Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

মাছ আর ফলে জব্দ ডেঙ্গির দুর্বলতা

জ্বর নামল, প্লেটলেটও উঠল, কিন্তু দুর্বলতা কিছুতেই সঙ্গ, থুড়ি শরীর ছাড়ে না! ডেঙ্গি সেরে যাওয়ার পরে এই সমস্যা প্রায় কম-বেশি সবারই। অল্প হাঁটাচলা করলেই হাঁফ ধরা, মাথা ঝিমঝিম আর নিঃশ্বাসের কষ্ট সঙ্গের সাথী। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে এর মোকাবিলা করা ছাড়া গতি নেই। অবশ্য পথ্যের সঙ্গে বিশ্রামও দরকার। ডেঙ্গির দুর্বলতা কাটিয়ে সেরে ওঠার জন্য প্রয়োজন প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ডায়েট। জানালেন নিউট্রিশনিস্ট সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়।ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, সব কটা মিলেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকা দরকার। বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত। কম তেলমশলা যুক্ত সহজপাচ্য খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ১৫:২১
Share: Save:

আবহাওয়া শীতল হতেই এডিস ইজিপ্টারা কিছুটা দমে গিয়েছে। কিন্তু যাঁরা এর কামড় খেয়েছেন, আর ডেঙ্গির ভাইরাসেরা যাঁদের হাড়ে ঝামা ঘষে দিয়ে যাব যাব করছে, তাঁদের অবস্থা এখনও সঙ্গীন। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে চাই প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস ও নানান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ডায়েট।

ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, সব কটা মিলেই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকা দরকার। বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত। কম তেলমশলা যুক্ত সহজপাচ্য খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকেই হাল্কা রান্না খাবার খেলে ভাল হয়। ডেঙ্গি-সহ যে কোনও ভাইরাল জ্বর হলে ডিহাইড্রেশন হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে লিক্যুইড ডায়েট নেওয়া দরকার। স্যুপ, ফ্রেশ ফ্রুট জ্যুস, ডাবের জল, লেবুর সরবত, দইয়ের ঘোল নিয়ম করে খেতে হবে। ডেঙ্গির জ্বর সেরে যাওয়ার পরেও উইকনেস থেকে যায়। এই সময়েও সঠিক ডায়েট নিলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে লেবু ও মধুর জল পান করলে এক দিকে শরীরের টক্সিন বেরিয়ে যায়, অন্য দিকে ডেঙ্গির কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়া ইমউনিটি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: জ্বরে মাড়ি থেকে রক্ত বেরোলে সাবধান

ব্রেকফাস্ট হোক রাজকীয়

সকালে চা-বিস্কুট দিয়ে জলখাবারের পালা সারেন অনেকেই। কিন্তু অমন ভুলটি কখনওই করবেন না। ভরপেট ব্রেকফাস্ট না খেলে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা মুশকিল। চা পানের পর জমিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে হবে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার আর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। চিকেন স্ট্যু, রুটি, সবজি আর কলা দিয়ে সারুন সকালের খাবার। নিরামিষ খেতে চাইলে ঘন এক বাটি ডাল, রুটি, সবজি, ছানা আর কলা, পেয়ারা বা পেঁপে খেতে পারেন। এছাড়া পাউরুটি, সবজির স্ট্যু, রাজমা, আর ফলও খাওয়া যেতে পারে। ব্রেকফাস্টের ঘণ্টা দু’য়েক পর একটা গোটা বেদানা বা দানা সমেত মিক্সিতে রস করে খাওয়া যেতে পারে। বাড়িতে পাতা দই ও পাতিলেবু সহযোগে ঘোলও খেতে পারেন। ডেঙ্গি জ্বর হলে দুর্বলতা কাটাতে পারে।

ভাইরাস জ্বরের ক্ষয় পূরণে প্রোটিন চাই

ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ আর ডিনার— তিন বারের পথ্য সহজপাচ্য প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়া দরকার। জ্বরের জন্যে শরীরের অভ্যন্তরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা পূরণ করতে প্রোটিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। বিভিন্ন ডাল, রাজমা, ডিম, চিকেন, মাছ, ছানা প্রোটিনের ভাল উৎস। তবে সামুদ্রিক মাছ খাওয়া মানা। এই সময় হজমশক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি খেলে পেটের গোলমাল ফিরে আসতে পারে। প্রোটিন মানে জমিয়ে মাটন নয়। চিকেন স্ট্যু, মাছের ঝোল বা মাছ ভাজা, ডাল সেদ্ধ, অল্প তেলে সাঁতলে রান্না ডাল ইত্যাদি বাড়িতে হাল্কা করে রান্না খাবার খাওয়া দরকার। বাইরের খাবার ও বেশি তেলমশলা দিয়ে রান্না করা খাবার একেবারেই বাদ দিন। সকালের জলখাবারে ডিমের পোচ বা ডিম সেদ্ধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অমলেট চলবে না। মাছের টুকরোতে নুন লেবুর রস দিয়ে অল্প তেলে সেঁকে খাওয়া যায়।

উচ্ছে আর নিমপাতা চাই

ডেঙ্গির পর খাবারে অরুচি হয়। অরুচি কাটাতে তেতো অত্যন্ত উপযোগী। করলা, উচ্ছে, নিমপাতা রোজকার মধ্যাহ্নভোজনে থাকলে ভাল হয়। করলা আর নিমপাতা ভাজা বা সুক্তো খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া তেতো সব্জিতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এক দিকে হজমশক্তি বাড়ায়, অন্য দিকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে। এর সঙ্গে পালংশাক (কিডনি স্টোন বা অন্যান্য সমস্যা না থাকলে), মেথি শাক, গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম, কুমড়ো, লাউ ইত্যাদি সব্জি বদলে বদলে খেলে ভাল। রাতের খাবার সাড়ে ৮টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে হাল্কা ভেজিটেবল স্যুপ খেলে এক দিকে ঘুম ভাল হবে অন্য দিকে পুষ্টির ঘাটতি মিটবে।

আরও পড়ুন: বাচ্চার জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে নজর রাখুন

ডাবের জল, বেদানা আর লেবু জাতীয় ফল মাস্ট

ডেঙ্গি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় ফলে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলস। এডিস ইজিপ্টার দংশনে আর্বোভাইরাসেরা শরীরে ঢুকে জলের ঘাটতি তৈরি করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মিনারেলসেরও অভাব হয়। ডাবের জলে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম, ইলেকট্রোলিটস, এনজাইম, সাইটোকাইন ও ফাইটো হরমোন। এর সবগুলিই ডেঙ্গির পরবর্তী দুর্বলতা-সহ বিভিন্ন ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তাই এই সময়ে প্রতি দিন ডাব খেলে ভাল। এ ছাড়া কমলালেবু, বেদানা, কিউই, ড্রাগনফ্রুট, পেয়ারা ইত্যাদি ফল প্রত্যেক দিন খাওয়া দরকার। অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট বাড়িয়ে রক্তের অন্যান্য ঘাটতি পূরণ করতে পারে এই সব ফলে থাকা নানান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি।

ডেঙ্গি জ্বরের পরবর্তী দুর্বলতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে বেদানার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। লাল এই ফলের রসে আছে বি কমপ্লেক্স গ্রুপের বিভিন্ন ভিটামিন, যা রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাকে জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গি রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে। তাই রোজকার ডায়েটে রাখুন বেদানা, পেয়ারার মতো নানান ফল। সেরে উঠুন আর মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণে উঠেপড়ে লাগুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Dengue Diet Healthy Living
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE