Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Taslima Nasrin

বেশি বয়সি পুরুষের যৌনক্ষমতা থাকা গর্বের, বেশি বয়সি নারীর লজ্জার! ফের তসলিমার ‘সুমনামি’ পোস্ট?

লেখিকা তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “নারী-পুরুষে এই বৈষম্য যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন নারী-স্বাধীনতা দরজা-জানলার জন্য অপেক্ষা করবে না, ঘুলঘুলি পেলেই পালাবে।”

A picture shows Taslima Nasrin posts comparing Women’s Sexual desire and Men

‘লজ্জা’র লেখিকার ফেসবুক পোস্টে সমাজের বৈষম্য। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ২৩:১৪
Share: Save:

একজন অশীতিপর পুরুষ সদর্পে বলতে পারেন, বয়স হলেও তিনি যৌনসক্ষম। কিন্তু একই কথা যদি অশীতিপর নারীর মুখে শোনেন! কী হবে সমাজের প্রতিক্রিয়া? সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে এই প্রশ্নই ছুড়ে দিলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বিতর্কের সূত্রপাত নিজের ৭৫তম জন্মদিনের ঠিক আগে কবীর সুমনের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে সুমন ‘ফাঁস’ করেছিলেন, এই বয়সেও তাঁর অফুরান ‘এনার্জি’র রহস্য হল ‘কাম’! সেই সাক্ষাৎকার পড়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তসলিমা। এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আবারও তসলিমা পোস্ট করলেন সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে। সেখানেই ‘সমাজের বৈষম্য’ নিয়ে লেখিকার কলমে ঝরে পড়ল কটাক্ষ আর শ্লেষ।

জন্মদিনে সুমন আনন্দবাজার অনলাইনকে সাফ জানিয়েছিলেন, এই ৭৫ বছর বয়সেও তিনি ‘‘বিছানায় চূড়ান্ত ভাবে সক্ষম।’’ তাঁর আরও দাবি ছিল, ‘‘আঁতলামি নয়, প্রেম করতে হবে শরীর দিয়ে।’’ এর ৪৮ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই তসলিমা সেই সমাজমাধ্যমকেই হাতিয়ার করে প্রশ্ন তুললেন, বেশি বয়সি পুরুষের যৌনক্ষমতা থাকা যদি ‘গর্বের’ বিষয় হয়, তা হলে কি নারীর ক্ষেত্রেও তা ‘গর্বের’ বলে বিবেচিত হবে? না কি সমাজের চোখে তা লজ্জার? গোটা পোস্টে একবারও সুমনের নাম করেননি তসলিমা। লিখেছেন অশীতিপর পুরুষের কথা। সুমন সদ্য ৭৫-এ পা রেখেছেন। যদিও এই পোস্টের সময়কাল এবং বিষয়বস্তু দেখে মনে করা হচ্ছে, সুমনের জন্মদিন-মন্তব্যকেই আবার নিশানা করেছেন লেখিকা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পোস্টে তসলিমার দাবি, একজন অশীতিপর বৃদ্ধ নিজের যৌন পারদর্শিতার কথা সদর্পে বলতে পারেন। বয়সের কারণে যৌনক্ষমতা কমে গেলেও বিভিন্ন যৌনউত্তেজক বড়ি খেয়ে সেই সীমাবদ্ধতা অনায়াসে অতিক্রমও করা যায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তসলিমার প্রশ্ন, একই কথা যদি একজন অশীতিপর বৃদ্ধার মুখে শোনেন, কী প্রতিক্রিয়া হবে সমাজের? তিনি লিখেছেন, ‘‘বেশি-বয়সি পুরুষের যৌনক্ষমতা থাকা গর্বের ব্যাপার, আর বেশি-বয়সি নারীর যৌনক্ষমতা থাকা লজ্জার ব্যাপার। এই বৈষম্য যত দিন টিকে থাকবে তত দিন নারী-স্বাধীনতা দরজা-জানলার জন্য অপেক্ষা করবে না, ঘুলঘুলি পেলেই পালাবে।’’

যৌনতা নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ছুঁতমার্গ বহু প্রাচীন। সামাজিক কাঠামো পুরুষকে যৌনাচার নিয়ে খোলামেলা দাবি করার স্বাধীনতা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এখনও তা ঢাকাচাপা দেওয়ার বিষয় হয়েই রয়ে গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই পুরুষতান্ত্রিক ধারণার বদল হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার গতি অতি শ্লথ। ফলে পুরুষের কাছে যে জিনিস বুক বাজিয়ে নিজের ক্ষমতা জাহিরের বিষয়, তা এখনও নারীদের কাছে চূড়ান্ত লজ্জার। ‘লজ্জা’র লেখিকার সাম্প্রতিকতম পোস্টের ছত্রে ছত্রেও সেই বৈষম্যের কথাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE