Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার নেই, বেহাল বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র

প্রথম বার দেখলে মনে হতেই পারে হানা বাড়ি। জানালা থাকলেও দরজা নেই। পলেস্তারা খসা দেওয়ালের গায়ে বড় বড় ফাটল। ছাদের অবস্থাও খারাপ। কোনওটার বাইরে আবার মাথা তুলে চারপাশ ভরে গিয়েছে আগাছায়। এ দিক ও দিক ঘুরে বেরাচ্ছে গোরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল।

ভগ্নদশায় চন্দ্রপুর ও ক্ষীরগ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

ভগ্নদশায় চন্দ্রপুর ও ক্ষীরগ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

প্রথম বার দেখলে মনে হতেই পারে হানা বাড়ি।

জানালা থাকলেও দরজা নেই। পলেস্তারা খসা দেওয়ালের গায়ে বড় বড় ফাটল। ছাদের অবস্থাও খারাপ। কোনওটার বাইরে আবার মাথা তুলে চারপাশ ভরে গিয়েছে আগাছায়। এ দিক ও দিক ঘুরে বেরাচ্ছে গোরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল। কোথাও কোথাও রাত নামলেই বসছে সমাজবিরোধীদের আড্ডা। অন্য কোথাও নয়, এই ছবি দেখা যাবে কাটোয়া মহকুমার বেশিরভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতের দশকের শেষ থেকে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি তৈরি হয়েছিল। গ্রামেই চিকিৎসার সুবিধা পাওয়ার আশায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারাই জমি দান করেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী, বর্হিবিভাগ ও অর্ন্তবিভাগ যুক্ত এই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ৬টি শয্যা থাকার কথা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অন্তর্বিভাগ তো বটেই, বহির্বিভাগেও চিকিৎসাও মেলে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চিকিৎসক না থাকায় কোথাও কোথাও নার্স, ফার্মাসিস্ট ও এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাও রোগী দেখেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এক একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভর করেন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ।

সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “চিকিৎসার জন্যই মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যায়। কিন্তু এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকই নেই বললেই চলে। তাই রোগীরাও খুব একটা যায় না। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হচ্ছে।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বর্তমানে কাটোয়া মহকুমার অগ্রদ্বীপ, চন্দ্রপুর, সিঙ্গি, সীতাহাটি, শিবলুন, ক্ষীরগ্রাম, আনখোনা, লাখুরিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসক নেই। এদের মধ্যে কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবার প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও অমিল। কয়েক বছর আগে অগ্রদ্বীপ, শিবলুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ১০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তখন এখানে নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছিল। প্রয়োজনীয় যন্ত্র এসেছিল। কিন্তু চিকিৎসকই না থাকায় সেই পরিকল্পনা আপাতত হিমঘরে। নতুন বাড়িগুলি ব্যবহৃত না হওয়ায় সেখানে ফাটল ধরেছে। মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অন্যত্র স্থানান্তরিত করার জন্য মঙ্গলকোটের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শিশির বিশ্বাস জেলা স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে। প্রাণহানির সম্ভাবনাও রয়েছে। শুধু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিই নয়, কাটোয়া মহকুমার একমাত্র গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালেরও প্রায় একই অবস্থা। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে অর্ন্তবিভাগ প্রায় বন্ধ। এক জন মাত্র চিকিৎসক বর্হিবিভাগে চিকিৎসা করেন।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির এই অবস্থায় হতাশ স্থানীয় বাসিন্দারা। লাখুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অরূপ গোস্বামী, চন্দ্রপুর গ্রামের ব্যবসায়ী খাদু রায়দের ক্ষোভ, “আমাদের পূর্বপুরুষরা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির জন্য জমি দান করেছিলেন। এখন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির ভগ্নদশা দেখে কান্না পায়। অবস্থা বদলানোর প্রচুর চেষ্টা করা হলেও লাভ হয়নি। আমরা হতাশ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

health center lack of doctors katwa soumen dutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE