Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
antibiotic

ভারতে অ্যান্টিবায়োটিকের অভিশাপের বলি বছরে ৫৮ হাজার শিশু!

যা আশীর্বাদ হয়ে ওঠার কথা ছিল, তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শুধু আপনার ভুলেই।প্রতি বছর শুধুমাত্র ভারতেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে মারা যায় ৫৮ হাজার শিশু। কেন জানেন?

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৫৫
Share: Save:

জ্বর-সর্দি হলেই দোকান থেকে কিনে ফেলা চেনা অ্যামোক্সিসিলিন, পেটের অসুখ হলেই যথেচ্ছ জনপ্রিয় মেট্রোনিডাজোল গোত্রের ওষুধ! এ ভাবেই কি সাধারণ অসুখ-বিসুখের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন বহু বছর? শুধু নিজেই খাচ্ছেন না, বাড়ির শিশুদের চিকিৎসাও অহরহ সেরে ফেলছেন এ ভাবেই। আর যা আশীর্বাদ হয়ে ওঠার কথা ছিল, তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে শুধু আপনার ভুলেই।

এ বার তবে সাবধান হন। সম্প্রতি সেন্টার ফর ডিজিজ ডায়নামিক্স ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিসি (সিডিডিইপি) –র সমীক্ষায় উঠে এল ভয়াল এক তথ্য। তাদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর শুধুমাত্র ভারতেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে মারা যায় ৫৮ হাজার শিশু। শুধু তাই-ই নয়, এই বদভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় সাত লক্ষ। বিশ্ব অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ সবেমাত্র কাটিয়ে এসেছি আমরা। তার মধ্যেই এমন সমীক্ষার ফল দুশ্চিন্তায় রেখেছে চিকিৎসকদের।

কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ বিষয়টি আদপে কী? অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে লড়ে যুঝে যাওয়ার ক্ষমতা লাভ করে বেশ কিছু ব্যাকটিরিয়া। ফলে নির্দিষ্ট অসুখ প্রতিরোধে যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, একটা সময়ের পর তা আর কাজ করে না। অনেক সময় ওষুধে কাজ না হওয়ায় মৃত্যু ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

আরও পড়ুন: জিভ পুড়ে গিয়েছে‌? নিমেষে আরাম পান এ সব উপায়ে

সে না হয় হল। কিন্তু কেনই বা অসুখ প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিক তার ক্ষমতা হারাচ্ছে দিনকে দিন? তা হলে কি জীবাণুরা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠছে ওষুধের চেয়েও?

‘‘বিষয়টা ঠিক এতটা সরল নয়,’’ জানাচ্ছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাট। তাঁর মতে, সরকারি প্রচার শহরের দিকে থাকলেও গ্রাম-শহর নির্বিশেষে এই বিষয়ে ভাবলেশহীন। নিজের হাতে অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষমতা প্রতি নিয়ত কমিয়ে দিচ্ছি আমরাই। কেমন করে? চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করে যখন-তখন যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকেই এর মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি। ‘‘যত খুশি যেমন খুশি অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করিয়ে এর আসল কার্যকারিতাই নষ্ট করে দিচ্ছি আমরা। আর তাতেই এই বিপত্তি।’’

কিন্তু কেনই বা নষ্ট হচ্ছে কার্যক্ষমতা? বুঝিয়ে বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। মূলত যাঁর হাত ধরেই আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ‘স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল অব অ্যান্টিবায়োটিকস’-এর নিয়ম শুরু হয়েছে। তাঁর মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার বিশেষ ক’টি কারণ আছে। এ নিয়ে প্রচুর সচেতনতা জারি করার চেষ্টা চললেও তা মেনে চলা হয় না কিছুতেই।’’ কারণ হিসাবে মূলত, দু’টি বিষয়কে দায়ী করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: যে সোনা কিনছেন, সেটা আদৌ আসল তো?

খোলা বাজারে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি। এর জেরে ওষুধ কেনার জন্য কোনও রকম বাধা নিষেধই নেই। ফলে ইচ্ছামতো ওষুধ কিনে খাওয়ার উপায় রয়েছে। ওষুধ যাও বা কেনা হল, তা পুরো কোর্স শেষ করেন না বেশির ভাগই। অসুখ ভাল হলেই ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা কমে। ফলে শরীরে প্রবেশ করা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে জীবাণুগুলো কিছু দিন ঝিমিয়ে গেল ঠিকই, অসুখও ভাল হল, কিন্তু কোর্স শেষ না করার কারণে কিছু দিন পরেই তারা মাথা চাড়া দিল। শরীরের ভিতর সে সব জীবাণু বংশবিস্তারও করে ফেলেছে তত দিনে। জিন মিউটেশনের কারণে শিশু ব্যাক্টেরিয়ারা শরীরের ভিতরে থাকা তাদের শত্রু অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়। ফলে সে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।

এর নেপথ্যে কিছু চিকিৎসকের ভূমিকাকেও দায়ী করেন তিনি। তাঁর মতে, বেশ কিছু চিকিৎসকও অসুখের শুরুতেই কড়া মাপের অ্যান্টিবায়োটিক দেন। এতে অসুখ ভাল হয়ে গেলেও অসুখের জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। তাই সুবর্ণবাবুর মতে, চিকিৎসকদেরও উচিত প্রথমেই কড়া মাপের অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে ওষুধ দেওয়া।

আরও পড়ুন: শীতের শুরুতে শিশুকে অসুখ থেকে দূরে রাখতে চান? মেনে চলুন এ সব

ইতিমধ্যেই যক্ষ্মার জন্য নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজে হন্যে এখন চিকিৎসকরা। ‘‘আগে যক্ষ্মার জন্য বাজারে পাঁচ-ছ’টি ওষুধ মিলত। এ সবের যথেচ্ছ ব্যবহার, বার বার কোর্স শেষ না করা ইত্যাদি কারণে আজকাল অনেক রোগীর শরীরেই পুরনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। তাই নতুন ওষুধের সন্ধান চলছে।’’ জানালেন সুবর্ণবাবু।

অ্যান্টিবায়োটিকের অবৈজ্ঞানিক ও যথেচ্ছ ব্যবহার এই হারে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ এই দেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে মত চিকিৎসকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Antibiotics Fitness Tips Health Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE