ভাদ্র বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে পচা গরমও বিদায় নিল, এমনটি ভেবে হাঁফ ছাড়লে ভুল হবে। বরং আলিপুরের বার্তা বলছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টির এই জমাটি আমেজ নেহাতই ক্ষণস্থায়ী। নিম্নচাপের রেশ কাটলে ফের ঘেমে-নেয়ে একশা হতে পারেন শহরবাসী।
বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধা নতুন একটি নিম্নচাপের সৌজন্যে গত দু’দিনের আবহাওয়া আচমকা মনোরম হয়ে উঠেছে। রবিবার আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ওড়িশা উপকূলের কাছে দানা বাঁধা নিম্নচাপটির জেরে শনিবার দুপুরে কলকাতা ও আশপাশে হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে বৃষ্টির জোর বেড়েছে। এ দিন সকালেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের নানা অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ঠান্ডায় ঠান্ডায় ছুটির দিনের প্রচারও সেরে ফেলেছেন পুরভোটের প্রার্থীরা।
অন্য দিকে আশঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের অনেকের মতে, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার ভরা বাজারে এই বৃষ্টি আখেরে বিপদই বাড়াবে। কারণ, মশা দমনের লক্ষ্যে ছড়ানো কীটনাশক সব ধুয়ে যাবে। নতুন করে জমা জলে আবার আঁতুড় বানাতে পারে মশার দল। তৎপর না-হলে পুজোর আগে মশাবাহিত রোগের পরাক্রম আগ্রাসী হয়ে উঠবে বলে তাঁরা সতর্ক করেছেন।
তবে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, শারীরিক স্বস্তির পরিস্থিতিটা সাময়িক। উপগ্রহ-চিত্রে নিম্নচাপের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে তাঁদের পূর্বাভাস, কাল, মঙ্গলবারই দক্ষিণবঙ্গে প্যাচপ্যাচে গরম ফিরে আসবে। কেননা নিম্নচাপের হাত সরে যাবে দক্ষিণবঙ্গের মাথা থেকে। পরিবর্তে বৃষ্টি বাড়বে উত্তরবঙ্গে। আলিপুর হাওয়া অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, ওড়িশা উপকূল থেকে নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বিহারের দিকে বয়ে যাবে। ফলে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার থেকে উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্সে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্যে এ হেন দুর্গতি কেন?
হাওয়া অফিসের ব্যাখ্যা: নিম্নচাপটি যদি গতি কমিয়ে উপকূল তল্লাটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করত, তা হলে দক্ষিণবঙ্গে টানা বৃষ্টি মিলতে পারত। তা না-হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। পরিমণ্ডলের বিবিধ মাপকাঠি বিচার করে আবহবিদদের ধারণা, নিম্নচাপটি ভালই গতিতে উপকূল ছাড়িয়ে চলে যাবে। ‘‘দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে সেটি দ্রুত বয়ে যাবে উত্তরবঙ্গ ও লাগোয়া বিহারের দিকে।’’— বলছেন গোকুলবাবু।
চলতি মরসুমে বর্ষা অবশ্য খাতা খুলেছিল ঝোড়ো মেজাজেই। একটা সময়ে স্বাভাবিকের মাত্রা ছাপিয়ে কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে সমালোচনার মুখে পড়ে নয়াদিল্লির মৌসম ভবন। কারণ, মরসুমের গোড়ায় তাদের পূর্বাভাস ছিল, প্রশান্ত মহাসাগরে জলের তাপমাত্রাবৃদ্ধির (এল নিনো)-র দরুণ এ বছর ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষা মার খাবে।
তবে মাসখানেক আগে মালুম হয়েছে, মৌসম ভবন ভুল কিছু বলেনি। এখন বেড়ি পড়ে গিয়েছে বর্ষার পায়ে। অগস্টের প্রথম ক’দিন পর্যন্ত ভাল বৃষ্টি নামিয়ে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা দুর্বল হতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে তো পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মৌসম ভবনের হিসেবে, ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘা়টতি নয় নয় করে ৭০%! আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ, গোড়ায় আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগরে অস্থিরতার সুবাদে এল নিনো জাঁকিয়ে বসতে পারেনি। দুই সাগরে পরিবেশ বদলাতেই এল নিনো-র কামড় চেপে বসছে।
আর বর্ষার দাপট কমতেই দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে বসেছিল গুমোট গরম। মেঘ না-থাকায় একেই চড়া রোদ। সঙ্গে দোসর মাত্রাছাড়া আর্দ্রতা। দুইয়ে মিলে অস্বস্তির পারদ তুঙ্গে উঠেছিল, এই দু’দিনের বৃষ্টিতে যা অনেকটা নেমেছে। বৃষ্টি কাটলে অস্বস্তি কি আগের মতোই চরমে উঠবে?
আবহবিদেরা বলছেন, আশ্বিন মাস এসে যাওয়ায় রোদের তাপ আস্তে আস্তে কমবে। তবে শেষ লগ্নের এই বৃষ্টির (নির্ঘণ্ট মোতাবেক, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা ৮ অক্টোবর) দৌলতে বাতাসে বিস্তর জলীয় বাষ্প ঢুকে গিয়েছে। আগামী ক’দিন সেটাই ভোগাবে।
অর্থাৎ, ঘেমো গরমের দিন এখনই শেষ হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy