Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সোয়াইন ফ্লু

ভেলোর-ফেরত মহিলার মৃত্যুর দায় এড়াচ্ছে রাজ্য

সময়মতো সতর্কতা ও সচেতনতার প্রচারে না-নেমে এবং রোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি না-চালিয়ে এমনিতেই আতান্তরে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তার উপরে সোয়াইন ফ্লুয়ে ক্রমাগত মৃত্যু তাদের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় দক্ষিণ ভারত থেকে ফেরা এক রোগিণীর মৃত্যুর দায় এড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্য সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

সময়মতো সতর্কতা ও সচেতনতার প্রচারে না-নেমে এবং রোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি না-চালিয়ে এমনিতেই আতান্তরে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তার উপরে সোয়াইন ফ্লুয়ে ক্রমাগত মৃত্যু তাদের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় দক্ষিণ ভারত থেকে ফেরা এক রোগিণীর মৃত্যুর দায় এড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্য সরকার।

রবিবার কলকাতায় আরও এক সোয়াইন ফ্লু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন নতুন করে ১৪ জনের ওই মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২১৩। মৃত ১৪ জন। দক্ষিণ ভারত থেকে ফেরার পথে ওই রোগেই যাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেই মহিলাকে অবশ্য সরকারের এই তালিকায় ঠাঁই দেওয়া হয়নি।

শান্তি পাল (৪৭) নামে ওই মহিলা হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা। সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়ে তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মারা গিয়েছেন বলে এ দিনই খবর এসেছে। চিকিৎসার জন্য গত দু’সপ্তাহ তিনি দক্ষিণ ভারতে ছিলেন। সেখানকার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে হাওড়ার বাড়িতে ফেরার পথে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ভর্তি করানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার সেখানেই মৃত্যু হয়। যে-হেতু তিনি গত দিন পনেরো ভিন্ রাজ্যে ছিলেন, তাই তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটিকে এখানকার সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত বা মৃতের তালিকায় রাখছে না রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে বলেন, “ওই মহিলা তামিলনাড়ুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তামিলনাড়ু সরকারকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে দেব।”

শান্তিদেবীর পরিজনেরা জানান, ওই মহিলার ফুসফুসের অসুখ ছিল। চিকিৎসার জন্য আগেও তিনি ভেলোরে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী অশোককুমার পাল বলেন, “ওকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্যই ভেলোরে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওখানে রক্তপরীক্ষার পরে ১ মার্চ আমাদের জানানো হয়, ওর সোয়াইন ফ্লু হয়েছে।” শান্তিদেবীর চিকিৎসা হয় ভেলোরেই। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ শুক্রবার তাঁকে ছুটি দিয়ে দেন। সড়কপথে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফেরার সময় মেদিনীপুরের কাছে তিনি ফের অসুস্থ হয় পড়েন। অর্থাৎ এখান থেকে ভেলোরে পৌঁছে তাঁর সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ে। আবার ওই রোগ প্রশমিত হয়েছে বুঝেই সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে ছুটি দেন। পথে ফের ওই রোগ থাবা মারে এবং তিনি মারা যান। কিন্তু মাঝখানের সময়টুকু মহিলা অন্য রাজ্যে কাটিয়েছেন বলেই তাঁর মৃত্যুর দায় এ রাজ্যের সোয়াইন ফ্লু-র ঘাড়ে চাপাতে বা নিজেদের ঘাড়ে নিতে চাইছে না সরকার।

স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্য, ওই মহিলাকে মৃত অবস্থাতেই মেদিনীপুর হাসপাতালে আনা হয়েছিল বলে ডাক্তারেরা জানিয়েছেন। ওঁর নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল। চিকিৎসায় সাড়া পাওয়ার আশা নেই বলে জানিয়ে তামিলনাড়ুর হাসপাতাল ওঁকে ছুটি দিয়েছিল। ওঁর চিকিৎসার কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালের ডাক্তারেরা দেখেন, পরীক্ষায় ওঁর শরীরে সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস এইচ১এন১ পাওয়া গিয়েছিল বলে রিপোর্ট জানানো হয়েছে।

তা হলে এখানে সোয়াইন ফ্লুয়ে মৃতের তালিকায় শান্তিদেবীকে রাখা যাবে না কেন? স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ওই মহিলার মৃত্যু আদৌ সোয়াইন ফ্লু-র কারণে হয়েছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। আর যদি বলা যায় যে, সোয়াইন ফ্লুয়েই তিনি মারা গিয়েছেন, তা হলেও সেটা কোনও ভাবেই এ রাজ্যের ঘটনা নয়। এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে, ঠিক কী কারণে এই মৃত্যু। হাসপাতালের সুপার যুগল কর জানান, সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে কেউই ভর্তি নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও বলেন, “আমাদের জেলায় এখনও কারও সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়েনি।”

ওই মহিলাকে নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই সোয়াইন ফ্লু-র দাপট চলেছে। কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতরও। বিভিন্ন হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার ও নার্সদের সুরক্ষার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ ও মাস্কের জোগানে যাতে কোনও রকম ঘাটতি না-থাকে, সেই ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এত দিন এ-সব ব্যাপারে টালবাহানা করায় চিকিৎসকদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সোয়াইন ফ্লু যে-ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে ডাক্তার-নার্সদের চটালে ফল হবে মারাত্মক। পরিষেবায় ন্যূনতম ত্রুটিও আর বরদাস্ত করবেন না সাধারণ মানুষ। সেই জন্য আমরা কোনও রকম ঝুঁকি নিচ্ছি না।”

বেসরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রেও কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে রাজ্য সরকার। এর আগে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও সরকার কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু এ বার বাধ্য হয়ে তাদের ক্ষেত্রেও সরকারকে কঠোর হতে হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সোয়াইন ফ্লু রোগীদের ঠিক পরিষেবা না-দেওয়ার অভিযোগে চারটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরকারি তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলির ভূমিকা কেমন, কোনও ভাবে রোগীদের হয়রান করা বা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে কি না সবই খতিয়ে দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swine flu west bengal health department shanti pal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE