Advertisement
E-Paper

সংক্রমণ ছড়াতে পারে স্টেথোস্কোপ থেকেও

সংক্রমণ রুখতে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) মতো গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসক-নার্সদের সচেতনতা ও রোগীর কাছাকাছি পরিজনেদের পৌঁছনোয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত গোটা দুনিয়ার চিকিৎসা-মহল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর ২০ লক্ষ রোগী হাসপাতালজনিত সংক্রমণের শিকার হন। মৃত্যু হয় প্রায় আশি হাজারের। সংক্রমণ রুখতে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) মতো গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসক-নার্সদের সচেতনতা ও রোগীর কাছাকাছি পরিজনেদের পৌঁছনোয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। কিন্তু গবেষণা বলছে, সংক্রমণ ছড়ানোর উপকরণের তালিকায় এ বার ঢুকে পড়েছে চিকিৎসকের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত অন্যতম সরঞ্জাম স্টেথোস্কোপও।

চিকিৎসকদের মতে, ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে একটানা থাকায় রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে ঠেকে। সেই অবস্থায় হাসপাতাল থেকে রোগীর শরীরে সংক্রমণ (হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন) ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। ভেন্টিলেশন, ক্যাথিটার, সেন্ট্রাল-লাইনের পাশাপাশি সংক্রমণের মাধ্যম হতে পারে নিরীহ স্টেথোস্কোপও।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গলায় ঝোলানো অবস্থায় চিকিৎসকের পোশাকের সঙ্গে ঘষা খেয়ে ওই স্টেথোর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ঢুকতে পারে রোগীর শরীরে। একই স্টেথোর মাধ্যমে এক রোগী থেকে অন্য রোগীর শরীরেও বাসা বাঁধতে পারে ব্যাকটেরিয়া। এ জন্যই প্রতি রোগীর ক্ষেত্রে পৃথক স্টেথো ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু কার্যত তা অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে প্রতি রোগী দেখার পরে স্টেথোটি অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। এক চিকিৎসকের দাবি, হাতে গোনা বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ-এর প্রতি শয্যার পাশে আলাদা স্টেথো এবং পরিষ্কার করার তরল রাখা থাকে।

তবে স্টেথোস্কোপ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে চিকিৎসক মহলেই। এ ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর কথা মানতে নারাজ রেডিওলজিস্ট রেজাউল করিম। তিনি বলছেন, ‘‘স্টেথোর ব্যবহার এখন সীমিত। সুতরাং এ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা খুবই কম।’’

প্রথম বিশ্বের দেশগুলি কিন্তু স্টেথোস্কোপ-সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না। হাত থেকে যে ভাবে ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে, একই ভাবে স্টেথো বা পোশাকের মাধ্যমেও তা ছড়াতে পারে বলে জানাচ্ছেন সে দেশের চিকিৎসকেরা। প্রায় দু’দশক ধরে কর্মসূত্রে ইংল্যান্ডে আছেন চিকিৎসক শুভজিৎ দত্তরায়। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘স্টেথোস্কোপ থেকে অবশ্যই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্যেই বিদেশের হাসপাতালগুলি এ নিয়ে অনেক সতর্ক। প্রতিটি আইসিইউ শয্যার পাশে একটি করে স্টেথোস্কোপ থাকে। রোগীকে পরীক্ষা করার আগে ও পরে অ্যালকোহল দিয়ে মুছে নেওয়া হয় সেটি। এমনকী আউট পেশেন্ট ইউনিটেও প্রতি রোগী দেখার পরে স্টেথোস্কোপটি অ্যালকোহলে মুছে দেন নার্স। এটা বাধ্যতামূলক।’’

ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্তেরও মত, ‘‘স্টেথো থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় থাকতেই পারে। আইসিইউ-এ শয্যা পিছু একটি স্টেথোস্কোপ থাকা উচিত। হাত ও স্টেথোস্কোপ পরিষ্কার করতে ‘হাইজিন লোশন’ রাখা উচিত।’’ শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, ‘‘স্টেথোস্কোপ এবং হাত পরিষ্কার করা উচিত আউটডোরেও। সেখানে আসা কোনও রোগীর শরীরে সংক্রমণ বাসা বেঁধে থাকলে, বিপদ হতে পারে অন্য রোগীর।’’

গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এক তরুণ চিকিৎসক বলেন, ‘‘ডাক্তারি পড়ার সময়ে স্টেথোস্কোপ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ আমাদের দেওয়া হয়নি। কমিউনিটি মেডিসিন পড়ার সময়ে বিষয়টি প্রথম জানি। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এত রোগীর চাপ থাকে যে, তা প্রয়োগ করা কার্যত অসম্ভব।’’ অরুণাংশুবাবু জানান, বিদেশে এ বিষয়ে সচেতনতা অনেক বেশি। নিয়মিত গবেষণা হয় সেখানে। এখানে সে সব কিছু হয় না। প্রথম থেকেই ডাক্তারি পড়ুয়াদের গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়ে সচেতন করা উচিত।

Stethoscope Medical Infection স্টেথোস্কোপ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy