শহরে বর্ষা নামায় তীব্র গরম থেকে স্বস্তি মিলেছিল বাসিন্দাদের। কিন্তু বৃষ্টির হাত ধরে হাজির হয়েছে নানা ভাইরাস ও ছত্রাকঘটিত রোগ। জ্বর-সর্দির পাশাপাশি এই সব রোগে নাজেহাল হচ্ছেন অনেকেই।
জ্বরে আগেই ভুগছিল সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী রিয়া। দিন তিনেক ধরে আলোর দিকে তাকাতেও সমস্যা হচ্ছিল তার। ডান চোখের পাতা ফুলে থাকায় স্কুলেও যেতে পারছে না রিয়া। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানা যায়, ‘পিঙ্ক-আই’-এর শিকার সে। আপাতত ঘরবন্দি থাকতে হবে কয়েকটা দিন।
বছর বাইশের রক্তিমের শরীরে গোল গোল লাল দাগ দেখা দিয়েছে। সঙ্গে চুলকানি। অস্বস্তির জেরে সে কলেজ, গিটারের ক্লাস সব বাদ দিয়ে বাড়িতে বসে রয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, বর্ষা যে শুরু হয়েছে তা-ই জানান দিচ্ছে ত্বক।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শহরে বর্ষা প্রবেশ করতেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে জীবাণুরা। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। বিশেষত, জীবাণু সংক্রমণের জেরে ভুগতে হয় শিশু ও বয়স্কদের। কিন্তু এ বার ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি চোখ ও ত্বকের সংক্রমণও দেখা যাচ্ছে।
চক্ষুরোগের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত জানান, ‘পিঙ্ক আই’-য়ের দাপটে কাবু হয়েছেন অনেকেই। স্কুল প়ড়ুয়াদের মধ্যে এই ভাইরাসঘটিত সমস্যা প্রবল। প্রথমে জ্বর-সর্দি এবং তার পরে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানো, আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া এবং চোখের পাতা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। জ্যোতির্ময়বাবুর কথায়, ‘‘এই রোগ খুব ছোঁয়াচে। স্কুল থেকেই অধিকাংশ সময়ে রোগটা ছড়ায়। পুরো সুস্থ হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে।’’ তাঁর পরামর্শ, চোখ লাল হয়ে গেলে কিংবা চুলকানোর সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, এই সংক্রমণ অনেক ক্ষেত্রে চোখের কর্নিয়ায় প্রভাব ফেলে। যা থেকে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। রোগীর ব্যবহার করা রুমাল, সানগ্লাস জাতীয় জিনিস আলাদা ভাবে রাখা দরকার।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন চর্মরোগও দেখা দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। ত্বকরোগের চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষ জানান, ‘ফাঙ্গাল ডিজিজ’ মারাত্মক ভাবে হচ্ছে। কমবয়সিদের মধ্যেই এই রোগের প্রকোপ বেশি। তাঁরা চাপা জিন্স কিংবা টি-শার্টেই অভ্যস্ত। অনেক সময়ে তাঁরা বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও সেই পোশাক পরে থাকেন। কখনও বৃষ্টির পরেও গরম থাকছে। ঘাম হয়ে শরীর ভিজে থাকছে। তার জেরেই দেখা দিচ্ছে ছত্রাকের সংক্রমণ। শরীরের বিভিন্ন অংশে গোল, লাল দাগ দেখা দিচ্ছে। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘সমস্যার উপশম হতে কয়েক সপ্তাহ লাগছে। অনেকেই প্রথমে স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম ব্যবহার করছেন। তাতে সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে।’’ তাঁর পরামর্শ, কোনও ভাবেই ভিজে পোশাক দীর্ঘ সময় পরে থাকা ঠিক নয়। পাশাপাশি, চামড়ায় অস্বাভাবিক কিছু দেখা গেলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চামড়া ও চোখের সমস্যার পাশাপাশি হানা দিচ্ছে গলার সংক্রমণও। মেডিসিনের চিকিৎসক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সংক্রমণের জেরে জ্বর-সর্দি-কাশি দেখা দিচ্ছে। তা থেকেই গলায় ব্যথা হচ্ছে।
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জ্বরের পাশাপাশি টাইফয়েড, জন্ডিস, পেটের সমস্যাও হচ্ছে।’’ তিনি জানান, দূষিত জলের জেরেই এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। অনেক সময়েই সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। তাই শিশু স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে সময়মতো টিকাকরণ এবং পরিশুদ্ধ জল ব্যবহারের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy