Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বসন্তে হারানো দৃষ্টি ফিরল চক্ষু-দানে

তিন বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকে বাঁ চোখেরও দৃষ্টিশক্তি তাঁর ক্ষীণ হয়ে যায়। মিষ্টির দোকানের কর্মী বাবার পক্ষে মেয়ের চোখের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তিন বছর আগে তরুণীর পরিবারের তরফে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে আবেদনও করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:০২
Share: Save:

তিন বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকে বাঁ চোখেরও দৃষ্টিশক্তি তাঁর ক্ষীণ হয়ে যায়। মিষ্টির দোকানের কর্মী বাবার পক্ষে মেয়ের চোখের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তিন বছর আগে তরুণীর পরিবারের তরফে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের আই ব্যাঙ্কে আবেদনও করা হয়। কিন্তু মরণোত্তর চোখদানের অভাবে তরুণীর নষ্ট হয়ে যাওয়া ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করতে পারেননি আই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অবশেষে রায়গঞ্জের পূর্ব কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুল শিক্ষক প্রয়াত সমরেন্দ্রনাথ নাগের (৮৫) ডানচোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করে তরুণীর ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন আই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার রাতে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে দেবীনগর এলাকার ২৪ বছর বয়সী মুক্তি সাহা নামে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ওই ছাত্রীর চোখে সফল অস্ত্রপোচার করা হয়। প্রয়াত সমরেন্দ্রবাবুর কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করেছেন হাসপাতালেরই চিকিৎসক কমল সরকার। চিকিৎসক কমলবাবু বলেছেন, “সৌমেন্দ্রনাথবাবু মারা যাওয়ার আগে মরণোত্তর চোখ দানের অঙ্গীকার করেছিলেন। আমাদের আশা এতে অনুপ্রাণিত হয়ে দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফেরাতে অন্য বাসিন্দারা মরণোত্তর চোখ দানে উৎসাহী হবেন।” ২০০৯ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনায় আই ব্যাঙ্কটি চালু হলেও রাজ্যে পালাবদলের পর পরিকাঠামোর অভাবে ২০১১ সালে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে মরণোত্তর চোখদান করা ৬ জন বাসিন্দার ১১টি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করে ১১ দৃষ্টিহীন বাসিন্দার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। গত অগস্ট মাসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আই ব্যাঙ্ক অধিগ্রহণ করে সেটি ফের চালু করে। আই ব্যাঙ্কের কাউন্সিলর দেবু মুখোপাধ্যায় এবং হাসপাতালের সুপার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, সরকারি উদ্যোগে দীর্ঘ দিন পর আই ব্যাঙ্ক চালু হওয়ার পর এই প্রথম আই ব্যাঙ্কের উদ্যোগে সফল অস্ত্রোপচার হল। আই ব্যাঙ্কটি চালু হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৫০ জন বাসিন্দা মরণোত্তর চোখ দানের অঙ্গীকার করেছেন। ইতিমধ্যেই ২০ জন দৃষ্টিহীন বাসিন্দা আই ব্যাঙ্কের কাছে কর্ণিয়া চেয়ে আবেদন করেছেন।

হাসপাতালের এক সূত্র জানান, গত সপ্তাহে শুক্রবার সকালে বাড়িতেই মৃত্যু হয় সমরেন্দ্রনাথবাবুর। তিনি মারা যাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যে আই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর বাড়িতে গিয়ে দুটি চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে তা আই ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করেন। তার মধ্যে থেকে একটি কর্নিয়া মুক্তির ডান চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়। মৃতের ভাইপো শুভ্রশঙ্কর বলেন, “জ্যাঠা সারাজীবন মানুষের স্বার্থে কাজ করেছেন। তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল, তিনি মারা যাওয়ার পর যেন তাঁর চোখ দু’টি দৃষ্টিহীনকে দান করা হয়।” মুক্তির বাবা রবিবাবু দেবীনগর এলাকার একটি মিষ্টির দোকানের কর্মী। মা বুলি সাহা গৃহবধূ। তরুণীর দিদা আশালতাদেবী জানান, সম্প্রতি মুক্তির দুই দিদির বিয়ে হয়ে গেলেও আংশিক দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে মুক্তির বিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অভাবের সংসারে চোখও ঠিক করা যাচ্ছিল না। নাতনি দৃষ্টি ফিরে পাওয়ায় আমরা প্রয়াত সমরেন্দ্রনাথবাবু ও আইব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raiganj hospital eye donate mukti saha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE