Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জেদ বাড়ছে? চূড়ান্ত অশান্তি? এরও চিকিৎসা রয়েছে

অবিবেচকের মতো অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে মরণপণ জেদ ধরলে আপনি দুর্যোধন৷ আর উল্টোটা হলে আপনি সাফল্যের চূড়ায়৷

মানসিক সমস্যা কাটানোর দাওয়াই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্দরেই। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

মানসিক সমস্যা কাটানোর দাওয়াই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্দরেই। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ১৮:৫৭
Share: Save:

ভীষ্মের ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা৷ বিখ্যাত, সফল মানুষদের সবার থাকে৷ উচ্চাকাঙ্খা থাকবে আর জেদ থাকবে না তা তো হয় না৷ কাজেই পৃথিবী উল্টে গেলেও তাঁরা যা করার করে ছাড়েন৷ অন্য দিকে, দুর্যোধনের ছিল গোঁয়ার্তুমি৷ পাণ্ডবদের ধ্বংস করার তাঁর দুর্মর জেদ চলে গিয়েছিল বাতিক বা অবসেশনের পর্যায়ে৷ নানা ঘটনায় তা বাড়তে বাড়তে এমন হয় যে তাঁদের শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি নেই, যাকে বলে কমপালশন৷ তার ফলেই অত বড় যুদ্ধ!

ছোটখাটো পরিসরে আমরাও মাঝেমাঝে দুর্যোধন হয়ে যাই৷ হয়তো একটা জিনিস, না পেলে এমন কোনও ক্ষতি নেই, কিন্তু হঠাৎ জেগে গেল জেদ, পেতেই হবে৷ পাওয়ার পথে যত বাধা আসছে তত বাড়ছে জেদ৷ চূড়ান্ত অশান্তি মনে৷

‘অশান্তি জাগা মানে আপনি অবসেস্ড হয়ে গেলেন৷ যেন তেন প্রকারে কাজ হাসিল করতে লেগে গেলেন৷ ভাল–মন্দ বোধ রইল না৷ অর্থাৎ অবসেশন পৌঁছে গেল কমপালশনে৷ এর পর প্রবল ঝগড়া–লড়াই৷ যত পেতে দেরি হচ্ছে, অশান্তি বাড়ছে৷ এই পর্যায়ে মানুষ যা–তা করে ফেলতে পারেন৷’ জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল সাহা৷

আরও পড়ুন: দুর্দান্ত ফিচারের দু’টি বাইক আনল সুজুকি, দাম জেনে নিন

অর্থাৎ ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা আর দুর্যোধনের জেদের মধ্যে ফারাক ভাল–মন্দের৷ বিবেচনা–অবিবেচনার৷ অবিবেচকের মতো অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে মরণপণ জেদ ধরলে আপনি দুর্যোধন৷ আর উল্টোটা হলে আপনি সাফল্যের চূড়ায়৷

চিকিৎসায় মিলবে সঠিক পথ। ছবি: শাটারস্টক।

কেন জেদ, কেনই বা বাতিক

জেদের কারণ কিছুটা লুকিয়ে থাকে আমাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশে, কিছুটা স্বভাবে৷ ছেলেবেলার কথা ভাবুন৷ আবদার করে হয়তো কিছু পাননি৷ কিন্তু যেই ঘ্যানঘ্যান করে প্রাণ অতিষ্ঠ করেছেন, বাবা–মা এনে দিয়েছেন৷ ফলে মাথায় ঢুকে গেছে কিছু পেতে গেলে জেদ ধরতে হয়৷ কিছু বাড়িতে জেদের ছড়াছড়ি থাকে৷ সবাই খুঁতখুঁতে, নিয়মানুবর্তী, মিথ্যে–টিথ্যে বিশেষ বলেন না, স্বভাবগত ভাবেই এদের জেদ বেশি৷ এই পরিবেশে বড় হলে এটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয়৷ বাতিকগ্রস্ততা বা অবসেসিভনেস ব্যক্তিত্বের সমস্যা৷ অল্পবিস্তর অনেকেরই থাকে৷ এরই বাড়াবাড়ি পর্যায় হল অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসর্ডার৷ এই সব মানুষদের জেদের কোনও সীমা–পরিসীমা থাকে না৷ অতিরিক্ত আবেগ হলেও এক সমস্যা৷ যুক্তিহীন জেদ ধরে, তাতেই লেগে থাকেন এঁরা৷ এরই চূড়ান্ত পর্যায়ের নাম ইমপাল্স কন্ড্রোল ডিজর্ডার৷ জেদ বজায় রাখতে এঁরা মারামারি, খুনোখুনি পর্যন্ত করতে পারেন৷

সমাধান

১) চূড়ান্ত জেদ কমানো মুখের কথা নয়৷ মারাত্মক ক্ষতি হলে অনেক সময় চোখ খোলে৷ অকারণ জেদ করে কোনও লাভ হচ্ছে না এটা বুঝতে পারলে পরিবর্তন আসে৷ তবে তার আগে বহু কিছুই হারিয়ে যায় জীবন থেকে৷

২) কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি বা সিবিটি করে সঠিক জীবনবোধ জাগানো যায়৷ তার হাত ধরে অনেক অগুণের পাশাপাশি জেদও কমে৷ কিন্তু এই ধরনের মানুষ সচরাচর থেরাপির জন্য আসেন না৷ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা কাজের জায়গায় ক্রমাগত ক্ষতি হতে থাকলে, তার কারণ খুঁজতে আসেন অনেক সময়৷ কখনও বাড়ির লোক ধরে বেঁধে আনেন৷

৩) সিবিটি–তে অতীতের ঘটনা তুলে আলোচনা করে দেখানো হয় যে কোন পরিস্থিতিতে কী আবেগ জেগেছিল বলে তিনি জেদ ধরে কী কী করেছেন এবং তাতে কী ক্ষতি হয়েছে৷ ধরুন কিছু একটা পাওয়ার লোভে অসম লড়াইয়ে নেমেছেন৷ ইচ্ছে এত তীব্র যে অন্য কাজ ভুলে এর পিছনে পড়েছেন৷ ফলে আসল কাজের ক্ষতি হয়েছে৷ চাহিদা না মেটায় হয়তো ঝগড়া করেছেন৷ সম্মান নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হয়েছে সম্পর্ক, অশান্তি পেয়েছেন৷ তারচেয়ে জেদটা যদি না ধরতেন আরও কি বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?

৪) কয়েকটা সিটিংয়ের পর অন্যায্য জেদ থেকে যে আসলে ক্ষতিই হয় সে বোধ জাগে৷ তখন ধীরে ধীরে যোগা, ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন করে মন শান্ত করা যায়৷ সঙ্গে আছে অন্য ভাল লাগার কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা৷ যাকে বলে ডাইভারশন৷ অর্থাৎ দীর্ঘ প্রস্তুতির পর্ব৷ ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকতে পারলে ভাল কাজ হয়৷

৫) ইমপাল্স কন্ড্রোল ডিজর্ডারে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ দিতে হয়৷

আরও পড়ুন: হতাশ হয়ে পড়েন সহজেই? বিনা ওষুধে সুস্থ হয়ে উঠুন এ ভাবে

জেদ ঠেকাতে

৩–৫ বছর পর্যন্ত বাচ্চারা একটু জেদ করে৷ এতে চিন্তার কিছু নেই৷ তার পরেও যদি করতে থাকে, সাবধান হতে হবে৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷ কখনও তার জেদের কাছে হার স্বীকার করবেন না৷ তবে সেটা যেন আবার আপনার জেদের বহিঃপ্রকাশ না হয়ে যায়৷ তাতে উল্টো কাজ হবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE