Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চল্লিশ পেরোলে চোখ দেখিয়ে নেওয়া উচিত

চোখের রোগ বলতে বোঝায় নানা ধরনের কনজাংটিভাইটিস, চোখের পাওয়ারের সমস্যা ও ছানিপড়া। বার্ধক্যজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপের ফলে চোখের নানা রোগও এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। জানালেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ শঙ্করলাল সাহা। সাক্ষাৎকার: বিমান হাজরাচোখের রোগ বলতে বোঝায় নানা ধরনের কনজাংটিভাইটিস, চোখের পাওয়ারের সমস্যা ও ছানিপড়া। বার্ধক্যজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপের ফলে চোখের নানা রোগও এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। জানালেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ শঙ্করলাল সাহা। সাক্ষাৎকার: বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৪
Share: Save:

অনেকেই মাঝেমধ্যে চোখ চুলকোয়। এটা কি কোনও অসুখ?

এটা সাধারণ ব্যাপার। মারাত্মক নয়। তবে যদি ঘন ঘন হতে থাকে, তাহলে চিন্তার। এটি অ্যালার্জি থাকার লক্ষণ। আপনার দেহ অতিরিক্ত হিস্টামাইন উৎপন্ন করে। যার কারণে অতিরিক্ত চোখ চুলকায়। শুধু চোখ নয় এই সমস্যা নাক, গলা, চামড়ায় হতে পারে। ইচ্ছে মতো ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ছানিপড়া ব্যাপারটা কী ?

কর্নিয়া ও আইরিসের পিছনে থাকা স্বচ্ছ লেন্স বার্ধক্য ও বিভিন্ন কারণে অস্বচ্ছ হয়ে পড়াকেই ছানিপড়া রোগ বলে। বয়সের কারণে, আঘাতজনিত কারণে, ডায়াবেটিস রোগের কারণে, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহার-সহ নানা কারণে ছানি পড়তে পারে। একমাত্র সমাধান অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারে গাফিলতি হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, চশমার পাওয়ার বাড়ে।

শিশুদের কোন কোন চোখের রোগ বেশি দেখা যায়?

অনেক শিশুর এক বা দু’চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। এর নাম কনজেনিটাল ড্যাকরিওসিস্টাইটিস। পাওয়ারের সমস্যা, ছানির সমস্যা (কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট), অ্যালার্জিক ভারনাল কনজাংটিভাইটিস, স্কুইন্ট বা ট্যারা এ সব রোগও হয়। কিছু ক্ষেত্রে জিনঘটিত রোগ হতে পারে। সময়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে সেরে যায়।

রাতকানা রোগের কারণ এবং এই রোগের প্রতিকার কী?

ভিটামিন ‘এ’র অভাবে রাতকানা রোগ হয়। অপুষ্টি, হজমের গোলমাল, পেটে কৃমির সংক্রমণ, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার না খেলে প্রকোপ বাড়বে। এ ছাড়া জন্ডিস, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে লিভারের ক্ষতি, সিরোসিস ছাড়াও লিভারের বিভিন্ন রোগের কারণে রাতকানা হতে পারে। অনেক দিন ধরে শিশুদের ডায়েরিয়া, বাড়াবাড়ি রকমের হাম হলে ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতিতে চোখ নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু জিনঘটিত রোগ—রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা এবং আরও কিছু সমস্যায় রাতকানা রোগটা হতে পারে। আর রাতকানা রোগের প্রতিকার হিসাবে সতেজ সবুজ শাক-আনাজ, ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হলুদ রংয়ের ফল (পাকা পেঁপে, পাকা আম, গাজর, কুমড়ো) খেতে হবে। উপরে উল্লেখ করা রোগগুলোর যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত তেল খাওয়ানো খুব জরুরি। কিন্তু রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা জাতীয় জিনঘটিত রোগের চিকিৎসায় খুব সুফল মেলে না। তবে গবেষণা চলছে।

শিশুর চোখের জন্য গর্ভাবস্থায় মাকে কী কী লক্ষ্য রাখতে হবে?

গর্ভাবস্থায় মাকে যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাছাড়া এই সময় টক্সোপ্লাজমোসিস, সিফিলিস, জার্মান মিজলস্, হারপিস ইত্যাদি রোগে মা যেন আক্রান্ত না হন সে দিক নজর রাখতে হবে। এই সবের প্রভাবে শিশুর চোখের রোগ হতে পারে।

কোন কোন চোখের রোগ শিশুদের অন্ধত্ব ডেকে আনতে পারে?

বিভিন্ন জিনঘটিত কারণে শিশুর চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, যেমন মাইক্রোপথালমোস, মাইক্রোকর্নিয়া ও প্রিম্যাচিওর বার্থ, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, জন্মগত ছানি।

কর্নিয়ার আলসার বা চোখের ঘা কী ?

চোখের ঘা বা কর্নিয়ার আলসার হয় বিভিন্ন কারণে। অন্ধত্বের অন্যতম কারণও এটি। আঘাতজনিত কারণ হল প্রধান। ধান কাটার সময় ধানের ধারালো পাতা দিয়ে চোখের আঘাতে কর্ণিয়াতে ঘা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ-র অভাবে আলসার হতে পারে। এ ছাড়া চোখে জীবাণুর সংক্রমণেও আলসার হতে পারে।

কনজাংটিভাইটিস কি ছোঁয়াচে?

হ্যাঁ, ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস খুবই ছোঁয়াচে। ‘জয় বাংলা’ বা ‘চোখ ওঠা’ নামে গ্রাম বাংলায় এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এটাই ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস। একবার শুরু হলে আশপাশে প্রায় সকলেরই ক্রমান্বয়ে তাতে আক্রান্ত হতে থাকে। এ সময় ভাল করে নিজের হাত না ধুয়ে নিজের চোখ স্পর্শ করতে নেই। অন্য বিভিন্ন কনজাংটিভাইটিস তত ছোঁয়াচে নয়।

চোখ ট্যারা হয় কেন?

চোখের মাংসপেশি চোখকে একটি নির্দিষ্ট দিকে অবস্থান করতে সাহায্য করে। মাংসপেশীর সাহায্যে আমরা চোখকে ঘোরাতে পারি। মাংসপেশী দুর্বল হয়ে গেলে উল্টো দিকে বেঁকে যায়। একে ট্যারা বলে। চোখের যেসব মাংসপেশী চক্ষুগোলককে নাড়াচাড়া করায় তাদের কোনও কোনওটি দুর্বল বা প্যারালিসিস হলে কোনও একটা দিকে চোখ নড়তে পারে না,ফলে চোখ ট্যারা হয়ে যায়। যে সব মস্তিষ্ক স্নায়ু ওই মাংসপেশীদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ক্রিয়াকলাপে গোলমাল হলে কিংবা মস্তিষ্কের কিছু রোগের ফলেও চোখ ট্যারা হতে পারে। এ ছাড়া দু’চোখের পাওয়ারের তফাত যদি বেশি থাকে, সেটা যদি সময়ে চশমা পরিয়ে ঠিক না করা হয়,তা হলে দুর্বল চোখটি ট্যারা হয়ে যেতে পারে। কারও কারও একটি চোখ, বাইরে থেকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও খুব কম দৃষ্টিশক্তি থাকতে পারে। একে অ্যামব্লায়োপিয়া বা ‘লেজি আই’ বলে। লেজি আই পরে ট্যারা হতে পারে।

ট্যারা চোখের চিকিৎসা কী?

প্রথমেই ট্যারা হওয়ার কারণটা নির্ণয় করে চিকিৎসা—ওষুধ, চশমা, চোখের ব্যায়াম করতে হবে। তারপর কতটা উপকার হল দেখে দরকার হলে বাকি ট্যারাভাব অপারেশন করে ঠিক করা যেতে পারে। আসলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেরা চোখের কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা জরুরি। চশমা দিযে দৃষ্টিস্বল্পতা দূর করে শিশুদের অনেক ট্যারা চোখ সোজা করা যায়। কখনও চোখের ব্যায়ামের ম্যধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় ট্যারা চোখের চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। চোখের ক্যান্সারে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর চোখ ট্যারা হতে পারে। ট্যারার চিকিৎসায় রোগীর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

গ্লুকোমা কী ?

‘গ্লুকোমা’ চোখের একটি রোগ। এই রোগে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে একসময় অন্ধ হয়ে যায়। গ্লুকোমার একটা ধরন আছে যার নাম অ্যাকিউট অ্যাঙ্গল ক্লোজার গ্লুকোমা। এ রোগের শুরুতেই চোখে খুব ব্যথা হয়। তাই রোগী তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসা শুরু করা যায় দ্রুত। অন্য ধরনটার নাম ক্রনিক সিম্পল গ্লুকোমা। এতে প্রথম দিকে ব্যথা হয় না। ধীরে ধীরে রোগ বাড়ে। যখন ধরা পড়ে, তখন চোখের অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। মনে রাখা দরকার, গ্লুকোমা ধরা পড়ার সময় চোখের যতটা ক্ষতি হয়ে যায়, তা আর ফেরানো যায় না। চিকিৎসা হলে পরবর্তী ক্ষতি প্রতিহত করা যায়।

গ্লুকোমার লক্ষণ কী কী?

অল্প অল্প লাল, জল পড়া (রাতের দিকে ),অল্প ব্যথা হয়। পরের দিকে উপরের উপসর্গগুলো বাড়ে, দৃষ্টি আবছা হতে থাকে, মাথাব্যাথা হয়, বমি বমি ভাব হয়, কখনো বমিও হয়। গ্লুকোমার একটা উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল, রেনবো হ্যালো বা রামধনুর ছটা। সোজাসুজি তাকানোর সময় দূরের দৃষ্টি ততটা নাও কমতে পারে। দৃষ্টিশক্তির পরিধি—উপর, নীচ,ডান বাম এই চারদিকের সংকোচন হতে থাকে। এ অবস্থাকে টানেল ভিসন বলে।গ্লুকোমা রোগীদের ক্ষেত্রে প্রেস বায়োপিয়া বা নিয়ার ভিসন পাওয়ারের পরিবর্তন হতে পারে।

কাদের গ্লুকোমা হওয়ার আশঙ্কা?

যাদের বয়স ৫০ বছর ছাড়িয়েছে, বংশে কারও গ্লুকোমা আছে, যাদের বেশি মাত্রার মায়োপিয়া আছে, যাদের চোখের কর্নিয়ার কেন্দ্রস্থল অপেক্ষাকৃত পাতলা তাদের গ্লুকোমার আশঙ্কা থাকে বেশি। যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, থাইরয়েড রোগে ভোগেন তাদেরও গ্লুকোমাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য গ্লুকোমা হতে পারে?

বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় চোখের ড্রপ লাগালে গ্লুকোমার আশংকা বাড়ে। কিছু খাবার ওষুধেও চোখের প্রেসার বাড়তে পারে। আঘাতজনিত কোনও কারণেও গ্লুকোমা হতে পারে।

শিশুদের গ্লুকোমা হতে পারে?

হতে পারে। গঠনে জন্মগত ত্রুটির কারণে।রোগের নাম বুফথালমোস।

গ্লুকোমা এড়াতে কী কী করা উচিত?

৪০ পেরোলেই মাঝে মাঝে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। আজকাল গ্লুকোমার একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটা ধরে ফেলার অনেক উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু হয়েছে। নিয়মিত ওষুধপত্র ব্যবহার করলে এবং খেলে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। দরকার হলে লেসার চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারও করা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Eye
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE