারাকে সাক্ষী রেখে অনেকেই নানা মনের কথা বলেন। এমন দিনে নাকি চাঁদকে বিশ্বাস করে কোনও মনের কথা বলতেই নেই। এ দিন চাঁদের কাছে কিছু চাইলে তা পূরণ তো হয়ই না, বরং দুর্ভাগ্য নেমে আসে। এমনিতে হাই তোলার সময় মুখে ঢেকে নেওয়া ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে। তবে পশিচিমী কু-সংস্কার, এ দিন নাকি মুখ না ঢেকে বড় হাঁ করে হাই তুললে ভূতে ধরে! জিশুখ্রিস্টের ‘দ্য লাস্ট সাপার’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সঙ্গে ১৩ জন খেতে বসেছেন টেবিলে। শুক্রবার ১৩ তারিখ পড়লে তাই টেবিলে এক সঙ্গে ১৩ জন খেতে বসলে অমঙ্গল হয়। যদি আপনার ১৩ তারিখ, শুক্রবার কারও সঙ্গে ডেটে যাওয়ার কথা থাকে তবে ডেট ক্যানসেল করে থাকেন ইউরোপীয়রা। তাদের বিশ্বাস, এদিন কোনও সম্পর্কের সূচনা ভাল নয়।

তবে এই সব কু-সংস্কারকে মোটেই আমল দিচ্ছেন না বিজ্ঞান সচেতন মানুষ ও গবেষকরা। পশ্চিমী এই বিশ্বাসগুলিকে ভারতীয় জীবনে ঢুকে পড়ার নেপথ্যে বিশ্বায়নকেই দায়ী করছেন তাঁরা। বিজ্ঞানলেখক মানসপ্রতিম দাসের মতে, ‘‘ফ্রাইডে থার্টিন্থ কখনওই ভারতীয় গ্রামীণ কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানুষজনের ভাবনার বিষয় নয়, বরং আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, যত শহুরে সভ্যতাকে আঁকড়ে ধরছি, ততই এই কুসংস্কার গ্রাস করছে আমাদের। এ সব অপবিশ্বাস আসলে ‘ক্লাসিক’ স্তরে পৌঁছে দিয়েছি আমরাই। জীবনে যত অনিশ্চয়তা বেড়েছে তত আঁকড়ে ধরেছি অপব্যাখ্যা।’’

আরও পড়ুন: তুরস্কে রয়েছেন? রাতের বেলা চিউয়িং গাম চিবোবেন না!

পশ্চিমী দুনিয়ায় কুসংস্কারের আর এক প্রতীক কালো বিড়াল। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

তা হলে বিজ্ঞান কী বলছে?

মানসবাবুর মতে, বিজ্ঞান বলছে একটাই সহজ কথা। যে কোনও দিন, যে কোনও তারিখ, সংখ্যা— এগুলো অঙ্কের বিষয়। এর সঙ্গে কোনও ঘটনার পরম্পরা খুঁজে পাওয়া অনর্থক। শুক্রবার ও ১৩ তারিখ অনেক ভাল বিষয়ও পৃথিবীতে ঘটেছে বা আরও ঘটবে। আবার শুক্রবার বা ১৩ সংখ্যাকে বাদ দিয়েও নানা খারাপ ঘটনা ঘটে চলেছে দুনিয়ায়। এ সবের সঙ্গে কোনও সংস্কারের মিল খুঁজে পাওয়া নেহাতই কল্পনাবিলাস। বরং, যে মানুষ এ সব মানতে শুরু করেছেন, তাঁর এই মান্যতা কিন্তু কেবল ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’-এ আটকে থাকবে না। কুসংস্কারে বিশ্বাস করতে করতে এক দিন ছোটখাটো সবেতেই তিনি সংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন— যা কখনও কাম্য নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE