শাশুড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক বিবাহিত জীবনকে আরও মসৃণ করে। ছবি: শাটারস্টক।
শাস্ত্রমতে যে কোনও বিয়ে দু’টি মনের সঙ্গে দুই পরিবারের বন্ধনের কথাও বলে। তবে জীবনের এই অধ্যায়ে জড়িয়ে থাকে নানা ভাল-মন্দ। সম্পর্ক, ভালবাসা, দায়-দায়িত্বর হাত ধরেই আসে মেনে নেওয়া, মানিয়ে চলার গভীর পাঠ। বিশেষ করে একটি মেয়ে যখন বিয়ের পর অন্য পরিবারে গিয়ে থাকতে শুরু করে তখন তাঁকেই নানা পরিস্থিতির মোকাবিলা সবচেয়ে বেশি করতে হয়। বিশেষ করে শাশুড়ি-বউমা সম্পর্ক নিয়ে বিয়ের আগে থেকেই টেনশনে থাকেন অনেকেই। এই দু’জনের মধ্যে কোনও সমস্যা তৈরি হলে সে সব ঘরোয়া সমাধান অনেক সময়ই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির অন্যদের পক্ষে করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘যত নিউক্লিয়ার পরিবার তৈরি হচ্ছে ততই কম মানুষের সঙ্গে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাচ্ছে মানুষের। তাই আধুনিক প্রজন্মের মেয়েদের ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি বলতে সাধারণত, শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামী। তার উপর সাংসারিক ক্ষেত্রে মূল কর্ত্রী হলেন শাশুড়ি। তাই শাশুড়ির সঙ্গে বোঝাপড়া খারাপ হলে শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ আদৌ কেমন হবে এ নিয়ে অনেকেই বিয়ের আগে টেনশনে ভোগেন। শাশুড়ির সঙ্গে বনিবনার অভাবে অনেকে মানসিক অবসাদেও ভোগেন। ভয় থেকেই তৈরি হচ্ছে প্রথম থেকেই আলাদা থাকার প্রবণতা ’’
অনেকের ক্ষেত্রে বিয়ে বেশ কয়েক বছর হলেও শাশুড়ির সঙ্গে বোঝাপড়ার খুব মসৃণ নয়। কোথাও কোনও ভুলচুক থেকে যাচ্ছে কি? কিংবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও একটু কৌশল অবলম্বন করলে কি শ্বশুরবাড়ির বাড়তি কোনও সমস্যাকে সরিয়ে ফেলা যেতে পারে? হতেই পারে, দোষের পাল্লা আপনার কম, সে ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করুন, যদি দোষের ভাগ আপনার তরফেই বেশি থাকে, তা হলে আজই সচেতন হন, দেখে নিন কোন কোন বিষয় মাথায় রাখলে কর্মব্যস্ত জীবনে বাড়ির অশান্তি অনেকটাই দূরে থাকবে।
আরও পড়ুন: নামমাত্র খরচে এই ভাবে সারা শীতকাল দূরে রাখুন পা ফাটাকে
নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ঠাকুরমার নিজস্ব সম্পর্ককে সুন্দর রাখুন। ছবি: শাটারস্টক।
সব সময় মনে রাখবেন, আপনি আপনার স্বামীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হলেও তিনি তাঁর মা। সুতরাং তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের ধারেভারে প্রতিযোগিতায় নামাটা বোকামি। বরং শাশুড়ির প্রতি আপনার সম্মান শ্বশুরবাড়িতে আপনার জায়গাটিকেই আরও মজবুত করবে। চেষ্টা করুন, আপনার ভাইয়ের বউ আপনার মায়ের সঙ্গে ঠিক কেমন ব্যবহার করলে আপনি খুশি হতেন,সেটা ভাবতে, চেষ্টা করুন সেই কাজ নিজেও করতে। শাশুড়ি আগের প্রজন্মের মানুষ। হয়তো চাকরিও করতেন না। তাই নানা কাজে মতবিরোধ থাকতেই পারে। বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়েও সংঘাত আসতে পারে। আপনার কাজের ক্ষেত্রটিও হয়তো তিনি তেমন বোঝেনই না, সে ক্ষেত্রে অবজ্ঞা না করে বরং কয়েক দিন গল্পের ছলে আপনার কাজ, নানা বিশ্বাস তৈরির কারণ তাঁকে বলুন। আধুনিক পৃথিবীতে কোথায় কী ঘটছে, কেনই বা এমন ঘটনা হটাৎ ঘটল এ সব নিয়েও কথা বলুন তাঁর সঙ্গে। মনোবিদদের মতে, প্রথম প্রথম না শুনতে চাইলেও আপনার আগ্রহের প্রভাবে তাঁর আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়বে। এর পরেও সরাসরি কোনও মতভেদ ঘটলে তর্কে যাবেন না। তাতে কোনও সমাধান হয় না। তর্কে হেরে কেউ তাঁর নিজের মত বদলান না। সুতরাং ওই পথ ত্যাগ করুন। বরং ভেবে নিন কোন মতকে গুরুত্ব দিলে পরিবারের সকলেরই লাভ হবে। দরকারে শাশুড়ির সঙ্গেও এই শান্ত আলোচনাটা চালান।
আরও পড়ুন: যাপনে বাড়ছে মানসিক চাপ, লাফিয়ে বাড়ছে অবসাদও
শাশুড়ি তাঁর মত আপনার উপর চাপিয়ে দেন? না । তা মেনে নেওয়া মোটেও শান্তিতে থাকার সমাধান নয়। বরং খুব শান্ত ও শালীন ভাবে প্রতিবাদ করুন। আপনিও যে তাঁর উপর নিজের মত চাপাবেন না, সে বিষয়টাও মাথায় রাখুন। দু’ জনে মিলে কোনও কাজ করলে তার প্রশংসার সিংহ ভাগ শাশুড়িকেই দিন। বয়স হলে মানুষ অভিমানী হয়ে পড়েন। তাই তাঁর ভূমিকা কম থাকলেও তাঁকে প্রশংসা বেশি করছেন দেখলে তিনি খুশিই হবেন। অনেকেই মনে করেন, শাশুড়িকে ভাল রাখার, খুশি রাখার দায় তাঁর নয়। কিন্তু এই একই ভাবে আপনার ভাইয়ের বউ যদি আপনার মাকে নিয়ে ভাবতেন, তা কি ভাল হত? ননদ থাকলে অনেক সময়ই শাশুড়িরা তাঁর মেয়েকে ছেলের বউয়ের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন। এই বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি অভিমানী হবেন না। মনোবিদরা বলছেন, এই সময় আপনিও ননদকে গুরুত্ব দিলে বা তাঁর যত্ন নিলে শাশুড়ির সঙ্গে সংঘাত এড়ানো যাবে অনেকটাই। শাশুড়ির সঙ্গে তাঁর ছেলের বা নাতি-নাতনিদের সম্পর্কটা সম্পূর্ণ রূপে তাঁদের নিজেদের। এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে ঢুকতে যাবেন না। বেশির ভাগ মেয়েই শাশুড়ির কাছ থেকে দুর্ব্যবহার পেয়ে এই সম্পর্কগুলো নিয়ে বেশি পোজেসিভ হয়ে ওঠেন। আপনার তরফে সে দোষ ত্যাগ করুন।
আরও পড়ুন: দেখভাল না হলেই বিপদের আশঙ্কা গিজারে
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
শাশুড়ির কোনও কাজে বা কথায় আঘাত পেলে তা চেপে রাখবেন না, হয় শালীন ভাবে তখনই প্রতিবাদ করুন, আর তা সম্ভব না হলে বাড়ির অন্য কোনও সদস্যকে বিশেষ করে শ্বশুরমশাই বা স্বামীকে বিষয়টা জানিয়ে রাখুন। জানিয়ে রাখা মানেই কিন্তু এই নিয়ে অশান্তি করা নয়। কিছু কিছু বিষয় বাড়ির সকলের জেনে রাখা ভাল। কিছু শাশুড়ি নিজেরা এক সময় অপমানিত ও লাঞ্ছিত হন বলে নিজের ছেলের বউয়ের উপর সেই কর্তৃত্ব বজায় রাখতে যান। তাঁরা বিশ্বাস করেন, শ্বশুরবাড়িতে ছেলের বউকে অনেক গঞ্জনাই সইতে হয়। এই ভাবনাকে একেবারে প্রশ্রয় দেবেন না। যুগের সঙ্গে মানসিকতা পরিবর্তন যে প্রয়োজন তা ভদ্র ভাবে বুঝিয়ে দিন। শাশুড়ির পছন্দের বিষয়, পছন্দের রান্না, অসুস্থতায় সেবা করা, তাঁর জন্মদিনটা একটু অন্যরকম ভাবে পালন— এগুলো খুব কাজে আসে। আসলে দীর্ঘ দিন সংসারের জোয়াল টানতে টানতে তাঁরা খিটখিটে হয়ে পড়েন, সে ভাবে কেউ যত্ন নিচ্ছে দেখলে খুশিই হন। সকলে মিলে গল্প করুন, সময় দিন শাশুড়িকে। নিজে যতটা সম্ভব ভদ্র ও ভাল থাকার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পরেও নানা ছুতোনাতায় তিনি অশান্তি করলে চুপ করে যান। বিশেষ পাত্তা না পেলে অনেকেই এক সময় থেমে যান। তাও না হলে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবুন। কখনওই খুব অপমানিত হয়ে বা শারীরিক নিগ্রহ সহ্য করে শ্বশুরবাড়িতে থাকবেন না।
ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy