Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

স্নেহের পরশই কমাতে পারে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আত্মহত্যার প্রবণতা

অর্থনৈতিক দিক থেকে কোনও অভাব ছিল না। ছিল না শুধু কথা বলার মানুষ। তার থেকেই একাকিত্ব। তা ঘিরেই কষ্ট, যন্ত্রণা। যার জেরে নিজের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করতেও পিছপা হননি বেহালার বৃদ্ধ। 

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৫
Share: Save:

অর্থনৈতিক দিক থেকে কোনও অভাব ছিল না। ছিল না শুধু কথা বলার মানুষ। তার থেকেই একাকিত্ব। তা ঘিরেই কষ্ট, যন্ত্রণা। যার জেরে নিজের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করতেও পিছপা হননি বেহালার বৃদ্ধ।

হাওড়ার বাগনানের বাকসিতে একাই থাকতেন বৃদ্ধা। ছেলে শহরের এক রেস্তরাঁয় কর্মরত। ছেলে বাড়ি ফিরলে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হয় মায়ের সঙ্গে। সেই অভিমানে ট্রেন লাইন ধরে হেঁটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বৃদ্ধা।

অসুস্থতায় প্রবাসী পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার পর থেকে পুত্রবধূ এবং নাতির সঙ্গে যোগাযোগও বিছিন্ন। অবসাদে হাওড়ার এক সরকারি লজে গিয়ে আত্মঘাতী হন ভবানন্দ রোডের বৃদ্ধ পালচৌধুরী দম্পতি। এগুলি বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ার খণ্ডচিত্র মাত্র।

বিশ্বজুড়েই ক্রমশ বাড়ছে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা। যার আর এক নাম ‘সিলভার সুনামি’। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এই সংখ্যা ১২ কোটির কাছাকাছি। ‘সিলভার সুনামি’ই বিপদ বাড়াচ্ছে কি? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এক দিকে যেমন রয়েছে বয়সের কারণে ভাবনা-চিন্তার পরিবর্তন, অন্য দিকে জীবন দীর্ঘায়িত হলেও ক্ষমতার অভাব দেখা যায়। চলা-ফেরার সুযোগ কমে। তাতে হতাশা বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যুক্ত হয় আর্থিক সঙ্গতি এবং একাকিত্ব। তার থেকেই মারাত্মক হতাশা শুরু হচ্ছে। এই হতাশাই গ্রাস করছে অনেককে। এর জন্যই আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে মত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের।

বিশেষজ্ঞেরা জানান, এই প্রবণতা থেকে বেরোনোর ক্ষেত্রে ‘জেরিয়াট্রিক কাউন্সেলিং এবং থেরাপি’ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এ দেশে এই পদ্ধতিটি এখনও সে ভাবে প্রচলিত নয়। এই ধরনের থেরাপি করানো গেলে বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই কার্যকরী হবে বলে মত মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের। তাঁর মতে, ‘‘প্রথম শৈশবে যেমন সাহায্য, সাহচর্য এবং স্নেহের অতিরিক্ত প্রয়োজন, দ্বিতীয় শৈশবেও তেমনটাই দরকার পড়ে। দ্বিতীয় শৈশব, অর্থাৎ বেশি বয়সে এগুলির যখন অভাব ঘটে, মানুষ বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ হন। তা থেকে অনেক রকম মানসিক সমস্যা তৈরি হয়।’’ মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের বক্তব্য, ‘‘আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, সব শেষ হয়ে গেল, এই মানসিকতা থেকে বেরোতে হবে। কোনও কিছুর মধ্যে মানুষটিকে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাঁকে ব্যস্ত রাখতে হবে আত্মীয়-পরিজনেদেরও। তা হলেই হতাশা খানিকটা কমে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE