Advertisement
E-Paper

এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে প্রচারপত্র গ্রামে

জেলায় এখনও পর্যন্ত জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তবে এই রোগের ব্যাপারে গ্রামে গ্রামে প্রচারপত্র বিলি করে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা জানাল বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এর সঙ্গে জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রথমে ম্যালেরিয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩০
কালনার হাটগাছায় শোকার্ত মেনিঙ্গো এনসেফ্যালাইটিসে মৃতের মা।—নিজস্ব চিত্র।

কালনার হাটগাছায় শোকার্ত মেনিঙ্গো এনসেফ্যালাইটিসে মৃতের মা।—নিজস্ব চিত্র।

জেলায় এখনও পর্যন্ত জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তবে এই রোগের ব্যাপারে গ্রামে গ্রামে প্রচারপত্র বিলি করে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা জানাল বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এর সঙ্গে জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রথমে ম্যালেরিয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। কোনও ধরনের ম্যালেরিয়া না ধরা পড়লে সেই রোগীর সিরাম এবং সিএসএফ পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

এরই মধ্যে জ্বরে ভুগে গত ১ অগস্ট মৃত্যু হয়েছে কালনার কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের হাটগাছা গ্রামে সনাতন নায়েক নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তির। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ জুলাই জ্বর নিয়ে সনাতনবাবুকে ভর্তি করানো হয়েছিল কালনা হাসপাতালে। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে রেফার করা হয়। ১ অগস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যু সংক্রান্ত সার্টিফিকেটে হাসপাতালের তরফে ‘মেনিঞ্জো এনসেফ্যালাইটিস’ লেখা হয়েছে।

সোমবার হাটগাছা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অনেকেই শুয়োর প্রতিপালন করেন। রাস্তাঘাটে সে সব শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাসিন্দারা প্রশাসনের ভূমিকায় বেশ ক্ষুব্ধ। এলাকার এক বাসিন্দা উমাপদ নায়েকের কথায়, “অনেকেই আশঙ্কায় রয়েছেন এই রোগ নিয়ে। স্বাস্থ্য দফতরের উচিত গ্রামে একটি শিবির করা।” গ্রামে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের পরিদর্শন করা জরুরি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আনন্দ দাসও।

এসিএমওএইচ (কালনা) শেখ মুশারফ আলি অবশ্য বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাটিসের সঙ্গে মেনিঞ্জো এনসেফ্যালাটিসের পার্থক্য রয়েছে। টিবি, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও মেনিঞ্জো এনসেফ্যালাইটিস হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে।” এ দিনই বিকেলে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে বৈঠক বসে কালনা মহকুমাশাসকের অফিসে। সেখানে মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ ছাড়াও ছিলেন ডেপুটি সিএমওএইচ দ্বৈপায়ন হালদার, এসিএমওএইচ শেখ মুশারফ আলি, মহকুমার পাঁচ বিডিও,বিএমওএইচ ও পুরসভার কর্তারা। বৈঠকে স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান, জেলায় এখনও পর্যন্ত জাপানি এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে অযথা যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, সে দিকে নজর দিতে হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানান। কালনা পুরসভার তরফে বৈঠকে শুয়োরের বিচরণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়। হাটগাছা গ্রামে স্বাস্থ্য দফতর কোনও শিবির করবে কি না, সে প্রশ্নে কালনা ২ বিএমওএইচ সঞ্জয় গুহ বলেন, “ওই গ্রামে আমি গিয়েছিলাম। যা বুঝেছি, গ্রামবাসীদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে ওই ধরনের উপসর্গ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৩০-৩২ জনের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছিল। কারও ক্ষেত্রেই সেই সংক্রমণ মেলেনি। অগস্টের প্রথম চার দিনেও এমন ৩২ জনের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রমাণ মেলেনি।” এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে এই মুহূর্তে কেউ ভর্তি নেই বলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জাপানি এনসেফ্যালাইসি নিয়ে সোমবার থেকে যে প্রচারপত্র বিলি শুরু হয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে, ধানখেত, পট পচা জল, ডোবা, ঝোপঝাড়ে যে মশা জন্মায়, তার কামড়ে এই রোগ হয়। শুয়োর, বক ইত্যাদি প্রাণীর মধ্যে এই জীবাণু বৃদ্ধি পায়। এই রোগের লক্ষণ হল, মাথাব্যথা, জ্বর, কাঁপুনি, খিঁচুনি, অচেতন হয়ে পড়া ইত্যাদি। রোগ প্রতিরোধ করতে মশারি টাঙিয়ে শোওয়া, হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরা, ঘরের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং শুয়োর, পাখি, গৃহপালিত পশুর খোঁয়াড় থেকে দুরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জ্বর বা অন্য শারীরিক সমস্যা হলে দেরি না করে নিকটবর্তী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালেও যেতে বলা হয়েছে।

জ্বর হলেই ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে কেন? বর্ধমানের সিএমওএইচ প্রণবকুমার রায় বলেন, “এই পরীক্ষা রুটিন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” ডেপুটি সিএমওএইচ দ্বৈপায়ন হালদার বলেন, “বর্ধমানে সারা বছর কয়েকশো মানুষের ম্যালেরিয়া হয়। বিশেষত, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড থেকে যাঁরা এই জেলায় ধান কাটতে আসেন, তাঁরাই ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। কয়েক জনের রক্তে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণুও মেলে। তবে আমরা ইতিমধ্যে ৭৫ হাজার ম্যালেরিয়া কিট কিনেছি। তাতে ভাইভ্যাক্স ও ফেলাসিফেরাম ম্যালেরিয়ার রক্ত একই সঙ্গে পরীক্ষা করা সম্ভব। জ্বর নিয়ে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেউ ভর্তি হলে গোড়া থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস আক্রন্ত বলে ধরে না নিয়ে যেন ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত রক্ত পরীক্ষা করা হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

এর মধ্যে কাঁকসার গাড়াদহ গ্রামে যে কিশোর এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, সোমবার তার রিপোর্টে ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। কাঁকসা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বাতী রায়চৌধুরী এ কথা জানান। তিনি জানান, এখন ছেলেটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ দিনও গাড়াদহ গ্রামে একটি শিবির করা হয়। সেখানে ছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন কর্মী। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় তার জন্য আমাদের কর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। কেউ অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসাও করা হয়েছে।” কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি খবর পেয়ে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ওখানে ফের শিবির করার আহ্বান জানিয়েছি। বাসিন্দারা যেন আতঙ্কিত না হন সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”

encephalitis kalna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy