Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সামনেই পুজো, মেদ ঝরিয়ে ফিট হয়ে নিন

সামনেই পুজো। মেদ ঝরিয়ে ফিট হতে হাতে বেশি সময় নেই। কিন্তু ফিট হওয়ার কোনও জাদুমন্ত্র নেই। নিয়মিত ব্যায়াম আর পরিমিত আহারের মাধ্যমে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব। জানাচ্ছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সুশান্ত মুখোপাধ্যায়সামনেই পুজো। মেদ ঝরিয়ে ফিট হতে হাতে বেশি সময় নেই। কিন্তু ফিট হওয়ার কোনও জাদুমন্ত্র নেই। নিয়মিত ব্যায়াম আর পরিমিত আহারের মাধ্যমে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব। জানাচ্ছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সুশান্ত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

প্রশ্ন: সামনেই পুজো। তার আগে ফিট হতে কী করতে হবে?

উত্তর: হাঁটা, হাঁটা আর হাঁটা। মেদ ঝড়ানো বা ফিট থাকার একমাত্র উপায় হল হাঁটা। আগে হাঁটুন, তার পরে দৌড়ন। এর পরে হালকা স্ট্রেচিং, সিটআপ, টুইস্টার, লেগ রাইজিং-সহ ফ্রি হ্যান্ড এক্সাসাইজ করা উচিত। স্কিপিং করা যেতে পারে। স্কিপিং করলে মেদ খুব তাড়াতাড়ি ঝড়ে যায়।

প্রশ্ন: কী ভাবে, কত বার, কোন সময়ে ব্যায়ামগুলি করতে হবে?

উত্তর: প্রথমে ১৫ মিনিট জোড়ে জোড়ে হাঁটুন। পরে পাঁচ মিনিটে যত বার পারবেন স্ট্রেচিং করুন।

প্রশ্ন: আর কী ব্যায়াম করতে হবে?

সিটআপ: সমতল জায়গায় শুয়ে পা দু’টি ভাঁজ করে নিন। হাত থাকবে হাঁটু বরাবর সোজা, সামনের দিকে। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা সামনের দিকে উঠে বসুন। পা ভাঁজ অবস্থায় থাকবে। আবার আগের অবস্থায় শুয়ে পড়ুন। এ ভাবে হবে এক বার। এক একটি সেটে ১০ থেকে ১২ বার করুন। প্রথম এক বা দুই সেট তার পরে তিনটি বা চারটি সেট করতে পারেন। তবে যে ব্যায়াম করবেন তা কিন্তু শরীরকে কষ্ট দিয়ে নয়। যতগুলি পারবেন করবেন। পরে আসতে আসতে বাড়াবেন।

লেগ রাইজিং: সমতল জায়গায় চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দু’টি কোমরের কাছে রাখতে হবে। এর পরে দু’ পা ৯০ ডিগ্রি কোণে তুলে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। আসতে আসতে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। এ ভাবে চারটি করে সেট করতে হবে।

স্ট্রেচিং: এটি যে কোনও সময়ে করতে পারেন। ঘাড়, হাত, হাঁটু, কোমর ইত্যাদির স্ট্রেচিং করা হয়। এর ফলে মূলত মাংসপেশীতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে।

প্রশ্ন: ব্যায়াম করার কোনও নির্দিষ্ট সময় আছে কি?

উত্তর: সাধারণত শরীরচর্চা সকাল ৭টা থেকে ৯টা বা সন্ধ্যায় ৫টা থেকে ৯টা পর্যন্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া অন্য সময় রোদ থাকে। রোদের মধ্যে কখনই ব্যায়াম করা উচিত না। তবে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্ট্রেচিং আপনি অন্য সময়েও করতে পারেন।

প্রশ্ন: সামনেই পুজো, তাই ভুঁড়ি কমাতে অনেকে আগ্রহী। ভুঁড়ি কমাতে গেলে কী করতে হবে?

উত্তর: দেখেছি সারা বছর মানুষের ভুঁড়ি, ওজন নিয়ে খেয়াল না থাকলেও পুজো এলেই এই দু’টি জিনিস নিয়ে মানুষের ঘুম উড়ে যায়। ব্যাপারটি বেশ মজার। যাই হোক ভুঁড়ি কমাতে গেলে প্রথমেই নজর দিতে হবে হাঁটাতে। সারা দিনে নিয়ম করে হাঁটা অভ্যাস করতে হবে। তার পরে লেগ রাইজিং আর সিটআপ। তার সঙ্গে স্কিপিং। নিয়মিত এই ব্যায়ামের সঙ্গে অবশ্যই নজর দিতে হবে খাওয়াদাওয়াতে। খাওয়াদাওয়া যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন তা হলে ওজন বা ভুঁড়ি কমবে না।

ব্যাক চেন পুলিং

• ১২ বার করে ৩ সেট করতে হবে।
• পিঠের মাংসপেশী ঠিক করে। কাঁধের পেশী শক্ত করে।
• হাতেরও জোড় বাড়ায়।

প্রশ্ন: ঠিক এই জায়গাতেই আসছিলাম। ভুঁড়ি কমাতে গেলে কী রকম খাওয়াদাওয়া করতে হবে?

উত্তর: প্রথম কথা ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে। খাবার থেকে তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। শর্করা জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। মিষ্টি ছেড়ে করতে হবে।

প্রশ্ন: ডায়েট কী রকম হবে?

উত্তর: আমাদের দেশে ডায়েট চার্ট ঠিক থাকে না বলেই অনেকে ভুঁড়ি বা ওজনের সমস্যায় ভোগেন। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী দিনের সব থেকে ভারী খাওয়া দরকার সকালে। আর সব থেকে কম খাওয়া দরকার রাতে। আমরা করি ঠিক তার উল্টো। তাই সমস্যা বাড়ে। যদি ওজন ঠিক রাখতে হয়, তা হলে সকালে ভারী খাবার খান। চা খেলে তা অবশ্যই লিকার। দুধ চা একদম না। জলখাবারে ফল খেতে পারেন। দুপুরের একটার মধ্যে ভাত, ডাল, মাছ, মুরগি অল্প পরিমাণে খেতে হবে। বিকেলে মুড়ি, বিস্কুট সঙ্গে চা। রাতে অবশ্যই রুটি। সঙ্গে তরকারি। সঙ্গে সারাদিন প্রচুর পরিমাণে জল খান। যদি ডিম খান তা হলে অবশ্যই কুসুম বাদ দিয়ে দিন।

প্রশ্ন: দৈনন্দিন এই খাদ্যতালিকার বাইরে কি সব বারণ?

উত্তর’ যদি ওজন বা ভুঁড়ি কমাতে চান তা হলে এর বাইরে যাওয়া যাবে না। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, নোনতা জাতীয় খাবার, কোল্ডড্রিঙ্কস এগুলি কোনও ভাবেই খাওয়া যাবে না।

চিনিং

• ১০ বার করে তিন সেট করতে হবে।
• থুতনি ও কাঁধ ঠিক করে। পিঠের পেশী মজবুত করে।
• শরীরের গঠন সুন্দর করে এই ব্যায়াম।

প্রশ্ন: কী কী খাবারে চর্বি হয়?

উত্তর: সব তেল জাতীয় খাবারেই ফ্যাট হয়। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুডেও প্রচুর ফ্যাট হয়। তা ছাড়াও ঘি, মাখন জাতীয় খাবারেও ফ্যাট হয়।

প্রশ্ন: কোন কোন খাবারে চর্বি কমে যায়?

উত্তর: ফল খেলে ফ্যাট কমে যায়। লেবু, আপেল ইত্যাদিতে ফ্যাট কমায়। খাবার শেষ পাতে টক দই রাখলে ফ্যাট ঝড়াতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: পুজো সামনেই। এখন ভুঁড়ি কমাতে কী কী খাওয়া যেতে পারে?

উত্তর: এক মাসে ভুঁড়ি কমানোটা খুব কঠিন। তবে এই এক মাস লেবুর জল খেলে পেটের চর্বির ক্ষেত্রে ব্যাপক কাজ হতে পারে। আর একটা ফল খেতে পারেন। সেটা হল পেয়ারা। পেয়ারা খেলে মেদ ঝড়ে যায়। কম পয়সায় পুষ্টিকর খাবার হিসেবে মেদ ঝড়াতে পেয়ারার জুড়ি মেলা ভার।

প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে কী নিয়ম মেনে চলতে হবে?

উত্তর: সকালে খালি পেটে হালকা গরম জলে আধখানা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে সেটা খেতে হবে। এর কিছুক্ষণ পরে ব্রেকফাস্ট করতে হবে। এই পদ্ধতি মেনে চললে ভাল রকম কাজ হবে।

প্রশ্ন: শুধুমাত্র বেশি খাওয়ার জন্যই কি ওজন বাড়ে?

উত্তর: ওজন বাড়ার জন্য দায়ী ক্যালোরি না পোড়ানো। খাওয়ার পরে সারাদিন যদি পরিশ্রম করা যায়, তা হলে ওজন বাড়বে না। পরিশ্রম বলতে শারীরিক পরিশ্রম। যদি অফিসে বসে কাজ করা হয়, সে ক্ষেত্রে দিনে এক বার সময় করে ব্যায়াম করুণ। দিনে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমনোর প্রয়োজন। তবে ওজন বাড়া কিছুটা বংশানুক্রমিকও বটে।

প্রশ্ন: বিষয়টি কী রকম?

উত্তর: সাধারণ ভাবে ধরা হয়, ওজন বাড়ার জন্য ৬০ শতাংশ দায়ী খাওয়ায়দাওয়ার অনিয়ম। ৩০ শতাংশ দায়ী পরিশ্রম বা শরীরচর্চা না করা আর বাকি ১০ শতাংশ বংশানুক্রমিক। যদি বংশের মোটা হওয়ার লক্ষণ থাকে, তা হলে সেটা আগামী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে সতর্কতা মেনে চললে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

প্রশ্ন: এক জন মানুষের ঠিকঠাক ওজন কত হবে?

উত্তর: পাঁচ ফুট উচ্চতাকে মান্যতা ধরা হয় যদি, তা হলে বিভিন্ন বয়সের ওজন হেরফের হয়। যেমন, ৩০-৩৫ বছর বয়সের জন্য ওজন হতে হবে ৬০ কিলোগ্রাম। ৪০-৪৫ বছর বয়সের জন্য ওজন হতে হবে ৫৫ কিলোগ্রাম। ৪৫-৫৫ বছর বয়সের জন্য ওজন হতে হবে ৫৫ কিলোগ্রাম। ৬০-৭০ বছর বয়সের জন্য ওজন হতে হবে ৫২ কিলোগ্রাম।

প্রশ্ন: ওজন বেশি হলে কী কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: একটা কথা চালু আছে, ভুঁড়ি রোগের গাড়ি। অতিরিক্ত ভুঁড়ি হলে বা শরীরের ওজন বাড়লে হার্ট, লিভার, কিডনি-সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাঁটুর ব্যথায় কষ্ট পেতে পারেন। বেশি ওজন বাড়লে হাঁটাচলাতেও সমস্যা হতে পারে।

হাফ স্কোয়াট

• ১০ বার করে ৩ সেট করতে হবে।
• পায়ের ব্যায়াম। থাইয়ের মাংসপেশী ঠিক করে।
• কোমরের গঠন ঠিক করে এই ব্যায়াম।

প্রশ্ন: সামনেই তো পুজো আসছে, জিমে এসে শরীরচর্চা করার কি রকম হিড়িক লক্ষ করছেন?

উত্তর: হ্যাঁ, এটা ঠিক। এখন পুজো আসছে বলে অনেকেই ভিড় করছেন জিমে। মহিলা, পুরুষ অনেকেই আসছেন। সারা দিন সময় না পেলে অনেকে কাজ সেরে রাত ৮টার পরেও জিম করছেন।

প্রশ্ন: কোন বয়সীদের মধ্যে জিমে শরীরচর্চা করার প্রবণতা বেশি?

উত্তর: ভিড় বেশি যুবক, যুবতীদের মধ্যে। তবে ৪০ বছরের মানুষরাও জিমে আসেন।

প্রশ্ন: শিশু বা বয়স্কদের মেদ বাড়লে কী উপায় অলম্বন করতে হবে?

উত্তর: এ ক্ষেত্রে তাদের নিয়মিত মাঠে যেতে হবে। হাঁটা জারি রাখতে হবে। সঙ্গে খাওয়াদাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। তবে শিশুদের থেকেও বয়স্কদের এই ক্ষেত্রে বেশি নজর দিতে হবে।

প্রশ্ন: ওজন বাড়লে কি চিকিৎসার প্রয়োজন আছে?

উত্তর: অস্বাভাবিক ভাবে ওজন বাড়লে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। না হলে শরীরচর্চা করলেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে মেদ না বাড়লেও সকলকেই প্রতি দিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করা উচিত।

প্রশ্ন: পুজোর জন্য কোন বিশেষ টিপস?

উত্তর: ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া এবং ব্যায়াম করুন। পুজোর সময় ঠাকুর দেখে রাত করে না খেয়ে, খাওয়াদাওয়া করে ঠাকুর দেখুন। তাতে এ বার যাই হোক, পরের বার আপনি থাকবেন স্লিম আর ফিট।

সাক্ষাৎকার: সুপ্রকাশ চৌধুরী

ছবি: উদিত সিংহ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Fitness Fat Fit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE