Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হচ্ছেন পুরুষেরাও

সাত দিনের বাজার দু’দিনেই শেষ করছেন মা ও মেয়ে। বৃদ্ধ বাবাকে করোনা আবহেও জবরদস্তি বাজারে ছোটাচ্ছেন সেই মেয়ে। তাঁকে মদত  দিচ্ছেন মা-ও!

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নন্দিনী ভট্টাচার্য (প্রেসিডেন্ট, অল বেঙ্গল মেনস ফোরাম)
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০২:৩৩
Share: Save:

অফিসের পরিচয়পত্র আটকে রেখেছিলেন স্ত্রী। ফলে করোনা সঙ্কটেও ডিউটিতে যেতে পারছিলেন না চিকিৎসক স্বামী। এমনকি, কথা না শুনলে শ্বশুরমশাইকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন ওই মহিলা। এমনই অভিযোগ জানিয়ে কসবা অঞ্চলের বাসিন্দা এক সরকারি চিকিৎসক ফোন করেন আমাদের। থানার হস্তক্ষেপে এখন কাজে যেতে পারছেন তিনি।

সাত দিনের বাজার দু’দিনেই শেষ করছেন মা ও মেয়ে। বৃদ্ধ বাবাকে করোনা আবহেও জবরদস্তি বাজারে ছোটাচ্ছেন সেই মেয়ে। তাঁকে মদত দিচ্ছেন মা-ও! লকডাউন পর্বে এমনই সব অত্যাচারের অভিযোগ জমেছে সংস্থার দফতরে।

মার্চের শেষ থেকে অগস্টের শুরু পর্যন্ত এমন গার্হস্থ্য হিংসারই ৬০টি অভিযোগ জমা হয়েছে। যার সব ক’টিই এসেছে শহর ও শহরতলি থেকে। স্বাভাবিক সময়ের থেকে এই সংখ্যাটা কিন্তু দ্বিগুণেরও বেশি। অথচ বার বার বলা হচ্ছে, লকডাউনে অনেক বেশি গার্হস্থ্য হিংসার শিকার মহিলারা। ওই হিসেব কিসের ভিত্তিতে হয়, সেটাই বোঝা যায় না। কারণ, এ দেশের গার্হস্থ্য হিংসা আইনের আওতায় পুরুষেরা অভিযোগ জানাতে পারেন না।

অথচ বরের হাতে বৌয়ের মার খাওয়ার মতোই তো উল্টোটাও গার্হস্থ্য হিংসার পর্যায়েই পড়ছে। লকডাউন পর্বেই জানা গিয়েছিল সল্টলেকে বৌয়ের হাতে বরের মার খাওয়ার খবর। যা ফের প্রমাণ করে গার্হস্থ্য হিংসার দু'টি দিকই হয়। কিন্তু একটি খবরে আসে, অন্যটি থাকে আড়ালে।

জন্মলগ্ন থেকেই পুরুষ হয় রক্ষক, নয়তো ভক্ষক— এই দুই তকমাতেই আটকে থেকেছেন তাঁরা। তাঁদের অসহায়তা বা চোখের জল, দুই-ই সমাজের চোখে করুণা অথবা লজ্জার। তাই বরাবর ওই অভিব্যক্তি লুকিয়ে রাখাটাই যেন পৌরুষের প্রকাশ।

অপ্রকাশিত সেই যন্ত্রণার পরিসংখ্যান ধরা পড়ে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর (এনসিআরবি) সাম্প্রতিক রিপোর্টে। ভারতে প্রতি বছর বিবাহিত পুরুষের আত্মহত্যার সংখ্যা নারীর দ্বিগুণের থেকেও বেশি। এমনকি ধর্ষণের মিথ্যা মামলার জালে অসংখ্য পুুুরুষ খুুইয়েছেন সম্মান, পরিবার‌। হারিয়ে গিয়েছে অগুনতি জীবন। রিপোর্টেই উঠে এসেছে সেই তথ্য।

এ দেশে পশুপাখির জন্য মন্ত্রক আছে, পরিবেশ রক্ষায় আইন আছে, অথচ পুরুষের অভিযোগ জানানোর জায়গাই নেই। ফলে আড়ালে থেকে যায় অভিযোগ।

আড়ালে থাকা সেই সব ঘটনা কত ভয়াবহ, আমরা যাঁরা পুরুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করছি তাঁরা জানি, কিন্তু সাধারণ মানুষ তা ভাবতেই পারেন না।

শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রেও একই বঞ্চনা। এ ক্ষেত্রে আইন থাকলেও শিশুপুত্র নির্যাতন নিয়ে আমরা কেউ আলোচনাই করতে চাই না। যেন নির্যাতিতা হয় শুধু শিশুকন্যারাই। যার ছায়া পড়ে পকসো আইনে (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস)। ফলে মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি সেখানেও।

আমার মতে, পুরুষের অধিকার মানে তাঁর সার্বিক অধিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, আইন ও সামাজিক– সব কিছুর অধিকার। স্বাধীন রাষ্ট্র পুরুষকে সে সব দিতে বাধ্য।

মেয়েরা ভেবে দেখুন, আপনার বাবা, স্বামী, ভাই বা ছেলে বিপন্ন হলে আপনিও স্বস্তিতে থাকবেন না। সেই যৌথ অস্বস্তির যৌথ ধাক্কায় বহু পরিবারই ভাঙনের সামনে। মনে রাখতে হবে নারী ও পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। একে অপরকে ছাড়া দু’জনেই অর্ধেক আকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE