ট্যাটু করে নজর কাড়া ব্যক্তিগত ইচ্ছের ব্যাপার। কিন্তু খুব সাবধানে ট্যাটু না করালে খুব সহজেই চামড়ার সংক্রমণ এমনকী ট্যাটুর রাস্তা ধরে এডস, টিবির মতো সংক্রামক ব্যাধি অচিরেই বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। এমনটাই সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা।
এ ব্যাপারে ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ত্বক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. অরূপ দে সরকার প্রায় ১৫ বছর হল প্র্যাকটিস করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রঙের ব্যবহার এবং সূচ জীবাণুমুক্ত না করার ফলেই অনেক জায়গা থেকে বিপদ ডেকে আনেন রোগীরা। ঠিক মতো ট্যাটু না করা হলে চামড়া ফুলে যেতে পারে, অ্যালার্জি হতে পারে। আরও নানারকমের সমস্যা হতে পারে।’’
চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ সস্তা পার্লারে অনেক সময়ই একজনকে ট্যাটু করার পর সূচ ভাল করে জীবাণুমুক্ত করা হয় না। বিদেশে অনেক জায়গায় সেই জন্য স্বেচ্ছায় বা প্রয়োজনেও রক্ত দিতে হলে দাতার গায়ে ট্যাটু থাকলে একটা নির্দিষ্ট সময় অবধি তাঁর রক্ত নেওয়া হয় না। এখানে বিশেষ করে মেলায় ট্যাটু করালে তার বিপদ অনেক। মেলায় শখের ট্যাটুর রমরমা। অনেক ছোটখাটো পার্লারেই সূচ জীবাণুমুক্ত করার দিকে কোনও নজরই দেন না ট্যাটু শিল্পীরা। তাই এগুলি জেনেবুঝে না এগোলে বিপদ পিছু নিতে পারে বলে সাবধান করছেন ডাক্তাররা। শখের খোঁজে গিয়ে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মারণ রোগ।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগে খুব অল্প কয়েকজনই ট্যাটু করাতেন। কিন্তু এখন যেভাবে ট্যাটুর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে তাতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। যারা ট্যাটু করাচ্ছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, রং ব্যবহার এগুলি নিয়ে অন্তত কোনও শংসাপত্রের ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে ট্যাটু করাতে গিয়ে এই সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন দেহ রাঙানোর ইচ্ছুকরা।
ডাক্তাদের মতে, আরও একটি বড় জায়গা হচ্ছে, ট্যাটু তোলা। ট্যাটু করার পর মানসিক সন্তষ্টি না মিললে অনেক সময়ই সেগুলি তোলার দিকে এগোন অনেকেই। তাদের ইচ্ছে থাকে, শরীর থেকে ট্যাটু তুলে ফের নতুন করে সেগুলি করার। কিন্তু সেক্ষেত্রেও সাবধানে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। তাঁদের দাবি, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সংস্থা বা ত্বক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছেই যেন মানুষ যান। কেন না, ট্যাটু চামড়ার কতটা গভীরে গিয়ে রঙ ঢালছে, তা এখনও শিল্পীদের আন্দাজের উপরেই নির্ভর করে হয়। সূচ যদি অনেক গভীরে গিয়ে রঙ দেয় তবে তা তোলা বেশ কষ্টকর।
ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করেই পিগমেন্ট রিমুভাল বা রঙ তোলার কাজ হয়। সেক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে ট্যাটুর আকার এবং রঙের ঘণত্ব অনুসারে। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, কালো এবং নীল রঙ যেমন সহজেই উঠে যায়। লাল, হলুদ সবুজ রঙ তোলা যথেষ্ট কষ্টকর। ট্যাটু তুলতে ৬-১০টি সিটিং বা বড় হলে ১৫-২০ দিনও ডাক্তারদের কাছে যেতে হতে পারে। ট্যাটু শিল্পীরা অবশ্য জানাচ্ছেন সব রকম সাবধানতাই তাঁরা নিয়ে থাকেন। তবে গ্রাহকদেরও সাবধান থাকতেন পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy