Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেডিক্যালে মৃত্যু, ক্ষুব্ধ পরিবার

বারবার রক্তবমি এবং বেহুঁশ হয়ে পড়লে চা শ্রমিক পাণ্ডু টোপনোকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

বারবার রক্তবমি এবং বেহুঁশ হয়ে পড়লে চা শ্রমিক পাণ্ডু টোপনোকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। অথচ মূমূর্ষু ওই রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি না করিয়ে বহির্বিভাগে এক জায়গা থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন মৃত ওই রোগীর পরিবারের সদস্য এবং এলাকার বাসিন্দারা।

যে লংভিউ চা বাগানের বাসিন্দা পাণ্ডু টোপনো ওই বাগানের হাসপাতালের চিকিৎসক অনিল কুমার আজাদও দাবি করেছেন যথা সময়ে চিকিৎসা হলে ওই রোগীকে বাঁচানো যেত। সে জন্য সোমবার বাগানের হাসপাতালে তাঁর কাছে চিকিৎসা করাতে এলে তিনি দ্রুত তাঁকে কার্শিয়াঙে হাসপাতালে বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যেতে বলেছিলেন।

সোমবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কার্শিয়াঙের লংভিউ চা বাগানের ওই বাসিন্দা পাণ্ডু টোপনো কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। পাণ্ডু টোপনোর ছেলে অসীমের অভিয়োগ, ‘‘বাবাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়ে চরম হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। বাবার পরিস্থিতি যে ভাল নয় তা বোঝাতে চাইছিলাম। অথচ তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে বলেন। তিন ঘণ্টা ধরে এই চলছিল। বাংলা না জানায় চিকিৎসকদের বোঝাতে সমস্যা হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানো হলে হয়তো বাবাকে বাঁচানো যেত।’’

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি সুপার দেখছেন। আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলব।’’ রোগীকে ভর্তি না করিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে চেস্ট-এর বহির্বিভাগে সেখান থেকে মেডিসিন বিভাগে রেফার করা নিয়েই যে সমস্যা হয়েছে তা স্বীকার করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘটনায় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস। তিনি বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হতো। তবে হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা ঘটনায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।’’ তা ছাড়া পরিবারের লোকেরা মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করাতেও চাননি। ছেলে অসীমের কথায়, ‘‘ময়নাতদন্ত করানো, পুলিশ কেস নিয়ে পরে নানা ঝামেলা হতে পারে। তাই অভিযোগ কী করব বুঝতে পারছি না।’’

মঙ্গলবার পাণ্ডু টোপনোর মৃতদেহ বাগানে কবর দেন পরিবারের লোকেরা। মেডিক্যাল কলেজে হেনস্থার কথা বলতে গিয়ে এ দিন ভেঙে পড়েন স্ত্রী মমতাদেবী এবং ছেলে অসীম। অসীম জানান, চেস্ট বিভাগ থেকে বাবাকে নিয়ে মেডিসিন বিভাগে গেলে সেখান ভিড় দেখে চিন্তায় পড়েন। বাবা দাঁড়াতে, হাঁটতে পারছে না বলে বসতে চান। বাবাকে করিডরে নিয়ে এসে বসান অসীম। বারবার মেডিসিন বিভাগে গিয়ে ভিড় কমেছে কি না দেখে আসেন। বাবা কথা বললে, চা খেতে চাইলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন অসীম। চা এনে দেন। ফের মেডিসিনের বহিবির্ভাগে ভিড় দেখে ফিরে এসে দেখেন বাবা অচেতন হয়ে করি়ডরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। বাবাকে কোলে তুলে নিলে বুঝতে পারেন তাঁর শরীরে সাড়া নেই। এক নার্স মেডিসিন বিভাগে এবং চেস্ট বিভাগে খবর দেন। চেস্ট বিভাগে নিয়ে গিয়ে এর পর পাণ্ডু টোপনোকে ভর্তি করানো হয়। কিছুক্ষণ পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE