বিভিন্ন প্রতিষেধকের মধ্যে তুলনা একদমই উচিত না। ছবি: সংগৃহীত
এই প্রতিষেধকের এফিকেসি ৭০ শতাংশ। অন্যটার ৯৫ শতাংশ। তা হলে কি ওটা বেশি ভাল? দ্বিতীয়টাই নেওয়া উচিত? এই ধরনের নানা প্রশ্নে মানুষ বিভ্রান্ত। এফিকেসির সংখ্যা দেখে বিভিন্ন প্রতিষেধকের মধ্যে তুলনা একদমই উচিত না। কেন? বুঝতে গেলে আগে বোঝা উচিত এফিকেসি কী এবং সেটা কী ভাবে বার করা হয়।
এফিকেসি কী
প্রতিষেধক নেওয়া একদল মানুষের মধ্যে সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটা কমছে, সেটাই এফিকেসি। কোভ্যাক্সিন আর কোভিশিল্ডের এফকেসি আলদা। তা হলে কি একটা অন্যের তুলনায় বেশি কাজ দেয়? আদপে তা নয়। একটি প্রতিষেধক একজন মানুষের শরীরে কতটা কাজ দেবে, তার সঙ্গে এফিকেসির সংখ্যার কোনও সম্পর্ক নেই।
কী ভাবে এই সংখ্যাটা বার করা হয়
যে কোনও নতুন প্রতিষেধকের পরীক্ষা পর্বে হাজার হাজার মানুষকে বেছে নেওয়া হয় একটি স্যাম্পল স্টাডি করার জন্য। এই সমীক্ষায় তাঁদের দু’দলে ভাগ করে দেওয়া হয়। একদল যাঁদের প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। অন্য দল যাঁদের দেওয়া হচ্ছে ঝুটো প্রতিষেধক। কিন্তু তাঁরা সে বিষয়ে জানেন না। এই দলকে বলা হয় প্লাসিবো দল। এবার এই দুই দলের উপর মাসের পর মাস চলতে থাকে নজরদারি। দুই দলই সাধারণ জীবনযাপন করেন। যখন তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়, তখন সেই সংখ্যাটা এবং অসুখের নানা উপসর্গ গবেষকেরা লিখে রাখেন।
কী ভাবে এফিকেসি মাপা হয়, সেটা বুঝতে আমরা ফাইজারের কেস স্টাডিটা দেখতে পারি। ৪৩ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই গবেষণায়। তার মধ্যে ১৭০ জন কোভিড-সংক্রমিত হন। এবার ধরুন যে দল প্রতিষেধক নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে যদি ৮৫ জন সংক্রমিত হন, এবং যাঁরা প্লাসিবো নেন, তাঁদের মধ্যেও যদি একই ভাবে ৮৫ জন সংক্রমিত হন, তা হলে প্রতিষেধকের কোনও এফিকেসি থাকবে না। অথাৎ ০ শতাংশ। কারণ এর মানে প্রতিষেধক নেন বা না নেন, সংক্রমণের সম্ভাবনা একই। যদি ধরুন ১৭৫ জনই প্লাসিবো দলের মধ্যে থেকে সংক্রমিত হন, তা হলে প্রতিষেধকের এফিকেসি ১০০ শতাংশ। মানে প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে কোনও মানুষেরই সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বাস্তবে ফাইজারের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ১৭০ জনের মধ্যে প্রতিষেধক নেওয়া দলে ৮ জন সংক্রমিত হন। এবং প্লাসিবো দল থেকে ১৬২ জন সংক্রমিত হন। এর মানে ফাইজার প্রতিষেধকের এফিকেসি ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ যাঁরা প্রতিষেধক নেননি, তাঁদের তুলনায় যাঁরা নিলেন, তাঁদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা ৯৫ শতাংশ কম। কিন্তু কোনও প্রতিষেধকের এফিকেসি ৯০ শতাংশ দেখে এটা ধরে নেওয়া যাবে না যে, ১০০ জন প্রতিষেধক নিলে তার মধ্যে ৫ জনের সংক্রমণ হবে।
কেন এফিকেসি দিয়ে প্রতিষেধকের তুলনা হয় না
কী ভাবে এফিকেসি মাপা হচ্ছে, সেই পদ্ধতি বোঝার পর আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, আরও অনেকগুলি বিষয়। যাঁদের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাঁদের প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা এক নয়। কোথায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটাও জরুরি। ভারতে পরীক্ষা হচ্ছে নাকি ব্রিটেনে। কারণ দুই দেশের ভাইরাসের আলাদা রূপ হতে পারে। কখন পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটাও জরুরি। ধরুন অতিমারির শরুর দিকে কোনও প্রতিষেধকের পরীক্ষা চলছিল, তাঁর এফিকেসি অনেক বেশি হতে পারে। অন্য প্রতিষেধকের পরীক্ষা হয়ত আরও দেরিতে শুরু হয়েছে। ততদিনে ভাইরাস রূপ পরিবর্তন করে আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। তা হলে এফিকেসি কম হতে পারে। তাই দু’টো প্রতিষেধকের তুলনা করতে গেলে, তাদের পরীক্ষা একই পরিস্থিতিতে একই মানুষদের উপর করতে হয়।
তা হলে কোন প্রতিষেধক বেশি কার্যকরী
যে প্রতিষেধক আপনার কাছে সহজলভ্য সেটাই নেওয়া উচিত। কারণ প্রতিষেধকের কাজ ভাইরাস মুছে দেওয়া নয়। ভাইরাসের প্রভাবে আপনার শরীরে যাতে গুরুতর না হয় যায় সেটা দেখা। যে ক’টা প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত বাজারে এসেছে, সেগুলির প্রত্যেকটাই এই কাজে সক্ষম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy