Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চার জন একই শয্যায়, তবু ঠাঁই নেই রব

ডেঙ্গি-প্রতিরোধে রাজধানী জুড়ে প্রশাসনিক সতর্কতা তুঙ্গে। ডাক্তার-নার্স-হাসপাতালগুলোর উদ্দেশে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যদিও হাসপাতালে গিয়ে রোগীর পরিবারের ভোগান্তি থামছে না।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

ডেঙ্গি-প্রতিরোধে রাজধানী জুড়ে প্রশাসনিক সতর্কতা তুঙ্গে। ডাক্তার-নার্স-হাসপাতালগুলোর উদ্দেশে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যদিও হাসপাতালে গিয়ে রোগীর পরিবারের ভোগান্তি থামছে না। কোথাও সটান ঘোষণা, ‘জায়গা নেই’, কোথাও আবার একটি শয্যায় একাধিক রোগী। রোগ ধরতে পারছে না বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও।

এ ঘটনায় সর্বশেষ সংযোজন হরিশ চৌহানের নাম। জ্বর-মাথার যন্ত্রণা নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ দিল্লির দেওলি-র বাসিন্দা ৩৮ বছরের হরিশকে নিয়ে যাওয়া হয় মদনমোহন মালব্য হাসপাতালে। কিন্তু ডেঙ্গির চিকিৎসা হয়নি সেখানে। শুধুমাত্র একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। হরিশের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হতে থাকে। তাঁকে সফদরজঙ্গের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান বাড়ির লোকজন। ভর্তি নিতে অস্বীকার করেনি তারা। হরিশকে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিসিন বিভাগে। ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড দেওয়া হয়। হরিশের দাদা মুকেশের কথায়, ‘‘ওয়ার্ডে গিজগিজ করছে রোগী। একটা শয্যায় চার জন করে। আমরা ওকে আলাদা রাখার কথা বলি। কিন্তু ওরা জানিয়ে দেয় অত শয্যা ফাঁকা নেই।’’ এ অবস্থায় হরিশের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। রাতের ডিউটিতে থাকা ডাক্তাররা জানিয়ে দেন বড় ডাক্তার আসতে কাল সকাল। কিন্তু সকাল ১০টা বেজে যাওয়ার পরও কারও দেখা মেলে না। মুকেশের অভিযোগ, ‘‘সে নিয়ে কথা বলতে গেলে, ওরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় নিজের দায়িত্বে রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যান।’’ এর পরই ভাইকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেন তাঁরা। ১২ সেপ্টেম্বরই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হরিশকে।

‘‘কিন্তু যথাযথ চিকিৎসা মিলল না সেখানেও,’’ আক্ষেপ হরিশের পরিবারের। পাঁচ দিন ধরে লিভারে সংক্রমণের চিকিৎসা করা হয়। এর পর ষষ্ঠ দিনে মুকেশদের জানানো হয়, তাঁর ভাইয়ের লিভার সংক্রমণ নয়, ডেঙ্গি হয়েছে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় হরিশের।

‘‘জ্বর কমছে না, প্লেটলেট ক্রমেই নেমে যাচ্ছে, পাঁচ দিন ধরে ওরা কী করছিল! কেন তখন ডেঙ্গি ধরতে পারল না?’’— প্রশ্ন মুকেশের। তাঁর কথায়, ‘‘এত কিছুর পরেও হরিশের দেহ দেওয়ার আগে লিভারের চিকিৎসার জন্য সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বিল ধরিয়েছে হাসপাতাল।’’ হরিশের মা বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে এত খবর, প্রশাসনের এত আশ্বাস, তার পরেও ছবিটা বদলাচ্ছে না। ডাক্তাররা কী করছিলেন? আমার ছেলেটা তো চলে গেল...।’’ প্রথম দুই হাসপাতালই বলে দিয়েছে— বিষয়টি তদন্ত করা দেখা হচ্ছে। আর শেষটিতে বলা হয়েছে, খুব খারাপ অবস্থায় আনা হয়েছিল রোগীকে।

তার বাঁচার সম্ভাবনাই খুব কম ছিল।

হরিশকে নিয়ে ২১ জনের মৃত্যু হল ডেঙ্গিতে। চিকিৎসায় গাফিলতির ঘটনা এই প্রথম নয়। সে অভিযোগ উঠেছে আগেও। গত কালই ১৭ বছরের এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। চার বার হাসপাতাল বদলে শেষমেশ দিল্লির এক নামজাদা বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE