সুহানা ইয়াসমিনের পরে কমলা মজুমদার। রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল ছবিটা আবার বেআব্রু হল।
এসএসকেএমে ভর্তি ১২ বছরের সুহানার রক্তের প্রয়োজন ছিল। বাড়ির লোক রক্ত জোগাড় করা সত্ত্বেও তা দেওয়ার ‘সময় পাননি’ ডাক্তারেরা। তাই ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়েছিল ওই কিশোরীকে। আর ষাট ছুঁইছুঁই কমলাদেবীর মৃত্যু হল পাভলভ মানসিক হাসপাতালের ওয়ার্ডে। তাঁর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। অভিযোগ, তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মারল কে? হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওয়ার্ডের ভিতরে রোগিণীদের মধ্যে মারপিট চলছিল। তার জেরেই এই দুর্ঘটনা।
ঘটনাটি গত ২৭ নভেম্বরের। তার পরে টানা ২৪ ঘণ্টা আহত অবস্থায় পাভলভেই পড়ে ছিলেন কমলাদেবী। ২৮ তারিখ তাঁকে ভর্তি করা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যালে। মঙ্গলবার সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। বেনিয়াপুকুর থানা খবর পাঠায় কমলাদেবীর আত্মীয়দের। দেহ নিতে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আসেন তাঁরা।
অভিযোগ, হাসপাতালের ওয়ার্ডে নজরদারির ব্যবস্থাই থাকে না। মানসিক রোগীদের একসঙ্গে রেখে দিয়ে অন্যত্র চলে যান নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। রোগীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেন। তারই মাসুল গুনতে হল কমলাদেবীকে। তাঁর মেরুদণ্ডে ও চোখে গুরুতর চোট লেগেছিল।
হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদ অবশ্য নজরদারির অভাবের অভিযোগ স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “রোগিণীরা নিজেদের মধ্যে মারপিট করছিলেন। তার জেরেই ওই দুর্ঘটনা। কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে হস্তক্ষেপ করেন।” কিন্তু কর্মীরা হস্তক্ষেপ করা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন গুরুতর আহত হলেন কমলাদেবী? এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
সল্টলেকের বাসিন্দা কমলাদেবী গত এপ্রিল মাসে পাভলভে ভর্তি হয়েছিলেন। চলতি মাসেই তাঁর হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে, অবিবাহিতা কমলাদেবী স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন বছরখানেক আগে। তাঁর বোন সুপ্তি ঘোষ এ দিন বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দিদির চিকিৎসা খুব ভাল ভাবেই করছিলেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছিলেন আমার দিদি। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল!”
ডাক্তারদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ না থাকলেও পাভলভের ওয়ার্ডে যে রোগীদের যথাযথ দেখভাল হয় না, সে ব্যাপারে সরব হয়েছেন কমলাদেবীর পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই ওয়ার্ডে রোগীদের মারপিটের জেরে অনেকে আহত হন। কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখেন না। মানসিক রোগীরা নিজেদের সমস্যার কথা সে ভাবে জানাতে পারেন না বলেই কর্তৃপক্ষ গা-ছাড়া মনোভাব দেখান বলে তাঁদের অভিযোগ। সুপ্তিদেবীর প্রশ্ন, “দিদিকে যখন বেধড়ক মারা হচ্ছিল, তখন নার্স বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা কোথায় ছিলেন? কেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?” কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তারাই সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।
এসএসকেএমে সুহানার মৃত্যুর পরে এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, এখনও তদন্ত কমিটির রিপোর্টই জানা যায়নি। কমলা মজুমদারের মৃত্যুর তদন্তও যে একই ভাবে চাপা পড়ে যাবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়— সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy