প্রতীকী ছবি।
কারও ওজন একশো কেজি ছাড়িয়েছে, কারও সেই অঙ্ক ছুঁই ছুঁই। গাঁটে গাঁটে ব্যথা তো আছেই, পাশাপাশি দেহে মেদ বাড়ার জন্য বাড়ছে হার্টের সমস্যাও। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৫ জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়ার মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে স্থূলতার এমন বহর দেখে তাজ্জব সমীক্ষকেরা। তাই তাঁদের সচেতন করতে এবং সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে আগামী মাসে কর্মশালার আয়োজন করছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা পৃথা ভট্টাচার্য ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েক জন গবেষক।
ডায়েটিশিয়ানরা জানাচ্ছেন, রোজকার জীবনে এখন ব্যস্ততা বেড়েছে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে বাড়ছে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির নিয়ম না মেনে খাওয়া। তা-ই ডেকে আনছে বিভিন্ন সমস্যা। কাজের চাপ তো আছেই, তার উপরে দেহে মেদ বাড়ার কারণে রক্তচাপ এবং মনের উপরে চাপ— দু’টোই বাড়ছে হু হু করে। ততই হার্টের সমস্যায় কাবু হচ্ছেন তরুণ থেকে প্রবীণ। সুস্থতার প্রথম শর্তই হল স্থূলতা বর্জন। কিন্তু প্রতি পদে এই সমস্যা যে ভাবে চেপে বসছে, তা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেই এই কর্মশালা বলে জানিয়েছেন পৃথাদেবী।
ওই শিক্ষিকা জানান, স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আছেন একদল গবেষকও।
তাঁরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, অন্তত ৫০ শতাংশ স্থূলতার শিকার।
তাঁদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আবার চরম ঝুঁকির (রিস্ক জোন) পর্যায়ে রয়েছেন। এর ফলে ওই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-পড়ুয়াদের কর্মক্ষমতা যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনই শারীরিক দিক থেকেও তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়ছেন। পৃথাদেবী জানাচ্ছেন, রোগ কমিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রথম প্রয়োজন সচেতন হওয়া। তাই কর্মশালার প্রথম পর্বে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়াদের দেওয়া হবে সচেতনতার পাঠ। দ্বিতীয় পর্যায়ে হবে রক্ত পরীক্ষা। তার রিপোর্ট দেখে পরামর্শ দেবেন চিকিৎসক।
ওই কর্মশালায় থাকবেন ডায়েটিশিয়ান এবং যোগাসনের প্রশিক্ষকেরাও। ডায়েটিশিয়ানরা শরীরের ওজন, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খাদ্য তালিকা তৈরি করে দেবেন। আর বয়স এবং ওজন অনুযায়ী কী কী ব্যায়াম প্রয়োজন, তা বলে দেবেন যোগাসনের প্রশিক্ষক। পুরোটাই হবে বিনামূল্যে। জানা গিয়েছে, আগামী মাসে চার সপ্তাহে চার দিন এই কর্মশালা হবে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে। যে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়ারা রিস্ক জোন-এ আছেন, তাঁরা থাকবেন প্রথম দিনের কর্মশালায়।
পৃথাদেবী বলেন, ‘‘এক দিন কর্মশালা করলেই যে সকলে রোগা হয়ে যাবেন তেমন নয়। কিন্তু মোটা হওয়ার কারণে যে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে এবং এই স্থূলতা যে পরবর্তীকালে আরও সমস্যা ডেকে আনতে পারে, সেটাই তাঁদের বোঝানো হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’’
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে
• শরীরে কতটা খাবার প্রয়োজন, আগে জানুন
• কম পরিমাণে, বার বার খান
• বাইরের খাবার, বিশেষত ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন
• আবশ্যিক হোক শারীরচর্চা
• ভারী প্রাতরাশ করুন, রাতের খাবার হোক অল্প
ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘এমন উদ্যোগ খুবই ভাল। আসলে সমস্ত রোগের মূলে স্থূলতা। ব্যথা, মানসিক চাপ, রক্তচাপ বাড়া তো আছেই, হৃদ্রোগ এবং ডায়াবিটিসের আশঙ্কাও অনেক বেড়ে যায় এর জন্য। তাই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা উচিত।’’ ‘‘এখন তো বাড়ি থেকে খাবার আনার বদলে বাইরের খাবারেই মানুষ বেশি অভ্যস্ত। এটা ঠিক নয়।’’— বলেন তিনি। আর এক ডায়েটিশিয়ান অর্পিতা ঘোষদেব বলেন, ‘‘কার শরীরে কতটা খাবার প্রয়োজন, সেটা সবার আগে জানতে হবে। এর পরে নিয়ম মেনে চলতে পারলে সমস্যা মিটবে। সঙ্গে আবশ্যিক থাক যোগ-ব্যায়াম। এ রকম একটি বিষয় নিয়ে সমীক্ষা ও কর্মশালা হচ্ছে, তা সাধুবাদ যোগ্য।’’
একই কথা বলছেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এটা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে। স্থূলতার কারণে ক্যানসারের আশঙ্কাও থাকে। ফাস্ট ফুডের
থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দূরে রাখার জন্য এমন কর্মশালা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy