কেনাকাটা: পুরুলিয়া শহরের একটি দোকানে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
সচরাচর শেষ পাতে মিষ্টি। কিন্তু ভাইফোঁটায় ব্যাপারটা আলাদা। তখন সকাল সকাল মিষ্টিমুখ! পাড়ার ছোট্ট মিষ্টির দোকানেও এই পার্বনের আগেটায় যেন যজ্ঞিবাড়ির আয়োজন শুরু হয়ে যায়।
স্মৃতিকথায় ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরী বরিশালের গৈলার এক নামজাদা মিষ্টির ব্যাপারে বলেছিলেন। মানুষের সাধ্যে যতটা মিষ্টি করা সম্ভব, সেই মিষ্টি তেমনটাই। খাওয়ার পরে আস্ত এক ঘটি জল ঢকঢক করে খেয়ে ফেলতে হবে। সেই দিন চৌকাঠের দিকে একটা পা বাডি়য়ে বসে রয়েছে। এখন অনেকেই ‘সুগার-ফ্রি’ মিষ্টির খোঁজ করছেন ময়রার কাছে এসে। বাঁকুড়া শহরের মহুয়া মিত্র ও অনিতা মিত্রই যেমন বলছেন, “দাদার হাই সুগার। মিষ্টির দিকে হাত বাড়ানোও বারণ। কী করব?’’
এ দিকে, মিষ্টি-ছাড়া মিষ্টি ব্যাপারটা যে কাঁঠালের আমসত্ত্ব নয়, সেটাও দেখিয়ে দিচ্ছেন সাবেক কারিগরেরাই। বাঁকুড়া শহরের রানিগঞ্জ মোড়ে জয়ন্ত বরাটের দোকান। স্রেফ ছানা আর খোয়া ক্ষীর দিয়ে একটা মিষ্টি বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। নাম রেখেছেন ‘মনোরঞ্জন’। এক একটার দাম দশ টাকা। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘প্রতি বছর অনেক সুগারের রোগী আসতেন। ‘চিত্তরঞ্জন’ ছাড়া তাঁদের নেওয়ার মতো কিছুই থাকত না। তাই এই মিষ্টিটা বানালাম।’’ ‘মনোরঞ্জন’-এর কদর এমন, বৃহস্পতিবার বিকেলের আগেই সব ফুরিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বাতাসে শীতের গন্ধ একটু একটু করে টের পাওয়া যাচ্ছে পুরুলিয়ায়। আর মনে পড়ে যাচ্ছে নলেন গুড়ের কথা। জেলা সদরের বিটি সরকার রোডের একটি দোকানের মালিক সুজিত মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘নতুন গুড় উঠছে। এই মরসুমের প্রথম নলেনগুড়ের দুধপুলি রাখব ভাইফোঁটার দিন।’’ ওল্ড মানবাজার রোডের একটি দোকান আবার উত্তর ভারতের মিষ্টিতে মেতেছে। ক্ষীরের মিষ্টি। দোকানদার অলোক পোদ্দার দীর্ঘ তালিকা বলে যান—মতিচুরের লাড্ডু, দুধের লাড্ডু, ক্ষীরের বল, মেওয়া সন্ত্রা আরও কত কী!
‘ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল’ মিষ্টি বানিয়েছেন পুরুলিয়া শহরের পি এন ঘোষ স্ট্রিটের সজ্জন রাজগড়িয়া। সেখানে গেলে চোখে পড়বে কিউয়ি রাবড়ি আর চালকুমড়োর স্যান্ডউইচও। বাঁকুড়ার রামপুর এলাকার মলয় নাগ জানান, তাঁর দোকানে স্পেশ্যাল কাজু কাতরি, সরের জিলিপি আর বাটার রোলের চাহিদা ছিল তুঙ্গে।
বিষ্ণুপুরেও তো অনেকেই বলছেন, সন্ধ্যের আগে অধিকাংশ দোকানেই ভাল ভাল মিষ্টি সব প্রায় ফুরোতে বসেছিল। সেখানে স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী জগন্নাথ লাহার এ বার চমক ছিল মালাই বরফি। এক একটার দর দশ টাকা। বললেন, ‘‘দুপুরের মধ্যেই সব শেষ।’’ চাহিদা থাকায় আর এক প্রস্ত বানাতে হয়েছে জগন্নাথবাবুকে। শহরের গোপালগঞ্জ বুড়া শিবতলা এলাকার ব্যবসায়ী গৌতম মণ্ডলের তুরুপের তাস ছিল মোতিচুরের লাড্ডু। পোকাবাঁধে প্রশান্ত ঘোষের দোকানে লাইন পড়েছিল ল্যাংচা আর পান্তুয়ার জন্য।
পুরুলিয়ার রথতলার সুস্মিতা সরকার ও স্নিগ্ধা সরকারেরা সন্ধ্যায় জানালেন, মিষ্টির কেনাকাটা শেষ। তবে সকালে আবার বেরোতে হবে। নোনতার জন্য। নিতুড়িয়ার সুমনকল্যাণ রায় দুর্গাপুরে যাবেন বোনের কাছে ফোঁটা নিতে। কেনাকাটা সেরে রেখেছেন আগেভাগেই।
আর কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরেই মায়ের সঙ্গে মিষ্টি কিনতে বেরিয়ে পড়েছিলেন শহরের হুচুকপাড়ার বিদিশা কুণ্ডু। বললেন, ‘‘আজকাল দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় মিষ্টির ছবি দেওয়া শুভেচ্ছা ঘুরে বেড়ায়। মিষ্টির স্বাদ কি আর ছবিতে মেটে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy