গত শুক্রবার শরীরটা একটু খারাপ লাগছিল। আসলে পরিশ্রমও তো হচ্ছে। এপ্রিল মাস থেকে সেই অর্থে কোনও বিশ্রাম নেই। পেশায় একজন শল্যচিকিৎসক হওয়ায় রোগী দেখার চাপ তো ছিলই। তার উপর করোনার কারণে অতিরিক্ত সতর্কতাও রয়েছে। যাইহোক, শরীর ভাল না লাগায় শুক্রবার কাজে যাইনি। মনের মধ্যে একটা সন্দেহ হচ্ছিল। প্রথমেই বাড়ির একটা ঘরে আলাদা থাকতে শুরু করলাম। শৌচাগারও আলাদা। এমনকি, বাসন, জলের বোতল সবটাই আলাদা করে নিলাম। সঙ্গে রাখলাম একটা জল গরম করার হিটার, স্যানিটাইজারের একটা বোতল। কোনও গন্ধ পাচ্ছিলাম না মঙ্গলবার বিকেল থেকে। পাঁচ দিনের মাথায় বুধবার সকালে নিজেই গাড়ি চালিয়ে চলে গেলাম বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াব টেস্ট করতে। বাইপাসের ধারে এই হাসপাতালের বাইরে একেবারে আলাদা জায়গায় ফিভার ক্লিনিকে বিধি মেনেই সোয়াব সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানেই দুপুর ১২টা নাগাদ নমুনা দিলাম আরটিপিসিআর পরীক্ষার জন্য। রাত ৯টায় জানতে পারলাম আমি কোভিড পজিটিভ। হ্যাঁ ঠিক আছে, কোভিড পজিটিভ মানেই যে সমাজচ্যুত, এমনটা তো নয়। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। নিয়ম মেনে থাকব ১৭ দিন। ৫ অগস্ট রিপোর্ট এসেছে আমার, ২২ অগস্ট পর্যন্ত নিজের দরজার বাইরে বেরোব না। তার পর আইসিএমআর-এর নিয়ম অনুযায়ী বাইরে বেরোলে কোনও অসুবিধা নেই।
বাড়িতে আলাদা ঘরেই থাকছি, সবটাই আলাদা করেছিলাম আগেই। আমার স্ত্রী ও ছেলেও আলাদা রয়েছেন অন্য ঘরে। খানিকটা মানসিক প্রস্তুতিও ছিল আগে থেকে। তবে শুধু পরিবারের সদস্যরাই নন, নিউ টাউনে আমি যে আবাসনে থাকি, সেই আবাসনের সদস্যরাও কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন মে মাস থেকেই। নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তরফে বার বার আতঙ্ক দূরে রেখে পরস্পরের পাশে থাকতেও বলা হয়েছিল।এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন খুবই সাহায্য করেছেন।
‘নিউ টাউন ফোরাম অ্যান্ড নিউজ’ নামে একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। সেখানে আমাদের ডাক্তারদের পরামর্শেই আবাসনগুলিতে কোভিড যুদ্ধে পাশে থাকার জন্য প্রথম থেকেই বার বার সচেতন করা হয়েছিল। তাই একটা টিম তৈরি ছিল।