Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Cancer

বিশ্ব ক্যানসার দিবস: শপথ নিন লড়াই করার

একটা সময় ছিল, যখন ক্যানসারের কোনও অ্যানসার ছিল না। কিন্তু আজ ক্যানসারকে মুখের মতো জবাব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ। আর এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি আমি, আপনি আমরা সবাই। দরকার সচেতনতা। বিশ্ব ক্যানসার দিবসে এই শত্রুকে জীবন থেকে গেট আউট করার শপথ নিতে বললেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা গৌতম মুখোপাধ্যায়। সংখ্যাটা হাড় হিম করে দেওয়ার মতোই। আমাদের দেশের ২৫ লক্ষ মানুষ মারণ ক্যানসারের সঙ্গে সহবাস করছেন। ৫,৫৬, ৪০০ জন ক্যানসারের আক্রমণে প্রাণ হারান প্রত্যেক বছর। এদের গড় বয়স ৩০ থেকে  ৬৯ বছর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৩:৪২
Share: Save:

সংখ্যাটা হাড় হিম করে দেওয়ার মতোই। আমাদের দেশের ২৫ লক্ষ মানুষ মারণ ক্যানসারের সঙ্গে সহবাস করছেন। ৫,৫৬, ৪০০ জন ক্যানসারের আক্রমণে প্রাণ হারান প্রত্যেক বছর। এদের গড় বয়স ৩০ থেকে ৬৯ বছর। আর প্রতি বছর ১২ লক্ষ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের রাজ্যে ৩ লক্ষেরও বেশি করাল কর্কটের শিকার। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ৭৫ হাজার জনেরও বেশি নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। শহরের মেয়েদের মধ্যে আবার ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রবণতা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে এই হারে অসুখ বাড়তে থাকলে আগামী ২ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২০ সালে আমাদের দেশের প্রতিটি পরিবারে ক্যানসার পৌঁছে যাবে। অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা করাল কর্কটকে জীবন থেকে ডিলিট করে দিতে পারি।

ক্যানসার দিবসের শপথ

উই ক্যান, আই ক্যান … কী পারি আমি ও আমরা? ক্যানসার নামক ভয়ানক অসুখের থাবাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারি। এটাই এ বারের ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে-র থিম। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও আইএআরসি অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে পালন করা হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড ক্যানসার ডে। ক্যানসার প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার নির্ণয় করার ওপর সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করার উদ্দেশ্যে হল ক্যানসার দিবসের পরিকল্পনা।

আরও পড়ুন: রাতে বারবার বাথরুম দৌড়তে গিয়ে ঘুম নেই? প্রস্টেট পরীক্ষা করিয়ে নিন

বাড়তি ওজনে ঝুঁকি বাড়ে

কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিই ক্যানসার নামক মারাত্মক অসুখের অন্যতম উপসর্গ। কোনও নির্দিষ্ট কারণকে এখনও পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়নি। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত এই অসুখটির জন্য দায়ী একাধিক কারণ। অর্থাৎ এটি একটি মাল্টি ফ্যাকটোরিয়াল ডিজিজ। তামাক আর ক্যানসার প্রায় সমার্থক। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যাবতীয় ক্যানসারের এক তৃতীয়াংশ তামাক জনিত। মুখ থেকে ফুসফুস সমস্ত ক্যানসারের পিছনে অন্যতম ভিলেন তামাক। সিগারেট, বিড়ি, গুটখা, খৈনি সহ যাবতীয় তামাক করাল কর্কট ডেকে আনে। তামাক ছাড়াও কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির অন্য কারণ বাড়তি ওজন। ওজন নিয়ন্ত্রণ না করলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া ফুড খাদ্যাভ্যাসও এই অসুখের জন্যে দায়ী। চর্বি জাতীয় খাবার, কাবাব, রেড মিট, ডিপ ফ্রাই, অতিরিক্ত চিনি ইত্যাদি নিয়ম করে খেলে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্কটে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আর রয়েছে অঙ্কোজিন। অর্থাৎ বংশগত সূত্রে এই রোগের ঝুঁকি আছে। সেডেন্টারি লাইফস্টাইলও ক্যানসার ডেকে আনতে পারে।

আরও পড়ুন: পুরুষদেরও জীবনে আসে ‘মেনোপজ’!

বায়োপসি করলে রোগ বাড়ে না

তখন রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অত্যাচারে মানুষ বিধ্বস্ত। বিপ্লবীদের কেউ হয়তো মাতৃজঠরে। ১৮৭৫ সাল। বিপ্লব তখন দূর অস্ত। ঠিক সেই সময়ে ও দেশের এক চিকিৎসা বিজ্ঞানী এমএম রুদনেভ এক জটিল অসুখ নির্ণয় করতে প্রথম বায়োপসি করেন। মেডিক্যাল সায়েন্সের ইতিহাসে সেই প্রথম রোগ নির্ণয়ে বায়োপসির প্রয়োগ। তারপর ভল্গা নদীতে অজস্রবার জোয়ার ভাঁটা হয়েছে। বিভিন্ন অসুখ নির্ণয়ে বায়োপসি এখন সব দেশেই স্বীকৃত। প্রথম বায়োপসির পর কেটে গিয়েছে ১৪৩ বছর। অনেক উন্নত হয়েছে পদ্ধতি। এসেছে উন্নতমানের সূক্ষাতিসুক্ষ নিডল। রোগীর কষ্ট অনেক কমানো হয়েছে। কিন্তু বায়োপসি নিয়ে ভয় আর আতঙ্ক এখনও বেশিরভাগ মানুষকে তাড়া করে বেড়ায়। অনেকের কাছেই বায়োপসি আর ক্যানসার সমার্থক। টিউবারক্যুলোসিস, ত্বকের অসুখ সোরিয়াসিস সহ নানান রোগ নির্ণয়ে বায়োপসি করতে হয়। এ ছাড়া অসুখের খুঁটিনাটি জানতেও বায়োপসির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা বায়োপসি মানেই হু হু করে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়বে শরীর জুড়ে। ক্যানসার তো আর সরবত নয় যে চামচ দিয়ে নেড়ে দিলেই ছড়িয়ে পড়বে! আসলে আর্লি স্টেজে ক্যানসার ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে রোগটাকে জব্দ করা যায় সহজেই। ক্যানসার প্রতিরোধের চেষ্টা করার পাশাপাশি শুরুতে ক্যানসার নির্ণয় করলে সঠিক চিকিৎসায় দ্রুত রোগ সারানো যায়। তাই ক্যানসার সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োপসি করাতে ভয় পাবেন না। এই আতঙ্ক দূর করতে না পারলে ক্যানসারকে জব্দ করা মুশকিল।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে জেহাদ

ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই-এর প্রথম শর্ত তামাকের সঙ্গে ডিভোর্স। সিগারেট, বিড়ি, গুটখা, খৈনির সঙ্গে চির বিচ্ছেদ না করলে এই অসুখের থাবা থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। রোজকার ডায়েটে থাকুক পর্যাপ্ত ফল ও সময়ের সবজি। ফাস্ট ফুড ও ডিপ ফ্রাই কম খাওয়া ভাল। ওজন স্বাভাবিক রাখতে সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ বা ব্রিক্স ওয়াকিং মাস্ট। রাত জাগবেন না, কম ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। কৃত্রিম রং ও প্রিজার্ভেটিভ দেওয়া খাবার কম খাওয়া উচিৎ। টোম্যাটো, গাজর, তরমুজ, বিট, ব্রকোলি, কুমড়ো সহ রঙিন সবজি ও ফল ক্যানসার সহ অনেক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ৪০ পেরোলে বছরে এক বার হেলথ চেক আপ করুন। কোনও সন্দেহ হলে ক্যানসার বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। অতিরক্ত স্ট্রেস এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়, মন ভাল রাখুন, ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE