Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
মৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

চিকিৎসক একজন, প্রয়োজনে মেলে না স্যালাইনও

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরাজীর্ণ দেওয়ালেই পড়েছে রঙের পোঁচ। দু’জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আছেন সাকুল্যে এক জন চিকিৎসক। তিনিও হাওড়ার বাসিন্দা। বাড়ি থেকে দিনে দু’-তিন ঘণ্টার জন্য তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক থাকেন না। ফলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে ধুঁকছে রামনগর ২ ব্লকের মৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জীর্ণ অবস্থা। ছবি: সোহম গুহ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জীর্ণ অবস্থা। ছবি: সোহম গুহ।

সুব্রত গুহ
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৮
Share: Save:

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরাজীর্ণ দেওয়ালেই পড়েছে রঙের পোঁচ। দু’জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আছেন সাকুল্যে এক জন চিকিৎসক। তিনিও হাওড়ার বাসিন্দা। বাড়ি থেকে দিনে দু’-তিন ঘণ্টার জন্য তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক থাকেন না। ফলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে ধুঁকছে রামনগর ২ ব্লকের মৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আশেপাশের কাদুয়া ও বাদলপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ২৫-৩০টি গ্রামের প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। দিনে গড়ে ১২৫-১৩০ জন রোগী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য আসেন। দিনের অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় ভরসা নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে প্রয়োজনের তুলনায় নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও অপ্রতুল। নাম কা ওয়াস্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে সেখানেও জীর্ণ দশা।

মৈতনা গ্রামের বাসিন্দা শুভাশিস বড়পণ্ডা জানান, “মৈতনা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আর ৩০কিলোমিটার দূরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় কোনও মুমুর্ষু রোগীকে ঘুরপথে দেপাল ও পিছাবনি হয়ে ব্লক স্বাস্থকেন্দ্র ও মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ফলে নাজেহাল হতে হয় রোগী ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের।” একসময় মৈতনা স্বাস্থকেন্দ্রে দশটি শয্যা ছিল। ছোট অস্ত্রোপচারের জন্য আগে ‘ওটি’র ব্যবস্থা ছিল। তবে অবহেলায় সে সব দীর্ঘ দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন প্রয়োজনে এক বোতল স্যালাইনও জোটে না বলে জানান, মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা কলাপুঞ্জা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সত্যরঞ্জন রায়।

মৈতনার জয়দেব মণ্ডল, বেলবনী গ্রামের শুভাশিস মাইতি ও কলাপুঞ্জা গ্রামের দেবরাজ দাসের অভিযোগ, “মৈতনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে দু’জন চিকিৎসক থাকলেও এখন মাত্র এক জন চিকিৎসক আছেন। তিনি অন্য জেলা থেকে প্রতিদিন এলেও মাত্র দু’তিন ঘণ্টার বেশি তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাওয়া যায় না।” তাঁদের আরও অভিযোগ, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার কথা দূর অস্ৎ, সাপে কাটা বা কুকুরে কামড়ানোর ওষুধও মেলেনা। মাত্র এক জন করে ফার্মাশিস্ট, নার্স ও জিডিএ কর্মী দিয়ে কোনওরকমে চলছে ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।” দিনের অধিকাংশ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসকহীন থাকায় হঠাৎ করে কোনও গুরুতর রোগী এসে গেলেও তাঁকে অন্যত্র রেফার করে দিতে হয়।

ন্যূনতম পরিকাঠামোও না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা সমস্যায় পড়েন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সেখানে একটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে বলে, জানান উপ-প্রধান তমালতরু দাস মহাপাত্র। নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিষ্কার করার জন্য নেই কোনও সাফাইকর্মীও। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে অবহেলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরের অবস্থাও জরাজীর্ণ। সেই জরাজীর্ণ দেওয়ালেই রঙ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নতুন করে তোলার চেষ্টা হয়েছে।

তমালবাবু জানান, সত্তরের দশকে এলাকার মানুষ যাতে সরকাবি ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, সে জন্য রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিত পাঁজা দশ শয্যা বিশিষ্ট মৈতনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেছিলেন। বিগত বাম জমানায় সরকারী উদাসীনতায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বেহাল হয়ে পড়ে। তবে ২০০৮ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উন্নয়নের জন্য ৪৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সংস্কারের জন্য নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেই সময় পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে পড়ায় সংস্কারের কাজ স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তী কালে, বরাদ্দ কম থাকার অভিযোগে সংস্কার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার নির্মাণ সামগ্রী ফের তুলে নিয়ে যান। ভোটের পরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে সেই বরাদ্দ বাড়ালেও সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। যদিও কাঁথির সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তরুণকান্তি খাটুয়ার দাবি “ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধুমাত্র বর্হিবিভাগ চলে। এক্ষেত্রে এক জন চিকিৎসক থাকাই যথেষ্ট।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস জানান, মৈতনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংস্কারের কাজ না করার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুনভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সংস্কারের রিপোর্ট তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই নতুন টেন্ডার ডাকা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

maitana block health center subrata guha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE