Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আফগানি চিকেন, সঙ্গে থাই, খদ্দের ধরতে ওয়াই-ফাই

মা, কাকিমা ময়দা মাখছেন। অষ্টমীর লুচির। এ ছবি এখন কিছুটা ফিকে। অষ্টমীর লুচি-ছোলার ডাল, নবমীর মাংসের ঝোলেরও খোঁজ চলে রেস্তোরাঁয়। পুজোর খাবারের খোঁজ আনন্দবাজারেমা, কাকিমা ময়দা মাখছেন। অষ্টমীর লুচির। এ ছবি এখন কিছুটা ফিকে। অষ্টমীর লুচি-ছোলার ডাল, নবমীর মাংসের ঝোলেরও খোঁজ চলে রেস্তোরাঁয়। পুজোর খাবারের খোঁজ আনন্দবাজারে

মেদিনীপুর শহরের লাইব্রেরি রোডের এক রেস্তোরাঁয়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুর শহরের লাইব্রেরি রোডের এক রেস্তোরাঁয়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০১
Share: Save:

বহু বছর আগের কথা। তখন পুজোর চারদিন খবরের কাগজ বেরনো বন্ধ থাকত। সেজন্য ষষ্ঠীর দিনে প্রতিটি পত্রিকাই অতিরিক্ত কাগজ দিত। সেসব সাপ্লিমেন্টে ফিচার ধর্মী লেখায় ঠাসা থাকত। বহু ধরনের ফিচারের মধ্যে একটা বিষয় থাকতই। তারকারা পুজোর চারদিন কী খাবেন, কী খেতে ভালবাসেন, ছোটবেলায় কী খেতেন সেসব কাহিনি। অষ্টমীতে লুচি, আলুর দম, ছোলার ডাল তো। নবমীতে বড় আলু দিয়ে বাটি ভর্তি পাঁঠার মাংসের ঝোল আর গরম ভাত। এসব থাকতই। কিন্তু একবারের পুজোয় সকলকে চমকে দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। কবি জানিয়েছিলেন, অষ্টমীর নিরামিষে তিনি খেতে ভালবাসেন, গরম ভাতের সঙ্গে সোনামুগের ডাল আর আলুর খোসা ভাজা। ঝিরিঝিরি করে আলু ভাজা নয়, লম্বা ফালির বেগুন ভাজা নয়। আলুর খোসা ভাজা!

বছর দুয়েক পরে পুজোর ছুটির আগের খবরের কাগজে চমক এল এক রেস্তোরাঁ থেকে। তারা পুজোর চারদিন বাঙালি খাবারের আয়োজন করেছে। খাওয়ানো হবে কলাপাতায়। পাশে সেই পুরনো যুগের অনুষ্ঠান বাড়িতে জল খাওয়ার মাটির খুরি। পাওয়া যাবে শুক্তো, মাছের মাথা দেওয়া পুঁইশাকের ঘ্যাঁটও।

পুজোর চারদিন খাওয়ার স্বাদ বদলের ইচ্ছা থাকেই। তবে সেই বদলে চিরাচরিত বাঙালি খানার সঙ্গে বিদেশি পদেও আগ্রহ থাকে। হোটেল, রেস্তোরাঁগুলো অভিজ্ঞতা থেকেই বাঙালি রসনার খোঁজ জানেন। যেমন মেদিনীপুরে। কোথাও ফুড ফেস্টিভ্যালও চলবে। থাকবে মহাভোজের আয়োজন! অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কয়েকটি পদের মধ্যে যাই খান না কেন, দাম নির্ধারিত। থাকতে পারে বুফেও। শহরের এক রেস্তোরাঁর কর্ণধার অরুণাভ ঘোষের কথায়, “পুজোর সময় বিভিন্ন রকম খাবারের ব্যবস্থা থাকে। অনেকেই বাড়ির বাইরে খেতে পছন্দ করেন। তাই ভাল ভিড়ও হয়।’’

কী কী পদ থাকছে পুজোয়? কোথাও মেনুতে থাকছে ভাত, শাকভাজা, শুক্তো, চচ্চড়ি, ডালনা, লাউ চিংড়ি, মাছের নানা মেনু। থাকছে আলু পোস্ত, মাছের ঝোল, মাছের টক। শেষ পাতে চাটনি, পায়েস, দই, মিষ্টি। কমবেশি প্রায় সব রেস্তোরাঁ, হোটেলেই মিলবে চাইনিজ এবং কন্টিনেন্টাল পদ। চাউমিনের সঙ্গে ফ্রায়েড রাইস, অমৃতসরি চিকেনের পাশে আফগানি চিকেন। অমৃতসরি চিকেন একটু মশলাদার হয়। আফগানি চিকেনের স্বাদও হয় একটু অন্য রকম। স্টার্টার হিসেবে স্যুপের নানারকম তো থাকছেই। মেন কোর্সে অমৃতসরি ফিস, বাটার ফিস মশালা, মেথি রাইস প্রভৃতি। তিতাস দাসের কথায়, “রোজ একঘেয়ে খাবার খেতে কার আর ভাল লাগে!’’

হলদিয়ার সিটি সেন্টারে একাধিক মোগলাই রেস্তোরাঁ রয়েছে। এক রেস্তোরাঁর কর্ণধার শেখ মইনুদ্দিন বললেন, ‘‘এবার আমরা বেঙ্গালুরু থেকে বাবুর্চি এনেছি।’’ তাঁর রেস্তোরাঁয় চাখা যাবে চিকেন ঘি রোস্ট, চিকেন ঝাল মশলা, মুঘল মাটন। সঙ্গে রয়েছে নতুন মকটেল সেন্টার। বাবুর্চি এনে আরও দু’টি মোগলাই রেস্তোরাঁও প্রস্তুত। সঙ্গে চাইনিজ, থাই খানাও থাকছে। এক হোটেলের কর্ণধার মানস বসু জানান, তাঁরা চিংড়ির নানা পদ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। লাউপাতায় চিংড়ি ভাপা, চিংড়ি গোল্ডেন ফ্রাই, চিংড়ি দম পোলাওয়ের সঙ্গে বরিশালি চিংড়ি মালাই। মাস খানেক ধরে এই পদের জন্য হোম ওয়ার্ক করা হয়েছে। আনা হয়েছে বিশেষজ্ঞ রাঁধুনিও। গ্রাহক ধরে রাখতে ‘ওয়াই-ফাই ফ্রি’ অফার দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। কম বয়সি গ্রাহকদের টানতেই এই সুবিধার কথা ভাবা হয়েছে। রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই সব রেস্তোরাঁ। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ প্রতিযোগিতা করে হলদিয়ায় বিভিন্ন শিল্প সংস্থার আধিকারিকদেরও জন্য রয়েছে কর্পোরেট প্যাকেজ। সেখানে দেদার ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রানিচকের এক হোটেলে পুজোর ক’দিন থাকছে ইলিশ-সহ নানা মাছের আইটেম। চৈতন্যপুরের এক হোটেল বাঙালিয়ানার জন্য খ্যাত। মহিষাদলের এক হোটেল চাইনিজ আইটেমের পরিবর্তন আনছে।

কাঁথি শহরে মোগলাই খানায় ঝোঁক থাকে যথেষ্ট। কাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি রেস্তোরাঁ ও হোটেল নতুন হয়েছে। তারা গতানুগতিক পদই তৈরি করেন। তবে ইলিশের চাহিদা থাকে।

ঝাড়গ্রাম শহরে ভাল মানের রেস্তোরাঁ দু’একটি। তবে পুজোর মরসুমে ছোট বড় সব রেস্তোরাঁতে স্পেশ্যাল মেনু থাকে। শহরে রাজবাড়ি মাঠের লাগোয়া জয়দীপ মল্লদেব পরিচালিত রেস্তোরাঁয় সারা বছর চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টাল সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। জয়দীপ জানালেন, পুজোয় হেঁশেল সামলাতে এক জন হেড কুকের নেতৃত্বে সাতজন কুক রয়েছেন। পুজোর ভিড়ের জন্য প্রচলিত কয়েকটি মেনু সপ্তমী থেকে দশমী অবধি মিলবে না। তবে পাওয়া যাবে স্পেশ্যাল চিকেন তন্দুরি, পনির টিক্কা, ফিস টিক্কা, চিকেন রেশমি কাবাব, মাটন বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, ভেজ বিরিয়ানি। থাকছে নানা ধরনের স্যুপ। এখানকার গার্লিক চিকেন বিশেষ জনপ্রিয়। এ ছাড়া রয়েছে স্পেশ্যাল মশলা কোল্ড ড্রিংকস।

রবীন্দ্র পার্কে একটি গার্ডেন রেস্তোরাঁয় পুজোর দুপুরে মিলবে আমিষ ও নিরামিষ থালি। সরু চালের ভাত, সপ্তমীতে ইলিশ, অষ্টমীতে পমফ্রেট, নবমীতে পাবদা, চিংড়ি, মাটন, ভেটটির পাতুরি। লাঞ্চ-ডিনার ছাড়াও পুজোর দিনগুলির সন্ধ্যায় মিলবে ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ সব রকমের খাবার। হোটেলের মালিক অর্ক সমাজদার বলেন, “পুজোর জন্য রাঁধুনির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। আরও দু’জন কুককে নিয়ে আসা হচ্ছে।’’ নিউ বাসস্ট্যান্ড রোডের একটি রেস্তোরাঁয় এবার তিন রকমের তন্দুরি খাবার মিলবে। রেশমি কাবাব, চিকেন টেংরি কাবাব, টিক্কা কাবাব। থাকছে স্পেশ্যাল ভেজ পোলাও। মালিক কৌশিক মহাপাত্র বলেন, “পুজোর জন্য রাঁধুনি ও সার্ভিস কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিল তিন জন রাঁধুনি। এখন ৯ জন কুক।’’ ঝাড়গ্রাম শহরের ফাস্ট ফুড সেন্টারগুলোও পুজোয় নতুন মেনু রাখছে। কদমকানন রেল গেটের কাছে একটি ফাস্ট ফুড কেন্দ্রের মালিক জগদীশ প্রধান বলেন, সারা বছরের রোল, কাটলেট, চাউমিনের সঙ্গে পুজোয় থাকছে ফ্রায়েড রাইস আর কষা মাংস। গ্রাহকেরা বসে খেতে পারেন। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

তথ্য: বরুণ দে, আরিফ ইকবাল খান, শান্তনু বেরা, কিংশুক গুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE